পর্ব ১৪

802 26 1
                                    

"আমি অনুরোধ করছি ছেড়ে দাও | যেতে দাও আমাকে |" আলিজা কাকুতি মিনতি করছে |
কিন্তু এরিক হাত ছাড়ছেনা তার, সে বলল, "না আমি যেতে দেবো না তোমাকে | কখনোই না | আমি থাকতে এমন কখনোই হতে দেবোনা আমি তোমার সাথে |"
আলিজা কেঁদে উঠে বলল, "তুমি কেন বুঝছনা ? এটা আমাকে করতেই হবে |"
এরিক তাকে দুহাতে শক্ত করে ধরে বলল, "আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না | না |''
এভরণের ডাকে ধড়মড় করে ঘুম থেকে উঠে পড়ল আলিজা | আশ্চর্য | সে স্বপ্ন দেখছিলো | স্বপ্নে কেঁদে অর্ধেকটা বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে সে |
কি দেখল এটা সে ?

এরিক আজ আলিজাকে দেখে যেন ধাক্কা খেল একটা |
আলিজা নিচে নেমে আসার পর এরিক জিজ্ঞাসা করল, "আজ কি কোন অনুষ্ঠান চলছে ?"
আলিজা বলল, "হ্যা | আজ বাঙালি সমাবর্তন | ভার্জিনিয়ার সব বাঙালি শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়েছে |"
"ওহ | লিজ ?"
"কি এরিক ?"
এরিক মুগ্ধ বিস্ময়ে বলল, "মাই গড লিজ ! আজ খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে ! একেবারে গোল্ডেন গডেস ( স্বর্ণ দেবীমূর্তি ) !"
আলিজা ছোট একটু হাসি আনলো ঠোঁটের কোনে | আলিজা আজ হালকা সোনালী রঙের লেসের শাড়ি পড়েছে | চোখে কাজল দিয়েছে, সুন্দরকরে সেজেছে | চুল খোঁপা করে লাল টকটকে দুটো গোলাপ লাগিয়েছে তাতে |
গাড়ি চালাতে চালাতে এরিক বলল, "লিজ আজ আমার মনটা খুব খারাপ ছিল | কিন্তু তোমাকে দেখে আমার মনটা ভালো হয়ে গেল |"
আলিজা মিষ্টিকরে হাসল |
এরিক বলল, "জানতে চাইলে না কেন খারাপ ছিল আমার মন ?"
আলিজা প্রশ্নের চোখে তাকাল |
এরিক একটু হাসল, বলল, "আজ একটা অনেক বড় সত্যি তোমাকে বলবো |"
"কেন ?"
"নইলে তুমি তোমার কষ্টর কথাগুলো আমাকে বলবে না |" এ
রিক গাড়ি ঘুরিয়ে মি. সাবমেরিন-এর ড্রাইভ থ্রু অর্ডার-এ দুটো চিকেন পারমেজান, টুনা স্যালাড, ফ্রাইস, ড্রিঙ্কস আর স্টিঙ্গারস থেকে দুটো ল্যাটে নিয়ে নিলো |
আলিজা হেসে বলল, "আজ কি গাড়িতেই রোড পার্টি নাকি ? এতসব কেন ?"
এরিক বলল, "অনেক কথা আজ তাই |"
এরিকের বেডরুমের সাথে লাগোয়া টেরেস-টা খুব দারুন | সুন্দর খোলামেলা আর গাছপালা ঘেরা |
এরিক আলিজাকে আবার টুনা স্যালাড সেধে বলল, "প্লিজ একটু চেখেই দ্যাখো |"
আলিজা নাক সিটকে বলল, "প্লিজ এরিক বারবার এভাবে সাধছ আমার খারাপই লাগছে | কিন্তু যতই বলোনা কেন এই জিনিস আমি খাবোনা |"
"কেন ?"
"আমি কাঁচামাছ খাইনা | যদি তুমি চাও যে এই সুন্দর জায়গাটা আমি বমি করে ভরিয়ে ফেলি তো জোর করে দেখতে পারো |"
"ঠিক আছে | আমিই খেয়ে নিচ্ছি |"
"এরিক ?"
"কি ?"
