Meeting

444 38 11
                                    

মেয়েটাকে অনেকক্ষণ ধরে অবাক চোখে দেখছে অপরাজিতা । সিম্পল একটা মেয়ে , চেহারাটা বাস্তবেও ছবির চেয়েও নিষ্পাপ , একদিকের গালে টোল পরে । চুল বেশি লম্বা নয় , পনিটেল করে বাধা আছে  তাই বোঝা যাচ্ছে না , ছাড়লে ঘাড় অবধি হবে হয়তো । কন্ঠস্বর শুনলেই বোঝা যায় গানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রয়েছে। চোখের সামনে ছেলের পছন্দের মেয়েটিকে দেখে আঠাশ  বছর আগের কলেজ জীবনের একজনকে বড্ড মনে পড়ছে অপরাজিতার । বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে চোখ নামিয়ে নেয় । পাছে বাচ্চা মেয়েটির কাছে ওর এই অবাক হওয়া ধরে পরে যায় । অভিনয় করতে হবে , অনেক অভিনয় । ছেলের মনের মানুষের মনের কথাটা জানার জন্য ফ্যাশন ডিজাইনার এবং বিজনেস  আইকন অপরাজিতা গাঙ্গুলিকে আজ অভিনয় করতে হবে ।

ভদ্রমহিলা অনেকক্ষণ ধরে কিছু বলছে না দেখে সমৃদ্ধি অবাক হয়ে বলে "ম্যাম ... আপনি কি কিছু বলবেন ? আমার ক্লাস শুরু হতে বেশি সময় নেই । আধ ঘন্টা পরে আমাদের লাঞ্চ আওয়ার শেষ হয়ে যাবে। "
অপরাজিতা মুখের মাস্কটা ঠিক করে বলে "হুমম বলছি ... "
তখনই সমৃদ্ধির ফোনে ফোন আসে । ফোন রিসিভ করে মেয়েটা শুধু বলে "আমি medicine building এ আছি । কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসছি । "
ফোনের স্ক্রিনটা অফ হয়ে যাওয়ার আগে অপরাজিতা লক্ষ্য করে সমৃদ্ধির ফোনের হোম স্ক্রিনে অপরাজিতার আদরের স্পন্দনের ছবি ।
বেশি সময় না ব্যয় করে অপরাজিতা বলে "ও হ্যাঁ যেটা বলছিলাম । তোমার নাম সমৃদ্ধি শুক্লা , বাবার পরিচয়ে তুমি মারাঠি রাইট ? "
সমৃদ্ধি বিস্ময় নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে । অপরাজিতা বলে "আমি জানি তোমার মনে প্রশ্ন জাগছে আমি কি করে জানলাম , সে সব এখন বাদ দাও পরে বলব । যেটা বলার জন্য এসেছিলাম । আগামী সপ্তাহে আমার একমাত্র ছেলের জন্মদিন । তাই আমি তোমাকে ইনভাইট করতে এসেছি । আমি আশা করবো তুমি আসবে .. ? "
"মানে ? কে ছেলে ? কার ছেলে ? কোন ছেলে ? তার জন্মদিনে আমি কেনো যেতে যাবো ? আর আপনি কে ? আমি আপনার ছেলের জন্মদিনে যেতে যাবো কেনো ?  "
সমৃদ্ধি  যেনো আকাশ থেকে পড়েছে, অপরাজিতা সমৃদ্ধির দুই বাহুতে হাত দিয়ে বলে "দেখো মা , আমি জানি তুমি অবাক হচ্ছ , আর অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক । আসলে আমাদের একমাত্র ছেলে , ওর বাবার আর আমার প্রাণ ।  ও তোমাকে এই হাসপাতালের বাইরেই একদিন তোমার বন্ধুদের সাথে দেখেছে , তোমাকে ওর খুব পছন্দ  হয়েছে । জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়েকে আমার ছেলের এতটা পছন্দ হয়েছে । ওর বাবার আর আমার কোনো কিছুর অভাব নেই তাই আমরা ওকে ছোট থেকে সব দিয়েছি , ও চাই তুমি ওর জন্মদিন থাকো । তাই আমি তোমাকে ইনভাইট করতে এসেছি ... তুমি যাবে তো ? "
