পর্ব ২৬

697 27 5
                                    

প্রীতি নিজেই টেবিলে সব পিঠাগুলো সাজিয়ে রাখলো | আলিজা বুয়াকে নিয়ে টেবিলে নাশতা বাড়ছে | এরিক উঠে পড়েছে, তাকে বারোটার আগেই হোটেলে গিয়ে চেকআউট করে ফিরতে হবে |
আইলানকে দেখে সাগর গদগদ হয়ে বলল, "ভাই আপনাকে এসে আজ দেখলামই না | বাইরে ছিলেন নাকি ?"
আইলান গম্ভীরভাবে বলল, "না | ঘরেই ছিলাম | কি ব্যাপার আজ তো রবিবার আপনি এখানে এলেন যে ? আজ অফিসে যাবেন না ? সাড়ে আটটা বাজে প্রায় |"
"ও ! ভাই ভাবলাম পিঠা দিতেই যখন যাচ্ছি তো আপনার সাথেই চলে যাব |"
"আমি তো আজ যাচ্ছিনা | আমি ছুটি নিয়ে রেখেছি | কিন্তু আপনাকে তো যেতে হবে | এককাজ করুন এখনই ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ুন | তাও দশটার মধ্যে পৌঁছাতে যদি পারেন |"
সাগর একটু দমে গেল, তাও জোরকরে হেসে বলল, "ভাই আজকে যাবেননা ?"
"না | আজ তো আমার মায়ের মিলাদ, যাওয়া সম্ভব না | এজন্যই আমি ছুটি নিয়ে রেখেছি | আপনি খেয়ে নিয়ে রওনা হয়ে যান | এমনিতেই এখন লিংকরোডে হেভি ট্রাফিক পড়বে |"
আইলান সামনে এগুতেই সাগর আবার ডেকে বলল, "ইয়ে ভাই একটা কথা |"
আইলান অপ্রসন্ন হয়ে বলল, "বলুন |"
"না মানে আপনি তো আমার সুপারিন্ডেন্ট | আপনি যদি বলে দেন তো আজকে আমি লিভ নিয়ে নেই |"
আইলান এবার স্পষ্ট আদেশে বলল, "এটা তো আমি করতে পারছিনা | আপনাকে সেজন্য অফিসিয়াল প্যাডে অফিসিয়াল লেটার দিতে হবে আমাকে সেটা তো জানেনই | আমি আপনাকে এরকম কিছু করলে সেটা 'নেপটিজম' হয়ে যায় | আমি দুঃখিত আমি এরকম কিছু করতে পারছিনা | আপনি নাশতা করে অফিসে চলে যান |"
আইলান ডাইনিং রুমে গিয়ে বুয়াকে বলল, "ড্রইং রুমে ওই মেহমানকে নাশতা দিয়ে দাও | উনাকে এখনই যেতে হবে |"
আইলান নিজের ঘরে যাচ্ছিলো তখন সাগর আবার বলল, "ভাই মিলাদ কখন ?"
আইলান বিরক্তভাবে বলল, "বাদ আসর |''
সাগরকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আইলান ঘরে ঢুকে গেল | আলিজা গোসল করে বেরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল মুছছে তোয়ালে দিয়ে |
আইলান এসে আলিজার কাঁধে হাত রেখে বলল, "তুই রাগ হয়েছিস আমার উপর ?"
আলিজা হেসে বলল, "ভাইয়া এতে কি তোর কোন দোষ আছে বল ? তো কেন অকারণে তোর উপর আমি রাগতে যাবো ? এরকম অনেক মানুষই আছে যাদের সিভিক সেন্স বলতে কিছুই নেই |"
আইলান গম্ভীরভাবে বলল, "সেতো দেখছিই ! আচ্ছা কেন এরকম করছে বলতো ? বুঝলাম প্রীতি মেয়ে ভালো কিন্তু সাগর এসব কি শুরু করেছে ?"
আলিজা উঠে দাঁড়িয়ে আইলানের হাতটা দুহাতে ধরে আশ্বাস দিয়ে বলল, "তুই কেন এত ভাবছিস ভাইয়া ? আমিতো আছি নাকি ? আমি থাকতে তোর কোন সমস্যা কোন কষ্ট কোনদিন হতে দেবো না আমি | অবশ্য সেই অধিকার যদি আমাকে দিস তো !"
আইলান আলিজার কাঁধেধরে ঝাঁকি দিয়ে বলল, "তোর অধিকার নেই তো আছেটা কার হ্যা ? আমার জীবনের সবকিছুতে শুধু তোর দাবি ! এটা আমি ভুললেও তুই মনে রাখবি সবসময় | আমার জন্য সবার আগে তুই |"
"ঠিক আছে | এখন যা শাওয়ার নে | তুই তো আবার নয়া পল্টন যাবি |"
"হ্যা |"
"ভাইয়া আজ সাথে যাই আমি ?"
"না | প্লিজ জিদ ধরবি না | আমি বিকেলে এসে নিয়ে যাব কেমন |"
আইলান গোসলে চলে গেল |
সাগর নাশতা করে মনক্ষুন্ন করেই বেরিয়ে গেল | খুব শখ ছিল আজ সে আইলানের ওই বিশাল গাড়িতে অফিসে যাবে তা হল না | সাগর একটু অবাকই হল যে আইলান তাকে মিলাদে যেতে বলল না | অবশ্য বলার কি হল সেতো যাবেই যেহেতু প্রীতি এখানেই আছে ওদের সাথেই সে যাবে | তবে ছুটিটা পেলে ভালো হত | কিন্তু আইলানের এই এক ব্যাপার ! কাজ নিয়ে সে খুব সিরিয়াস ! আর ওর সিনিয়াররাও খুব ভালো চোখে দেখে এত প্রফেশনাল বলে | জান লাগিয়ে কাজ করে যায় বলেই এতদ্রুত এতজনকে টপকে সিনিয়ার এক্সিকিউটিভ হয়ে গেল | যাক আজ ছুটি না দিলে কি সমস্যা আর | প্রীতির সাথে বিয়ের পর হবেই সাগরের প্রমোশন |

মেঘের আলোয়Donde viven las historias. Descúbrelo ahora