ইন্টার্ন দুজন চলে যাওয়া মাত্রই দপ্তরি এসে বলল, "স্যার শাহীন ম্যাডাম এইটা একটু দেখে দিতে বলসে এখনই |"
আইলান জিজ্ঞাসা করল, "কোনটা এটা ?"
"ঐযে স্যার প্রগ্রেটিভ স্কেলটা |"
আইলান তার সামনে খোলা ল্যাপটপে কিছু একটা বের করে দেখে দপ্তরিকে বলল, "আধাঘন্টা লাগবে বলো ম্যাডামকে |"
"স্যার অসুবিধা নাই | ম্যাডাম বারোটার আগে দিতে বলসে |"
"আচ্ছা যাও |"
আইলান ফাইলটা খুলে প্রথমে কাগজ গুছাতে লাগল, সানিয়া শাহীন কখনোই সাবর্ডিনেট অফিসারদের গোছগাছ করে কোন ফাইল দেন না |
আইলান কাগজ গুছিয়ে ফাইলটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বলল, "বলুন আপনার কথা সাগর সাহেব |"
সাগর বিনয়ে গলে গিয়ে বলল, "ঐদিনের জন্য স্যরি ভাই |"
"হুমম | এই স্যরিটা খুব সহজ নয় |"
"ভাই ভুল হয়ে গেসে |"
"কিছু দরকার আমার কাছে ?"
"ভাই আজকে এসে সাংঘাতিক কথা শুনলাম ভাই | ভাই এটা কেমন করে হয় ? আমি ভাই তানজিলা আপার কাছে যাবোনা | ভাই আপনার নতুন ইন্টার্নদের কাউকে দেন ভাই উনার কাছে |''
"দুঃখিত ! আমি কোন সাহায্যই করতে পারছিনা | এটা শাহীন ম্যাডামের ডাইরেক্ট অর্ডার ছিল আমার প্রতি | আমার কিছুই করার নেই | আপনি যদি একান্তই চান তো উনাকে গিয়ে বলুন |"
"ভাই আপনি যদি বলতেন একটু |"
"আমি এরকম কিছুর জন্য শাহীন ম্যাডামের কাছে যেতে পারব না | আই এম স্যরি | মবিন স্যার হলে আমি দেখতাম কিছু হয় কিনা | কিন্তু শাহীন ম্যাডাম খুব রাগ করবেন যা আমার পক্ষে এখন নেয়া সম্ভব না |"
"ভাই একটু তাও ট্রাই করতেন আমার জন্য ?"
আইলান এবার ফাইল থেকে চোখ তুলে সাগরের দিকে চেয়ে বলল, "আপনার অফিস পারফর্মেন্স কিন্তু ভালো নয় | আর আমি আগেও বলেছি আপনাকে, স্বজনপ্রীতি আর পক্ষপাতিত্ব আমার কাছ থেকে আশা করবেন না | এটা ডিরেক্ট সুপিরিয়র অর্ডার | আমার কি করা এতে ! আপনি দেখুন নিজে চেষ্টা করে |"
"ভাই উনি মানে তানজিলা অনেক রাগারাগি করেন তো এজন্য |"
"সেটা এখন আপনার সমস্যা | দেখুন সত্যিটা হল আমি নিজেও এখন চাইছিনা আপনাকে আমার ইন্টার্ন হিসেবে | আপনার জন্য আমার রেপুটেশন খারাপ হলে আপনার তো কিছুনা কিন্তু আমার জন্য তা মারাত্মক ব্যাপার | এখন আসুন আপনি |"
"ভাই আপনি আজ কতক্ষন অফিসে আছেন ?"
"সাগর সাহেব একটা অনুরোধ |"
"বলেন ভাই |"
"আপনি প্লিজ আপনার বোনকে নিয়ে ক্যান্টিনে লাঞ্চ করবেন | আমার সেকশনে অন্তত এই বিরক্তিকর বাংলা সিনেমার দৃশ্য যেন আমি না দেখি | এখন আপনি আর আমার সাবর্ডিনেট ট্রেইনি নন | প্লিজ আমার সেকশনে এসব চাইনা আমি |"
সাগর অবাক হয়ে চেয়ে রইল |
আইলান তার ড্রয়ার খুলে একটা খাম বের করে সাগরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, "এটা নিন |"
সাগর হাতে নিয়ে বলল, "কি ভাই এটা ?"