সমৃদ্ধি হাত তুলে বলে "এক মিনিট ...ছেলে চায় , আপনাদের অভাব নেই , তাই বলে আপনি ভেবে নিলেন আপনারা আমাকে ইনভাইট করবেন আর আমি চলে যাব ? আর আপনার ছেলের আমাকে পছন্দ হয়েছে মানে ? I am sorry ম্যাম, উনি কে আমি জানিনা ওনার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি , রাস্তায় একটা মেয়েকে দেখে ওনার ভালো লেগেছে বলে আপনি সেই মেয়েটাকে আপনার বাড়ি অবধি যেতে বলতে পারেন না । "
"দেখো মা , তুমি ভুল বুঝছ । আমাদের বিজনেস ফ্যামিলি । আমিও চাই আমাদের ফ্যামিলির মধ্যে একজন ডাক্তার থাক , সত্যি বলতে এখন তো আমারও তোমাকে বেশ পছন্দ হয়েছে । "
সমৃদ্ধি অস্থির হয়ে বলে "আপনি কি বলছেন আপনি বুঝতে পারছেন ম্যাম ? আমি আপনাকে চিনিনা পর্যন্ত আর আপনি আমার কলেজে এসে আমাকে আপনার ফ্যামিলি এই ওই না জানি আর কত কি বলে যাচ্ছেন।  Sorry but আমার মনে হয় আমার সঙ্গে আপনার কথার বলাই বেকার হচ্ছে।  আমি আপনার কোনো সাহায্য করতে পারব না । "
"ছেলের পছন্দের জন্য না হোক তুমি আমার গেষ্ট হয়েই চলো । .. "
"আমার দ্বারা সম্ভব নয় ।"
"আমি যদি তোমার ফ্যামিলির সঙ্গে কন্টাক্ট করি , যদি তোমার বাবা মা রাজী  হন , তুমি যাবে ? । "
"যেটাতে সমৃদ্ধির সায় নেই , সেটাতে তার বাবা মায়েরও সায় নেই । "
"তুমি আমার ছেলেটার সঙ্গে একবার মিট তো করো , ওকে তোমার ভালো লাগবে । "
"আপনি আমার সামনে আপনার ছেলে হিসেবে Daniel radcliff কে এনে দিলেও , আমার ভালো লাগার প্রশ্ন ওঠে না।  "
"তুমি কিন্তু সুযোগ হারাচ্ছ , তুমি যদি একটু ভেবে দেখতে তুমি একটা বিরাট সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী হতে পারতে , My son really likes you.., and So do I  "
সমৃদ্ধির এবার ভীষণ রাগ হয় । এবার ও বলেই ফেলে "আপনার পাহাড় সমান টাকা দিয়ে  নিজের রাজকুমারের জন্য  আপনি কোনো রাজ্যের রাজকুমারী কিনে নেবেন ম্যাম আমি  রাজকুমারীও নই আর আপনার ছেলে বা আপনার ছেলের প্রতি ইন্টারেস্টেডও নই । আমি আসি । "
সমৃদ্ধি আর  না দাঁড়িয়ে চারটে সিঁড়ি নেমে যাওয়ার পর শুনতে পায় পেছন থেকে ভদ্রমহিলা বলছেন "কিন্তু আমার স্পন্দনের মন যে এই রাজকন্যার ওপরেই আটকেছে , সেটার কি হবে ? "
সমৃদ্ধির পা থেমে  যায় । অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে মাস্ক খুলে অপরাজিতা ওর দিকে তাকিয়েই মৃদু হাসছে । আশ্চর্যে সমৃদ্ধির মুখ হা হয়ে যায়।  ও তাড়াতাড়ি নিজের ফোনের গ্যালারি খুলে দেখার চেষ্টা করে ও ঠিক দেখেছে কি না । অপরাজিতা এক মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে "মিলিয়ে নাও , 100% মিলে যাবে ... "
ও অবাক হয়ে বলে "আ আপনি.... "
"হুমম আমি । অপরাজিতা গাঙ্গুলি । তোমার প্রাণ ওরফে স্পন্দন গাঙ্গুলির মা । "
নার্ভাসনেসে সমৃদ্ধির হাত পা ঘামতে শুরু করেছে । ও তোতলাতে তোতলাতে বলে "ম্যাম .... আপনি মানে... "
অপরাজিতা তিনটে সিঁড়ি নেমে এসে সমৃদ্ধির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে "কিছু মনে কোরো না মা , একটু অভিনয় করলাম তোমার সঙ্গে । আমি সবটা জানি , স্পন্দনকে আমি বারণ করেছিলাম তোমাকে কিছু জানাতে । হঠাৎ করে সামনে এসে তোমাকে অবাক করে দিতে চেয়েছিলাম ।  "
