এরিক গাড়ি থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে হাসপাতাল এলো | মেটারনিটি এন্ড গাইনোকোলোজি সেকশনে এসে খোঁজ করে জানলো এখানেই এসেছে আলিজা | এরিক দৌড়ে ঢুকে এগিয়ে দেখল রজার বসে রয়েছে অন্ধকার মুখে | তার সামনেই নিনা বাবার হাতটা ধরে বসে আছে |
প্রেস্টন ফোনে বোধহয় পোর্টারকেই বলছে, "না তা বললে হবেনা ! এসে পর তুই আজই ! আর ডক্টর কেইনকে বলেছিস তো ? প্লিজ আবার বল |........"
এরিক আরো এগিয়ে এসে রজারের সামনে দাঁড়িয়ে ভীতকণ্ঠে বলল, "ড্যাড ! ড্যাড লিজ কোথায় ? ওর কি হয়েছে ? ও ঠিক আছে তো ?"
রজার উঠে দাঁড়িয়ে এরিকের গালে একটা থাপ্পড় বসালো | এরিক চুপ করে রইল |
রজার থমথমে মুখে বলল, "মরে যাওয়া উচিত তোমার ! কিন্তু দ্যাখো হচ্ছে উল্টোটা ! মরতে বসেছে ওই চমৎকার মেয়েটা যে কিনা তোমার ছন্নছাড়া আর উশৃঙ্খল জীবনটাকে গুছিয়ে দিয়েছে | আসলে মরে গেলে ও বেঁচে যাবে | ও বেঁচে রইলে হয়ত আবার এমন করবে তুমি ! আবার এমন ওকে রেখে কোন স্টেসি, স্টেফানি, স্টেলার পিছনে হাঁটা দেবে !"
এরিক অসহায় প্রতিবাদের সাথে বলল, "ড্যাড আমি সেরাতে যাইনি স্টেসির কাছে | আমি সরাসরি এএ-তে এভিয়েশন হ্যাঙ্গারে চলে গিয়েছি | ও ভুল বুঝেছে আমাকে |"
"থাক ! ও বেঁচে ফিরলে সাফাই দিও !"
এরিক প্রায় গর্জে উঠে বলল, "ড্যাড ! আমার ভুল কিন্তু ওর কোন ক্ষতি কখনও হতে দেব না আমি |"
এরিক নিনার হাতধরে বলল, "নিনা ! প্লিজ আমাকে বলো নিনা ? কোথায় লিজ ?"
নিনা বলল, "ও আইসিইউ-তে |" এ
রিকের পায়ের তলায় মাটি কেঁপে উঠল |
নিনা বলল, "ওর অবস্থা খুবই সংকটজনক ! খুব রক্তক্ষরণ হচ্ছে |"
এরিক একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল, "নিয়ে চলো আমাকে ওর কাছে |"
এরিক ইনটেনসিভ কেবিনে এসে দেখল আলিজা মৃতপ্ৰায়ভাবে সংজ্ঞাহীন হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আর আইলান দুহাতে বোনের অসার হাতটা নিজের বুকের কাছে ধরে কাঁদছে নিঃশব্দে |
এরিক এগিয়ে এসে আলিজার গালে হাত রেখে ডাকল, "লিজ ? লিজ কি হয়েছে ? তাকাও আমার দিকে |"
আইলান মাথাটা তুলে এরিকের দিকে চেয়ে বলল, "কেন আসলে ফিরে ? যাও তোমার উদ্দাম, বেপরোয়া, আকর্ষণীয় জীবনে ফিরে যাও যেখানে অনেক এডভেঞ্চার, এক্সাইটমেন্ট আর ওয়াইল্ড সেক্স আছে | স্টেসির মত অনেকগুলো বান্ধবী আছে সেখানে ফিরে যাও !"
এরিক আহতস্বরে বলল, "আমি অনেক বড় ভুল করেছি ! এভাবে রাগারাগি করা আমার উচিত হয়নি | এলান বিশ্বাস করো আমি হয়ত কিছুসময়ের জন্য সঠিক আচরণ করিনি কিন্তু লিজ আমার স্ত্রী হবার পর থেকে দ্বিতীয় কেউ আমার জীবনে আসেনি | বিশ্বাস করো আমাকে |"
আইলান উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষুদ্ধভাবে বলল, "এরিক আমি ভাবতেই পারিনি কখনও যে তুমি আমার বোনকে এতবড় কষ্ট কখনও দিতে পারো |"
এরিক আলিজার হাতটা ধরে অশ্রুসিক্ত চোখে বলল, "লিজ ? আমাকে শুনতে পাচ্ছ তুমি ? শুনলে বলো আমাকে তুমি আমাকে ভুল বোঝোনি ! লিজ এতবড় শাস্তি আমাকে দিও না !"
বাচ্চা বার্থচ্যানেলে অর্ধেক এসে রয়েছে | আলিজার প্রচুর রক্তক্ষরণজনিত কারণে জ্ঞান নেই সেজন্য প্রসবের জন্য অপরিহার্য কন্ট্রাকশনের নিমিত্তে "পজিটিভ ফিডব্যাক" তৈরী হচ্ছেনা | অথচ যন্ত্রনায় অসার হয়ে রয়েছে মা | একটু পরপর সে সংজ্ঞাহীন অবস্থাতেও কেঁপে কেঁপে উঠছে ব্যাথায় | যতবারই আলিজা কষ্টে শিউরে উঠছে প্রতিটা ব্যাথার ধাক্কায় এরিক কেঁদে ফেলছে নিঃশব্দে | রক্ত দেয়া হচ্ছে তাকে কেননা ভ্যাকিউম সাকশন ডেলিভারির জন্য প্রয়োজনীয় স্বাভাবিক পরিমান রক্ত দেহে নেই তার | এছাড়াও তার রক্তচাপ খুবই অনিয়মিতভাবে ওঠানামা করছে | মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে রয়েছে আলিজার |
.
.
অবশেষে ভোর রাতে রক্তচাপ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হতেই অজ্ঞান অবস্থাতেই ডাক্তাররা মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্তান প্রসব করানোর প্রস্তুতি নিলেন | কিন্তু অবস্থা এতটাই সংকটময় যে আগেই ডাক্তাররা জিজ্ঞাসা করতে এলেন যে যদি অবস্থা বেগতিক হয় আর দুজনকেই বাঁচানো না যায় তো কাকে বাঁচাবেন তারা ?
সবাই এ নিয়ে চিন্তা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার প্রস্তুতি নেবে তখনই এরিক কথা বলল |
এরিক দৃঢ়স্বরে বলল, "সেরকম অবস্থায় আপনারা মাকে বাঁচাবেন |"
সবাই চমকে তাকালো |
এরিক আবার বলল, "আপনি দুজনের মধ্যে একজনকে বাঁচানোর পরিস্থিতি এলে মাকে বাঁচাবেন |"
আইলান এগিয়ে এসে বলল, "এরিক ! কি বলছো কি তুমি ?"
এরিক বলল, "সঠিক বলছি |"
"এরিক আলিজা বারবার একইকথা বলেছে যেন ওর সন্তানকে বাঁচানো হয় |"
"আর তারপর ? তারপর কি ? তারপর আমার সন্তানের মুখের দিকে আমি যতবার তাকাবো আমার এটাই মনে হবে যে আজকে ও জীবিত বলে আমার লিজ বেঁচে নেই | এতবড় ভার মনের উপর আমি নিতে পারব না | আমি ওকে হারাতে পারবনা |"
.
.