আলিজা শাড়িদুটো মাহিরার সামনে রাখলো l মাহিরা চোখে প্রচন্ড বিস্ময় আর আনন্দ নিয়ে আলিজার দিকে তাকালো l
আলিজা মুখটিপে হেসে বলল, "পছন্দ হল ?"
মাহিরা উচ্ছাসের সাথে বলল, "খুব !"
মাহিরা হাতবাড়িয়ে শাড়িটা কাছে নিলো l কি সুন্দর শাড়িটা ! লাল টুকটুকে একটা জমকালো বেনারসি ! গাঢ় লাল জমিনে উজ্জ্বল সোনালী জরিসুতার ভরাট কারুকাজ ! শাড়িটা ছুঁয়ে নিজের বিয়ের দিনটা মনে করল মাহিরা l
বিয়ের দিনটার কয়েকদিন আগে থেকেই খুব চিন্তিত আর অস্থির ছিল আইলান l এর কারন হল মনজুরের হঠাৎ অসুস্থতা l মনজুর কোনরকম কারন ছাড়াই অদ্ভুত এক অসুখে পড়ল l তার রাতে একটু জ্বর আস্তে লাগল আর সেইসাথে শরীরে ব্যাথা l মনজুরের স্বভাব অকারণ অস্থিরতা তৈরী করা নিজের চারপাশে l আর ফাহমিদা আর মনজুর দুজনেই স্বভাব হল সামান্য অস্থিরতায় কাতর হয়ে নিজেদের সন্তানদের অন্যদের কাছে লজ্জিত করা l মনজুর তাই করতে লাগলেন I তিনি একে, ওকে, তাকে ডেকে জড়ো করতে লাগলেন এই বলে যে তিনি অসুস্থ কিন্তু কোন সন্তানের সেবা পাচ্ছেন না l তিনি আইলানের ঘরেও যাবেননা l নয়া পল্টনের বাড়িতে তিনি অসুখেবিসুখে দিন কাটাতে লাগলেন l
একদিন মনজুর অসুখে একটু বেশিই কাতর হলে পরে তার শ্যালক আইলানকে ফোন করে ডেকে নিয়ে এলো l আইলান এসে তার পরিস্থিতি দেখে তাকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করল l তিনি সেখানে গিয়েও বারবার বলতে লাগলেন "আমাকে কে দেখে রাখবে !" প্রথমদিন আইলান থাকলেও দ্বিতীয়দিন থেকে সে অফিস শেষ করে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত থেকে ঘরে ফিরে আসতো l মাহিরাও প্রায় রোজই হবু শশুরকে দেখতে যেত l
এরমধ্যে একটা ব্যাপার হল l মনজুরের গ্রামের এক বন্ধু তার মেয়েকে নিয়ে হুট করে এসে পড়ল l যে লোক প্রায় দশবছরেও খোঁজ করেনি সে হঠাৎ করেই বন্ধুর চিন্তায় অস্থির হল l আর বন্ধুর চেয়ে বন্ধুর মেয়ে বেশি চিন্তিত হল পিতৃমিত্রর স্বাস্থ্য নিয়ে l মাহিরা খুবই বুদ্ধিমান একজন স্ত্রীলোক l একদিনেই সে মনজুরের বন্ধু হালিম আর মেয়ে নাসিমার মনজুরকে নিয়ে এত চিন্তার কারন বুঝে গেল l কারনটা হল আইলান l মানুষ খুবই সুবিধাবাদী l সেবার বিনিময়ে সে নিজের মেয়েকে মনজুরের ছেলের ঘরণী করতে চায় আর মেয়েও খুব আগ্রহী l তিনদিন পরপর একই ঘটনা দেখে মাহিরা ব্যাপারটা আলিজাকে জানালো l আলিজা আইলানের সাথে কথা বলল l