বৃষ্টি পড়ছে সকাল থেকে | ম্যাডিসন জানালার সামনে বসে বৃষ্টি দেখছে | কিছুক্ষন আগেও সে বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছিলো কিন্তু এখন ঘরে গিয়ে জানালার সামনে বসলো | কারন রজার বারান্দা থেকে উঠিয়ে দিয়েছে তাকে |
ম্যাডিসন বাংলাদেশের বৃষ্টি দেখে এতো মুগ্ধ হয়েছে যে সে লক্ষই করেনি যে দীর্ঘক্ষণ ধরেই তাদের বারান্দার কোনাকুনি যে বাড়িটা সেখানের জানালায় একটা মোটাসোটা মধ্যবয়স্ক লোক প্রথমে শুধু লক্ষ করছিল তাকে কিন্তু এরপর নোংরা অশ্লীল গান গাওয়া শুরু করল | রজার একবার লক্ষ করেই ম্যাডিসনকে ঘরে পাঠিয়ে দিল |
দুপুরে খেয়ে নিয়ে মাহিরা ঘুমাচ্ছে আর কথা স্কুলের হোমওয়ার্ক করছে | আলিজা ম্যাডিসনের জন্য হট চকলেট বানিয়ে কথাকেও এককাপ দিয়ে এলো | ম্যাডিসনকে এককাপ হট চকলেট দিয়ে আলিজা এইব্রাহামকে খাবার খাওয়াতে বসল | আজকে রজারকে কিছুই করতে দিলোনা আলিজা | এককথায় বলল তাকে আজ বিশ্রাম নিতে |
.
এইব্রাহামকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আলিজা আবার একবার দেখে এলো ম্যাডিসন কি করছে |
ম্যাডিসন কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে আর হাতে তিনটা বই | ম্যাডিসন আলিজাকে দেখে কান থেকে হেডফোন খুলে ফেলে হাসল |
আলিজা এগিয়ে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, "কি সোনা ?"
ম্যাডিসন বলল, "মা দেখেছো কি চমৎকার একটা দিন !"
"হুম |"
"এমন রোমান্টিক একটা দিন আর ড্যাডি ঘুমাচ্ছে ! হাও ব্রুট !"
আলিজা মৃদু শাসনে বলল, "ম্যাডিন ! তোমার ড্যাডিকে তোমার এসব বলা ঠিক না ! আর জানোই তো এরিক কেমন !"
"মা, আমি তোমার হয়ে বলছি | আজকে ড্যাডির উচিত তোমার সঙ্গে "স্লো ড্যান্স" ( সুন্দর মুহূর্তব্যয় ) করা | আর সে কিনা উপুড় হয়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে ! অদ্ভুত !"
আলিজা হেসে ফেলল | মেয়ের দিকে তাকালো আলিজা | ম্যাডিসন আরো সুন্দর হচ্ছে দিনকে দিন | এটাই ভয় রজার, এরিক আর সবচেয়ে বেশি তার |
আমেরিকায় টিনেজার সন্তানদের নিয়ে অধিকাংশ বাবা মা খুবই চিন্তিত | কেননা খুবই বেপরোয়া হয় তারা | সেখানে টিনেজাররা বেপরোয়া আর হঠকারী আচরণকে গর্ব আর সাহসিকতার কাজ মনে করে | এদের অনেকেই বয়সের সাথে বদলে যায় আবার |
এরিকের সাথে বিয়ের পর ওর সবার্বিয়ায় আলিজা টাই গোল্ডফাইন নাম এক সতেরো বছর বয়েসী ছেলেকে দেখত যাকে নিয়ে তার ডিফেন্স এটর্নি মা লরিন আর কার্ডিয়াক সার্জন বাবা টেন্ট খুবই ঝামেলায় থাকত | টাই মারাত্মক বেপরোয়া ছিল | সে দ্রুত গাড়ি চালানো, মদ খেয়ে গাড়ি চালানো, পট স্মোকিং, মারামারি সবই করত | অথচ টাই পরবর্তী ছয় বছরে বিশেষ করে শেষের তিন বছরে সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ হয়ে উঠল | এখন সে চেস্টারে পরিচিত ভেট সার্জন ( গোবদ্যি/পশু ডাক্তার ) | আবার তাদের সবার্বিয়াতে ডরিস ক্রোস নামে আরেকটি টিনেজার মেয়ে ছিল টাইয়ের বয়েসী | এও একই | সম্পূর্ণ বেপরোয়া আর অসম্ভব বেয়াদব | ডরিস-এর মা এলেনর নিজেকে খুবই "পারফেক্ট মাদার এন্ড হাউজওয়াইফ" মনে করতেন | অথচ তারই মেয়ে মায়ের সব অহংকার ধুলিস্মাৎ করে দিল | ডরিস একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ালো আর Y2K পিল নিতে গিয়ে ধরা পড়ল | এরপর চারমাস জুভেনাইল হোম ( কিশোর সংশোধন কেন্দ্র ) থাকল | সেখান থেকে ফিরে সে নিজের হাইস্কুলের এক বিবাহিত শিক্ষকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে অন্তঃসত্বা হয়ে পড়ল | সন্তানটাকে ডরিস যদিও প্রথমে এডাপশনে ( দত্তকদান ) দিয়েছিল পরে আবার ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে | এখন সে আটলান্টিক সিটিতে থাকে আর একটা সুপারমার্কেটে কাজ করে | তার ছেলেটা কিছুদিন ডোরিসের কাছে থাকে আর কিছুদিন তার জন্মপিতার কাছে |
এসব ছেলেমেয়েদের দেখলে আর এরপর ম্যাডিসনকে দেখলে আলিজার নিজেকে গর্বিত আর ধন্য মনে হয় | কারন তার জন্মদাত্রী মা মেলিসা আর বাবা এরিকের বৈবাহিক জীবন সুখময় ছিল না | ডিভোর্সের পর মা মেলিসা তার নিজের সুখ নিয়েই ব্যস্ত ছিল | সে একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়েছে কখনোই মেয়ের কথা ভাবেনি | আর এরিক চেষ্টা করেও ম্যাডিসনের কাস্টডি পায়নি কারন পেশার কারনে এরিক ঘরে থাকে কম সময় | তাই সন্তানের প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসা থাকলেও সে অভিভাবকত্ব পায়নি | এর কারণেই এরিক নিজের প্রতি ক্রুদ্ধ আর বেপরোয়া ছিল | অসতর্ক মায়ের জন্য ম্যাডিসন শৈশবে একটা মারাত্মক আঘাত পেয়েছিল যা সে সামলে উঠেছে বহু কষ্টে | এতো সমস্যার পরেও ম্যাডিসন খুব চমৎকার একটা মেয়ে |