ফোনের মেসেজের টোন শুনে ঘুম ভেঙে যায় সমৃদ্ধির । চোখ খুলে বুঝতে পরে স্পন্দন ছোট বাচ্চার মত ওকে আঁকড়ে ধরে ঘুমাচ্ছে । ওর চুলে হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে উঠে বসে সমৃদ্ধি । পাশ থেকে জামা নিয়ে পরে নেয় । ফোনটা নিয়ে মেসেজ দেখে , স্পন্দন ঘুমের ঘোরেই নিজের মাথাটা সমৃদ্ধির কোলের ওপরে তুলে ওর পেটে মুখ গুঁজে ঘুম জড়ানো বলে "কিসের মেসেজ ? "
একহাতে ফোন ধরে , আরেকহাত স্পন্দনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে "দেবা আসছে না , তাই বাবা টাকা পাঠিয়েছে । "
স্পন্দনের ঘুম উধাও , অবাক হয়ে সমৃদ্ধির কোলে মাথা দিতেই ওর মুখের দিকে তাকিয়েই বলে "দেবা আসছে মানে ? "
সমৃদ্ধির ঠোঁটে আনন্দের হাসি । হেসে বলে "নেক্সট উইকটা আমার গনুর স্পেশাল উইক , নেক্সট উইকে গনেশ চতুর্থী না .. তাই । "
সমৃদ্ধির হাতটা নিজের বুকের কাছে ধরে স্পন্দন বলে "তারমানে নেক্সট উইকে আমি পাত্তা পাবো না ? "
স্পন্দনের এই প্রশ্ন করার কারণ হলো তার জন্মদিন সামনেই ।
সমৃদ্ধি হেসে উত্তর দেয় "তুমি পাত্তা পাবে না কেনো ? হোস্টেলের সবাই আমাকে দেবার পুজোতে অনেক হেল্প করে । আমাকে একা কিচ্ছু করতে হয় না । "
"হুমম জানি , ওই জন্যেই হোস্টেল স্টাফরা তোমাকে লাড্ডু দিদি বলে । আচ্ছা শোনো , কবে বাজারে যাবে বোলো আমি নিয়ে যাব । "
"তুমি নিয়ে যাবে মানে ? আমি তো একা যাই না । আমার রুমমেটরাও যায় । "
"হ্যাঁ তো সবাইকেই নিয়ে যাবো সমস্যা কি ? "
এই বলে স্পন্দন উঠে বসে ।
সমৃদ্ধির গালে নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলটা বুলিয়ে দিয়ে বলে "সকাল থেকে স্যান্ডউইচ খেয়ে আছি দুজনে । খিদে পেয়েছে এবার । তুমি রেডি হয়ে নাও । আমরা বাইরে খাওয়া দাওয়া করে তোমাকে হোস্টেল রেখে আসবো । "
সমৃদ্ধি অনেকক্ষণ ধরে নিস্পলক স্পন্দনের মুখের দিকে চেয়ে আছে । স্পন্দন দুটো ভ্রু তুলে জিজ্ঞেস করে "কি হলো ? "
সমৃদ্ধি নিজের হাঁটুর ওপরে ভোর দিয়ে বসে স্পন্দনকে জড়িয়ে ধরে বলে "I love you...."
স্পন্দন মৃদু হেসে ওর পিঠে হাত রেখে বলে "Love you too..."রীত আর নিশা এক বেডে বসে দুজনে পড়ছিল । সমৃদ্ধিকে ঘরে ঢুকতে দেখে উৎসুক হয়ে বই বন্ধ করে বলে "সমু তুই এসেছিস .... কি হলো ? কি বললো SG ? রাগ কমেছে । "
সমৃদ্ধি অভিনয় করে দুদিকে মাথা নেড়ে বলে "না... "
নিশার গায়ে লাগছে বেশি কারণ ডেয়ারটা ওর দেওয়া । বেচারি হতাশ হয়ে বলে "কমেনি ? কী বলল ? তোর ওপরে খুব রাগারাগি করেছে না রে ? আচ্ছা , আমরা কি যদি ক্ষমা চাই ? তাহলেও ক্ষমা করবে না ? এই সমু.. "
সমৃদ্ধির মুখ ভার দেখে নিশা ওর দুইগালে হাত রেখে বলে "I am sorry বোন.. আমার জন্য তোদের মধ্যে এত প্রবলেম । "
সমৃদ্ধি নিশাকে জড়িয়ে ধরে বলে "হয়েছে , হয়েছে.. , একটু চুপ করো দেখি এবার তুমি । বাপরে , এমন গ্লানিতে ভুগছ মনে হচ্ছে কারোর মার্ডার করেছ । "
সমৃদ্ধিকে জড়িয়ে ধরে নিশা বলে "মনে হচ্ছে মার্ডারের চেয়েও বড় কিছু করে ফেলেছি । আমাদের জন্য তুই কষ্ট পাচ্ছিস । "
সমৃদ্ধি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ব্যাগ থেকে দুটো বড় বড় ক্যাডবেরী বের করে দুজনের হাতে দিয়ে বলে "তোমাদের SG পাঠিয়েছে তোমাদের জন্য । "
