ভার্সিটিতে আসার কিছুদিন পরেই আলিজা আইলানের কাছ থেকে কোনকিছুই আর উপহার নেয়না |
ভার্সিটিতে যেবছর ভর্তি হল সেই ঈদে আইলান সায়মা আর আর তার ভাইবোনকে কাপড় কিনে দেবার সময় আলিজার জন্যও একটা জামা কিনেছিল | জামাটা কেনার সময় আইলান জানায়নি সায়মাকে যে সেটা কার জন্য কেনা হচ্ছে | যখন সায়মার বাসায় সব কাপড়চোপড় নিয়ে গেল আইলান তখন সে জামাটা সেখানে ছিল না | সায়মা ভেবেছিল ওটা সায়মার জন্যই একটা অতিরিক্ত হিসেবে নেয়া | কিন্তু সেটা এলোনা দেখে ও ক্ষুন্ন হল |
আইলান চলে আসার সময় সায়মা কৌতূহল আর চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেসাই করে ফেলল, "ওই ড্রেসটা কই ?"
"কোনটা ?"
"ঐযে ঐটা ! উইজে কাঁচের টা |"
"দিলাম তো |"
"এইটা না উই বেগুনিটা | ঐটা তোমার কাছে ?"
"ইয়ে বাবু ঐটা তো আসলে আমি আলিজার জন্য কিনেছি | ওটা ওকেই দিয়েছি |"
সায়মার মুখ অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, কোনভাবে বলল, "ওটা দিয়ে দিসো ওকে ? ঐটা অনেক ভালো লাগসিলো আমার | তুমি ঐটা দিয়ে দিলা ?"
মুহূর্তে কেঁদে ফেলেছিল সায়মা |পরে একদিন ভার্সিটিতে সায়মা আলিজাকে দেখল সেই জামা পড়ে এসেছে সে | জামাটা আলিজার গায়ে খুব মানিয়েছিল | খুবই সুন্দর লাগছিল তাকে |
একসময় সায়মা তাকে বলেই ফেলল, "এই জামাটা না ও আমার জন্য কিনসিলো | আমি অনেক লাইক করসিলাম | বাট ও না পড়ে তোমারে দিয়ে দিসে !"
অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই সেদিন আইলানের দেয়া খোঁপার কাঁটাদুটো আলিজার মাথায় ছিল | হঠাৎ সেদিকে চোখ পড়তেই বহু কষ্টে আক্ষেপ চেপে সায়মা বলল, "এগুলো তোমাকে দিসে ও ! আল্লাহ ! আমিতো ভাবতে ভাবতে শেষ ! আমি ভাবসিলাম ও কিনসে আর কিনে হারায় ফেলসে ! তোমাকে দিসে ও না !"
সায়মা প্রায় কেঁদে ফেলে এমন অবস্থা |
কিছুক্ষন পর আইলানের সাথে ওর কি হল কে জানে তর্কাতর্কি হয়ে সায়মা কেঁদে কেঁদে প্রায় হেঁচকি তুলে ফেলল | আলিজা হতভম্ব হয়ে গেল |
আইলান একটু পর আলিজাকে বলল, "তোকে রিকশা করে দেই ? একা যেতে পারবি ?"
"পারব |"
আইলান কিন্তু রিকশা করে দিতে পারল না | আলিজা বিদায় নিয়ে চলে এল |
সেদিন রাতে আইলান "বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি" বলে ফাহমিদাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়ে আর ফিরল না | পরেরদিন আইলান এলো বিকেলে | এসেই কিছুক্ষন পর ঘুমিয়ে পড়ল | সন্ধ্যার পর উঠে আলিজাকে বলল চা করতে |
আলিজা চা করে আইলানের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে বলল, "ভাইয়া শার্ট গায়ে দিয়ে এসে বস |"
আইলান অবাক হয়ে বলল, "কেন ? কি হয়েছে ? গরম লাগছে তো ! যা গরম পড়েছে আজ !"
আলিজা একটা ছোট নিঃস্বাস ফেলে বলল, "বাথরুমের আয়নায় গিয়ে দেখে আয় |"
আইলান বাথরুমে গিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে এসে দ্রুত শার্ট গায়ে দিল |
আইলান হাসার চেষ্টা করে বলল, "ইয়ে মা কই ?"
"নিচে | আজ দেখতে এসেছে নাফিকে |"
"ও | ইয়ে মা কি ............?"
"না | দেখেনি তোকে |"
"ইয়ে তোর কাছে কি ......."
আইলানের কথা শেষ হবার আগেই আলিজা তার হাতে একটা এন্টিসেপ্টিক ক্রীম দিয়ে বলল, "প্লিজ আমাকে লাগিয়ে দিতে বলিস না আমি পারব না |''
আইলানের পিঠে কাঁধে অসংখ্য নখের আঁচড়ের দাগ |