"রাখুন | অনেক কষ্ট করেছেন আপনি এই কয়েকদিন খাবারদাবার নিয়ে | রাখুন এটা |"
একটা বিশহাজার টাকার চেক | সাগর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল অপমানে |
আইলান বলল, "আর পরিশ্রম করবেন না খাবারদাবারের ঝামেলা করে | এটা রেখেদিন | অনেক খরচ গিয়েছে আপনার এ নিয়ে |"
সাগর চুপকরে বেরিয়ে আসতে লাগল |
আইলান সে বের হবার সময় বলল, "আরেকটা কথা | আপনি এখন তানজিলা ম্যাডামের সাবর্ডিনেট | প্লিজ সবার সামনে আমাকে ভাই বলবেন না | ব্যাপারটা ভালো দেখায় না | আচ্ছা আসুন |"
প্রথম দিনেই ফারিয়া তানজিলা সাগরের কাজ নিয়ে চিৎকার আর বকাঝকা করে অস্থির হল | সাগর একদিনে এতগুলো ঝটকা খেল যে সে নিজেই হতবাক | বিকেলে সে আরো একদফা ভয়ানক কথা শুনল একটা কাজ ভুল করায় |
পরে তার এক সহকর্মী ইন্টার্ন বলল যে তানজিলার এত মেজাজের কারন হল তানজিলা এই অফিসে আইলানের চারবছরের সিনিয়ার কিন্তু এরপরেও ডিরেক্টরাল বোর্ড আইলানকে ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরদের একজন করতে যাচ্ছে |
তানজিলার আরেকটা গোপন রাগ হল সে তার দ্বিতীয় স্বামীর সাথে ডিভোর্সের পর আইলানকে নিজের দিকে প্রলুব্ধ করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি কারন তারমত স্বভাবের মেয়ের প্রচুর টাকা আর প্রতিপত্যির সত্ত্বেও আইলান একটুও আকর্ষণ দেখায়নি তার দিকে | বরং একদিন নাকি আইলান অফিসে দেরি করে কাজ করছিলো সেদিন তানজিলা তার কাছে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়ায় আইলান তাকে ''ক্র্যাংকি ম্যানইটার স্লাট'' ( বাতিকগ্রস্ত পুরুষভক্ষক নষ্টাস্ত্রীলোক ) বলেছে ! তানজিলা চুপ হয়ে গিয়েছে এ নিয়ে কারন সে জানতোনা যে সেদিন তখনও মবিন স্যার রয়েছেন আর তিনি ঘটনাটা দেখে ফেলেন | এই ঘটনা থেকেই দুজনের সম্পর্ক খুব খারাপ |
আইলানের এতবড় প্রমোশন হতে যাচ্ছে ! সাগর স্তব্ধ হয়ে বসে রইল | আজ কার মুখ দেখেছিল সে ঘুম থেকে উঠে |
সাগর হাতের কাজটা শেষ করে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন একজন কো-ইন্টার্ন বলল, "চুপ করে জায়গায় বসেন | এটা আহমেদ স্যার না ! এত্ত ইনসাল্ট হবেন যে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করবে !"
সাগর বলল, "আমার বোন হসপিটালে |"
"শোনেন এসব কোন কথা ম্যাডামকে বলবেন না | উনি এসব সেন্টিমেন্ট একেবারেই ধারধারেন না ! বললে বলবে কি জানেন ? বলবে যে 'কাল থেকে আর আসবেন না ! বোনের কাপড়চোপড়' ধোবেন !' ভাই বসেন তো চুপ করে আর কাজ দ্যাখেন | এ ডাইনি একটা |"
সাগর কাঁচের দেয়াল দিয়ে দেখল আইলান অফিসের সামনের লটে গাড়িতে উঠছে | সাগরের চোখে পানি চলে এলো | কেমনে আর কিভাবে সব উল্টে গেল একদিনেই তার জীবনে |