দুজনে অবাক হয়ে তাকায় । সমৃদ্ধি হাসি মুখে বলে "সে আর রেগে নেই । তোমাদের ওপরে কখনোই রেগে ছিল না সে । আমার ওপরে অভিমান হয়েছিল কেটে গিয়েছে। আরো এক জিনিস আছে তোমাদের জন্য । "
সমৃদ্ধি ফোন বের করে whatsapp থেকে ভয়েস নোটটা চালায় । যেখানে স্পন্দন বলে "Hi নিশা , হেলো ঋতজা... What's up.... আমি sure তোমরা ভাবছো তোমাদের SG তোমাদের ওপরে রেগে আছে , কিন্তু একদমই সেটা না আমি তোমাদের ওপরে একটুও রেগে নেই , ইনফ্যাক্ট কখনোই ছিলাম না । তোমরাও আমার কালকের বিহেভিয়ারে কিছু মনে কোরো না প্লীজ, আমি একটু ওরকমই , কখন ইমোশনাল হয়ে যাই বুঝতে পারি না । তোমাদের রুমে তোমাদের সমুর দেবা আসছে শুনলাম , তার welcome এর ব্যবস্থা করো । পড়াশোনা করো । আর আমার তরফ থেকে তোমাদের সমুকে শক্ত করে হাগ আর দু চারটে কিস্ করে দিও । নো নো.. নট অন দ্যা লিপস... একচুয়ালী ওটা কেবল আমার ডিপার্টমেন্ট । Bye... "
শেষের কথাটা শুনে নিশা আর ঋতজা হেসে ফেলেছে , সমু বেচারি লজ্জা পেয়ে গিয়েছে ।
ওরা দুজন দুদিক থেকে সমৃদ্ধিকি জড়িয়ে ধরে । তারপরে দুজনে ওর দুই গালে চুমু দেয় । সমৃদ্ধিও দুজনের গালে চুমু দেয় ।ক্লাসে একটু ফাঁকা সময় পেয়ে বসে বসে নোট রেডী করছিল সমৃদ্ধি । হঠাৎ একজন জুনিয়র ডাক্তার ওদের ক্লাসে এসে ওকে বলে "সমৃদ্ধি ..., এখন তোদের ক্লাস আছে ?"
"না , লাঞ্চের পরে আছে । "
"একটু medicine আসবি । একজন ভদ্রমহিলা তোকে খুঁজছেন । বললেন আর্জেন্ট। "
সমৃদ্ধি অবাক হয়ে বলেন "ভদ্রমহিলা ? আমাকে ? কেনো ? আমাকে কি করে চেনেন। "
"ঠিক জানিনা , বললেন খুবই আর্জেন্ট ,মাস্ক পরেছিলেন মুখ দেখিনি । "
সমৃদ্ধি বই বন্ধ করে ওর এক বন্ধুকে সেগুলো দেখতে বলে জুনিয়র ডাক্তারের পেছন পেছন চলে যায় ।
মেডিসিন বিল্ডিংয়ের লিফটে উঠে সমৃদ্ধি বলে "কোথায় আছেন উনি ? "
"ওয়েটিং হলে বসে আছেন ।"ওয়েটিং হলে ওটা ঢুকতেই চেয়ারে বসা একজন ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়ান । মুখে মাস্ক পরনে শাড়ি । চোখ দুটো ভীষণ চেনা লাগে সমৃদ্ধির ।
উনি সমৃদ্ধির কাছে এসে ওনার সামনে অনেকক্ষণ ধরে ওকে দেখার পরে বলেন "সমৃদ্ধি শুক্লা ... "
সমৃদ্ধি মাথা নেড়ে বলে "ইয়েস ম্যাম.. কিন্তু আপনি ? "
"দেবো দেবো , আমার পরিচয় দেবো । একটু সাইডে চলো । এখানে অনেক লোক । "
সমৃদ্ধি অবাক হয়ে বলে "সাইডে কেনো যাবো ? আপনি এখানে বলুন না আমি শুনছি । "
ভদ্রমহিলা অনেক শান্ত স্বরে বলেন "একটু important কথা ছিল তাই একটু ফাঁকা জায়গায় যেতে বলছি আড়ালে নয়। "
সমৃদ্ধি ভ্রু কুঁচকে বলে "Sorry ma'am আমি তো আপনাকে চিনি না , ক্ষমা করবেন কিন্তু আমি এখানকার স্টুডেন্ট , ডাক্তারও নই । আমি আপনার সঙ্গে একান্তে কথা বলতে পারব না। আপনি যদি আপনার মাস্কটা সরান তাহলে হয়তো ভেবে দেখে দেখতে পারি । "
"Actually I have flu , that's why আমি চেয়েও মাস্ক সরাতে পারছি না । ডাক্তারের বারণ আছে তো । I promise আমি তোমার বেশি সময় নেবো না । "
সমৃদ্ধি পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে waiting হল থেকে বেরিয়েই সিঁড়ির সামনেটা ফাঁকা আছে। কারণ বেশিরভাগ মানুষ লিফট দিয়ে যাওয়া আসা করে।
ও রাজি হয়ে বলে "ঠিক আছে , তবে stairs সামনেটা অবধি যেতে পারি । কিছুক্ষন পর আমার ক্লাস আছে। "
"Ok ok no problem..."(ক্রমশ..)