আলিজার চোখ ভিজে উঠছে একটু পরপর |
আইলান মাথা সরিয়ে নিয়ে বলছে, "আর না | লাগছে |"
আলিজা কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল, "এমন কেন করলি ভাইয়া ? কারো কথা না ভাব নিজের কথাটা তো ভাববি |"
"আলিজা থামতো আর দিসনা |"
"এই হয়ে গেছে আর একটু |"
আলিজা ভালোকরে ডিসিনফেক্ট্যান্ট লাগিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ লাগলো | আইলানের বামদিকের কপালের উপর আর থুতনিতে কেটে গিয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় |
আলিজা আইলানের বামদিকের কুনুইয়ে পট্টি লাগিয়ে দিতে দিতে বলল, "আর কোনদিন এমন করবিনা | কথা দে আমাকে |"
আলিজা ভাইয়ের হাতটা দুহাতের মাঝে নিয়ে বলল, "বল | আমাকে ছুঁয়ে বল |"
"কি পাগলামো এসব ?"
"না বল তুই | বলতে হবে তোকে |"
"আচ্ছা আর করবোনা |"
আলিজা আইলানের সামনে মেঝেতে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল |
কেঁদে কেঁদে বলল, "মা বাবা কি না কি বলল আর তুই বেরিয়ে গেলি সিনেমার নায়কদের মত | কেন ?"
আইলান সান্তনা দিয়ে তাকে ধরে বলল, "এই কাঁদিস নাতো |"
"ধরবিনা আমাকে |"
"আচ্ছা ধরবোনা কিন্তু থাম তুই |"
"না |"
"আচ্ছা কেন কাঁদছিস ?"
"তুই এমন ভাবলি কিকরে যে আমি তোর ক্ষতি চাই ? কিভাবে ভাবলি ?"
"ও এই কথা ? আরে আমি রাগ করে বলেছি | এবার তো থাম |"
আলিজা আইলানের কোলের উপর মাথা রেখে বসে বলল, "যেদিন আমি থাকবোনা টের পাবি |"
"কই যাবি তুই ?"
"দেখিস ঠিক চলে যাবো |"
"যেতে দিলে তো ? তুই গেলে আমাকে সামলাবে কে ?"
"তুই নিজেই নিজেকে সামলাবি |"আলিজা মুখটা গম্ভীর করে ফাহমিদাকে বলল, "মা ভাইয়ার সাথে আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে | ভাইয়া এলে ছাদে আসতে বোলো |"
ফাহমিদা কিছুই বুঝলেন না কি হয়েছে | ভাবলেন আবার ঝগড়া করেছে দুজন |
আলিজা কিছুই বুঝতে পারছেনা কিভাবে বলবে কথাটা আইলানকে | সে কাঁদল কিছুক্ষন |
রাতে আইলান ছাদে এসে দেখল আলিজা রেলিংএ বসে আছে |
আইলান দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বলল, "এই তোকে না মানা করেছি এখানে বসতে তাও কেন বসেছিস ? নাম !"
"না |"
আইলান আলিজার হাতটা ধরে বলল, "নাম প্লিজ বেবিটা নাম | নেমে যা |"
আলিজা লাফ দিয়ে নেমে পড়ল |
আইলান বলল, "আর কখনো বসবিনা এখানে |"
"আচ্ছা |"
"তুই কি বলতে ডেকেছিস নাকি ?"
"হুম | "
"কি ?"
"তেমন কিছুনা | দেখতে ইচ্ছা করছিল তোকে |"
"আলিজা শরীর খারাপ নাকি তোর ? খারাপ লাগছে ? কি হয়েছে ?"
"কি আশ্চর্য | আমি কি তোকে দেখতে চাইতে পারিনা |"
''আয় বসি |"
আইলান বসে বলল, "কি বলবি বলছিলি ?"
"হুম | তোর ফোন বন্ধ কেন ?"
"ও | মনটা ভালো ছিল না |"
"কেন ?"
"আরে কি আর বলার আছে ! পরিচিত বন্ধুরাও যেন এখন চেনেনা কেউ | অথচ দ্যাখ | প্রায় সাত বছরের সঙ্গে সবার সাথে | কিন্তু সবাই কেন জানি এমন হয়ে গেল | কেউ কাউকে এখন চিনিনা |"
"হুম | তবে শেষের কথাটা ঠিক না |"
"কোনটা ?"
"কেউ কাউকে চিনিসনা তা | আসলে চেনাজানা কিন্তু এখনো আছে তবে দুভাগে ভাগ হয়েছে | চাকরিওয়ালারা একটা আর বেকাররা একটা |"
আইলান বোনের কাঁধে হাত রেখে বলল, "এত কখন ভাবিস তুই ?" আলিজা বললনা কিছুই |"