পর্ব ২৭

717 32 4
                                    

আইলান আলিজার হাতটা গালে ঠেকিয়ে বিব্রতভাবে বলল, "এই আলিজা ফাজলামো করিস নাতো !"
"আমার চোখের দিকে চেয়ে বল তুই আমি ফাজলামো করছি কিনা |"
আইলান উঠে বসে বলল, "আলিজা এটা কিকরে সম্ভব ? মানে ও কোথায় আর আমি কোথায় !"
"উত্তরা তিন নং সেক্টর আর মালিবাগ |"
আইলান কোনরকমে একটু হাসার চেষ্টা করে আবার আলিজার কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলল, "তুই এগুলো কি ভাবছিস বলতো !"
"তোরা দুজনের কেউই ভাবছিস না বলে আমি ভাবছি |"
"আলিজা এটা হয় না | ওর ফ্যামিলি স্ট্যাটাস তুই জানিস না ! ওরা অনেক উপরের মানুষ |"
আলিজা ধীরকণ্ঠে বলল, "বাবা একজন শিল্পপতি, ছোটচাচা স্থপতি, বড়চাচা স্বনামধন্য ব্যারিস্টার যার ল'ফার্মে মাহিরা প্রাইভেট প্রাকটিসনার | তিনটা ভাইবোন | ওর বড়ভাই এন্ড তার ওয়াইফ ডাক্তার, নিজের ক্লিনিক আছে | ছোটবোন একটা স্বনামধন্য টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিতে সিনিয়ার অফিসার | মাহিরা মেজো ভাইবোনদের মধ্যে |"
আইলান অবাক হয়েই বলল, "তুই এতটা কিকরে জানলি ? যাক, সে যাই হোক এটা হয়না |"
"কেন ?"
"আমি তো কিছুই জানিনা ওর সম্পর্কে | আর ওতো মানে বুঝছিসই তো তোরও অনেক বড়, প্রায় আমার সমবয়সী | হয়ত ম্যারেড ও |"
"তোর চেয়ে বছখানেকের ছোট |"
"তুই জানলি কেমনে ?"
"শী'জ থার্টিথ্রি এন্ড ডিভোর্সড ( বয়স তেত্রিশ আর তালাকপ্রাপ্ত ) | ওর বাবাই খুব দেখেশুনে বিয়ে দিয়েছিল | বিয়ের তিনমাস পর জানা যায় যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে বিবাহিত ও দুই বাচ্চার বাপ | সেই লোকের স্ত্রী প্রথমে মামলা করবে বলে হমকধামক করলেও পরে মাহিরার বাবার কাছে পঞ্চাশলক্ষ টাকা দাবি করে বলে যে টাকা পেলে সে মিচ্যুয়ালি সম্মতিনামায় সই করে দেবে | কিন্তু মাহিরা একটা প্রতারককে নিয়ে ঘর করতে রাজি হয়নি | সে একটা আত্মসম্মানী ও সাহসী মেয়ে তাই সম্পূর্ণ পরিবারের অমতে সে তালাক দিয়েছে স্বামীকে |"
আইলানের যেন আজ শুধুই বিস্ময়ের পালা |
আইলান ইতস্তত করে বলল, "ওর কোন রিলেশনশিপ আছে হয়ত |"
"নেই | ছিল একটা ডিভোর্সের পর | একজন পরিচিত বন্ধু ওর সাথে খুব আগ্রহ দেখিয়ে সম্পর্ক গড়ে | পরে ও জানতে পারে যে ওই ছেলেটার বান্ধবী আছে | এবং ও শুধুমাত্র বান্ধবীকে এটা দেখানোর জন্যই প্রেম করেছিল যে সে চাইলেই প্রেম করতে পারে | এরপর থেকে ওর সম্পর্কের প্রতি ঘৃণা ধরে গিয়েছে আর গত চার বছর কোন সম্পর্কই করেনি কারোর সাথে |"
"কিন্তু ওর পরিবার ?"
"ওর বয়স যখন উনিশ তখন ওর মায়ের একবার ডেঙ্গু হয় | তখন সেবা যত্নর জন্য ওর বাবা একজন নার্স রেখেছিল | ওর মা সারলেন কিন্তু কয়েকদিন পর আবার অসুস্থ হলেন | ওর কোন ভাইবোন লক্ষ না করলেও এটা ও লক্ষ করেছিল যে তার বাবার আর নার্সের সম্পর্কটা ঠিক সঠিক না | এরপর ওর মা আরো অসুস্থ হয় কিন্তু এবার আর সারেনি | প্রায় দেড়বছর বিছানায় থেকে ওর মা মারা যায় | আসলে সে মারা যায়নি তাকে মারা হয়েছিল ধীরে ধীরে | সেই নার্স বর্তমানে ওর বাবার দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী | ওর বাবার আরো একজন স্ত্রী আছে যে একজন অভিনেত্রী | এছাড়া আরো দুজন 'কীপ' ( রক্ষিতা ) আছে যাদের একজন সুপারমডেল আর একজন নাট্যাভিনেত্রী | বড়ভাই বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে প্র্রেম করে বিয়ে করে আলাদা থাকে বারিধারাতে | ছোটবোন প্রবাসী ডাক্তার স্বামীকে রেখে একজন বিবাহিত কলিগের সাথে 'লিভ-ইন' রিলেশনশিপ গড়েছে | এদের কারো সঙ্গেই মাহিরার কোন সম্পর্ক নেই | ভাইয়া বড়বড় বাড়িগুলোর পরিবার, নাম, চাকচিক্যের পিছনে প্রায়ই একটা নোংরা, কালো, কুৎসিত অধ্যায় থাকে | যারা ওদের কাছথেকে দেখে শুধু তারাই জানে |"
আইলান আশ্চর্য দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, "তুই এর মধ্যেই এতকিছু কিকরে জানলি ওর সম্পর্কে ?"
"সেটা তোর না জানলেও চলবে | এমন সুন্দর, সাহসী, বুদ্ধিমান, চমৎকার একটা মেয়ে | ভাইয়া ও ওদের উত্তরার বাড়ির চারতলায় সম্পূর্ণ একা থাকে | ওর ভাইবোন, বাবা, চাচা, ফুফু, খালা, মামা কারো সঙ্গে ওর কোন সম্পর্ক নেই | ওর একমাত্র আপনজন হল চেলসি, ওর বিশাল আকৃতির সাদাকালো গ্রেটডেন কুকুর যে ওর বন্ধু আর রক্ষক |"
আইলান চুপ করে রইল |
আলিজা আজ ঘড়ি পড়েনি | সে এরিকের দিকে চেয়ে বাঁহাতের কব্জি দেখিয়ে ইশারা করতে এরিক বলল, "নয়টা আটচল্লিশ |"
আলিজা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "তোরা বস | আমি খাবার গরম করছি |"
আলিজা চলে যেতে এরিক বলল, "তোমার বোনের চোখ বলতে হবে | ও ঠিক সেই মানুষটাকে পেয়েছে যাকে তোমার দরকার | তুমি সারাজীবন খুঁজলেও এমন একজনকে পেতে না যাকে লিজ তোমার ঘরে এসে তিনদিনে খুঁজে বের করল |"
এরিক উঠে বলল, "লিজের পছন্দের উপর সন্দেহ করোনা | আমি যাই ওকে খাবার গরম করতে সাহায্য করি গিয়ে |"

মেঘের আলোয়Donde viven las historias. Descúbrelo ahora