সমৃদ্ধি এতটাই বিস্মিত যে ওর মুখ দিয়ে কিছুই কথা বেরোচ্ছে না ।
অপরাজিতা সমৃদ্ধির গালে হাত দিয়ে বলে "আমার স্পন্দনের পছন্দের ওপর থেকে তো আমি চোখ সরাতেই পারছি না ।"
সমৃদ্ধি কোনো এক অজানা কারণে কেঁদে ফেলেছে । অপরাজিতা ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে "কাঁদছ কেন মা? আমি কি কিছু ভুল করে ফেলেছি ? আমি শুধু তোমার সঙ্গে একটু মজা করছিলাম । তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো ? তুমি জানো , তোমার ফোনের ওয়ালপেপারের ছবিটা আমারও খুব প্রিয় একটা ছবি । ওর বাবা তুলে দিয়েছিল ওকে ছবিটা । "
অপরাজিতা সমৃদ্ধিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও সমৃদ্ধি এখনও বুঝতেই পারছে না একটু আগে কী কী হয়ে গেলো । সমৃদ্ধির চোখের জল মুছে অপরাজিতা বলে "এই দেখো , তুমি এখনো কাঁদবে ?  আমি আমার ছেলেকে কি বলব বলোতো ? "
সমৃদ্ধির কথা জড়িয়ে যাচ্ছে "I am sorry ম্যাম.. না মানে আন্টি । আমি না জেনে আপনাকে এত কিচ্ছু .. "
অপরাজিতা হেসে বলে "sorry তোমার নয় আমার বলা উচিত । কি কি সব বলে গেলাম আমি । যদিও সবটাই আমার অভিনয় ছিল , শুধু একটা কথা ঠিক আমাদের ফ্যামিলিতে কিন্তু কোনো ডাক্তার নেই ... You will be the first one... "
সমৃদ্ধি অবাক চোখে তাকায় , অপরাজিতা বলে "তুমি যা উত্তর দিয়েছ বেশ করেছ । কেউ এরকম ভুলভাল প্রপোজাল নিয়ে এলে এরকম ভাবেই উত্তর দেবে । তুমি আর কেঁদো না সমৃদ্ধি । আমার এবার খারাপ লাগছে তো মা  । এত মিষ্টি মেয়েটাকে ফার্স্ট মিটিং এই এভাবে কাঁদিয়ে ফেললাম আমি । "
সমৃদ্ধি দুই হাতে নিজের চোখের জল মুছে অপরাজিতাকে প্রণাম করে।  অপরাজিতা ওর গালে হাত রেখে বলে "এইটুকু আলাপেই তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি সমৃদ্ধি । এবার বুঝতে পারছি ছেলেটা আমার কেনো তোমার জন্য এত পাগল । "
সমৃদ্ধি লাজুক হাসে। অপরাজিতা বলে "দাঁড়াও পাগলটাকে কল করি একবার।  "
দুবার রিং হতেই ওপর থেকে স্পন্দন ফোন ধরে বলে "ইয়েস মা... "
"কোথায় তুমি ? "
"কোথায় মানে ? তুমি তো আমাকে বললে নিউ কালেকশন গুলো ওশিয়ানে যাবে প্যাকেজিং গুলো একবার চেক করে নিতে , তাই গোডাউনে এসেছি । "
"আচ্ছা , ওখানকার কাজ হয়ে গেলে সঞ্জীবকে বলা আছে ওকে সঙ্গে নিয়ে আর গিফটস্ গুলো নিয়ে মেডিক্যাল কলেজে চলে আসবে । "
স্পন্দন অবাক হয়ে বলে "ঋদির কলেজে ? "
"সেরকমটাই তো কথা হয়েছিল বাবা।  "
"কিন্তু মা .... "
"কোনো কিন্তু নয় , এদিকের কাজটা আজকেই সেরে নেবো । সঞ্জীবকে সবটা বলা আছে , বক্সের কাউন্টিং মিলিয়ে নেবে একবার । রাখলাম । "
অপরাজিতা ফোন রেখে দেয় , সমৃদ্ধির মুখে একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন । অপরাজিতা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে "আসছে পাগলটা , যাও তুমি ক্লাস করো গিয়ে । আমি ততক্ষণে তোমাদের প্রিন্সিপালের সঙ্গে একটু কথা বলে নি । তোমাদের ক্লাসের পরে দেখা হচ্ছে । কেমন..? "
সমৃদ্ধি একদিকে মাথা হেলিয়ে "আচ্ছা" বলে ।


( ক্রমশ )

প্রেমিক Where stories live. Discover now