"বলো এখন তোমার কথা |"
"উহু | আগে তুমি |"
আলিজা একটা নিঃস্বাস ফেলে মলিনকণ্ঠে বলল, "এরিক আমার কথা হয়ত খুব সাধারন মনে হবে তোমার |"
"বলো লিজ |"
আলিজা আইলানের কথা সবকিছু সংক্ষেপে বলল এরিককে |
এরিক সব শুনে বলল, "লিজ সাধারণ কথা নয় এটা |"
আলিজার চোখে পানি |
এরিক তার জিন্সের পকেট থেকে রুমালটা বের করে দিয়ে বলল, "চোখ মোছো | লিজ তোমার ভাইটা একটা গ্রেড ওয়ান 'মোরোন' ( গর্ধব ) ! ও জেনেশুনে এমন বিপদে জড়িয়েছে |"
আলিজা তখন ও কাঁদছে |
এরিক আলিজার পাশে ঘেঁষে এসে বসে বলল, "এই লিজ ! লিজ শোনো আমার কথা | আমরা যাই করিনা কেন আমরা কখনোই আমাদের কর্মফল এড়াতে পারবো না | কারমা ইজ এ বিচ, শী নেবার লেটস গো ! ( কর্মফল খুব সাংঘাতিক জিনিস, এটা এড়ানো যায়না |)"
"তুমি এটা বিশ্বাস করো ?"
"হুমম | ফল পেয়েছি তো বিশ্বাস করবো না !"
"মানে ?"
"লিজ তুমি বুদ্ধিমান অনেক | তুমি নিশ্চই লক্ষ করেছো যে আমি সবসময় আমার রিজাইনের কথাটা এড়িয়ে যাই | কেন আমি ইউএসএএফ ছেড়ে দিয়েছি তা কখনোই বলতে চাইনা |"
"আমি প্রথম দিনেই সেটা খেয়াল করেছি |"
"হুমম | লিজ তোমার ভাই তোমার খুব কাছের একজন তাইনা ?"
"হ্যা |"
"কাছের কেউ চলে গেলে সেটা অনেক কষ্টের |"
"এরিক যদি খুব দুঃখের কোন স্মৃতি হয়ে থাকে তো থাক | বলতে হবে না |"
"বলতেই চাচ্ছি লিজ |"
"সত্যি ?"
এরিক অনেকটা উদাসভাবে বলল, "হুমম | শুনবে তো তুমি ? শুনে আমাকে ঘেন্না করবে নাতো ?"
"না | বলো |"
"লিজ আমার পরিবারের দিক থেকে আমি সুখী ছিলাম না | আমার মা ঠিক 'সিট্ হোম' ( সংসারী ) মহিলা ছিলেন না | সে অনেকটা এডভেঞ্চারাস প্রকৃতির | সে বিভিন্ন নতুনকিছু করতে, নতুন জায়গায় ঘুরতে বেশি ভালোবাসতো | মা একটু আলাদাই থাকত আমাদের কাছ থেকে | এর ফলে যা হল তা এরকম আমরা ভাইবোনেরা অনেক বেশি পরস্পরের কাছাকাছি ছিলাম | আর ড্যাড.........ড্যাড ছিল আমাদের হিরো | ড্যাড দারুন মানুষ ছিল | মায়ের আমাদের প্রতি মনোযোগের অভাব ড্যাড আর চ্যাসটিটি পূরণ করে দিত | চ্যাসটিটি আমাদের ন্যানি ( শিশু পালনকারী গৃহকর্মী ) | ড্যাড যে কয়েকদিন ঘরে থাকত আমরা স্বর্গে থাকতাম | এরপর চ্যাস | ড্যাড না থাকলে চ্যাস ছিল সবের সবকিছু | আমার বয়স যখন বারো তখন সুপারমার্কেট থেকে ফেরার পথে একদিন চ্যাসকে কেউ গড়িধাক্কা দেয় | 'হিট এন্ড রান' কেস | কিছুই জানা গেল না | তিনটা দিন ইনটেনসিভ কেয়ারে প্রচন্ড কষ্ট করে চ্যাস মারা গেল |"
আলিজা এরিকের বিষাদভরা মুখটার দিকে চেয়ে এরিকের হাঁটুর উপর হাতটা রেখে বলল, "থাক এরিক | তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে এসব মনে করতে |"
এরিক আলিজার হাতের উপর হাত রেখে বলল, "আজ কষ্ট হলেও বলতে ইচ্ছা করছে | জানো লিজ, মারা যাবার আগমুহূর্তেও চ্যাস একই কথা বারবার বলছিলো | ও শুধু বলে যাচ্ছিলো, ডক্টর আমাকে বাঁচাতে হবে আপনাকে | আমি চলে গেলে আমার বাচ্চাগুলোকে কে দেখবে ? নিনা এখনও ঠিকমত মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করতে পারেনা | পোর্টার প্রায়ই খাওয়ার সময় স্টেক কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলে | প্রেস্টন আয়রন করতে পারেনা | রবার্ট প্রায়ই সাইকেল থেকে পড়ে পা কাটে | এরিক ঠিকমত সিরিয়াল দুধে ভেজাতে পারেনা | চ্যাস অনেক বাঁচতে চেয়েছিল | কিন্তু ও বাঁচেনি | চ্যাস চলে যাবার পর অনেক অসহায় হয়ে যাই আমরা | তখন মার সাথে বাবার সম্পর্ক খুব খারাপ | আমার এডভেঞ্চার প্রেমী মা প্রায়ই আমাদের ফেলে এদিকসেদিক চলে যেত | সবাই সমান না | আমরা বাবা মার সম্পর্কের ফাটল এর সাথে স্বাভাবিক হলেও পোর্টার কিভাবে যেন বিষাদগ্রস্ত হয়ে 'পট স্মোকিং' ( 'ম্যারিউয়ানা' নামক উদ্ভিদ থেকে প্রস্তুত নেশাজাত দ্রব্য ) ধরল | ওকে রিহ্যাব ( সংশোধন কেন্দ্র ) পাঠানো হল | এরপর ড্যাড আমাদেরকে সামলে রাখেন | কিন্তু আমাদের সত্যি ভাগ্যই খারাপ | ড্যাড একটা বড় ভুল করলেন | এই ভুলটা আমাদের সবাইকে সবার থেকে আলাদা করে দিল | মম আর ড্যাড ডিভোর্স নিয়ে আলাদা হল আর আমরাও সবাই ছড়িয়ে পড়লাম | হ্যা এটা ঠিক যে শিক্ষা আর পারিবারিক নামটা আমাদের কাজে লাগল | সবাই নিজের ক্যারিয়ার গড়ে ফেলেছি ততদিনে |"
আলিজা চুপ করে রইল |
এরিক জিজ্ঞাসা করল, "কি নিয়ে তোমার মনের আঘাতটা তা কেন বলতে চাচ্ছোনা তুমি ?"
আলিজার চোখ ছাপিয়ে বড় দু'ফোটা পানি পড়ল |
এরিক দ্রুত তার কাঁধের উপর দিয়ে হাত রেখে বলল, " লিজ ! লিজ প্লিজ কেঁদোনা | বলো আমাকে |"
আলিজা ভেজা কণ্ঠে বলল, "আমি ভাবিনি কোনদিন আমার ভাই এভাবে দূরে চলে যাবে | আর আমার মাকে এতটা কষ্ট দেবে |"
এরিক তার চোখ মুছে দিয়ে বলল, "লিজ শুনলে হয়ত কষ্ট পাবে কিন্তু কি জানো, তোমার মা অনেকটা নিজেই দায়ী এজন্য |"
আলিজা আহতস্বরে বলল, "এরিক কি বলছো তুমি ?"
"হ্যা | সত্যি | লিজ আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি | বড় কষ্টগুলো আমরা নিজের দোষেই পাই |"
"মানে কি তোমার কথার ?"
"লিজ আমি তোমাকে প্রায়ই বলি যে তোমাকে বন্ধু হিসেবে আমার এত ভালোলাগার কারণ হল তোমার সাথে অসের খুব মিল |"
"হ্যা | বলেছো |"
এরিক তার ফোনটা বের করে একটা ছবি দেখালো আলিজাকে | আলিজা দেখলো এরিকের সাথে আফ্রিকান আমেরিকান একজন লোকের ছবি |
আলিজা ফিরিয়ে দিতে গেলে এরিক বলল, "আরো অনেকগুলো আছে দ্যাখো |"
আলিজা স্ক্রল করে দেখল এরিকের সাথে অনেক ছবি এই আফ্রিকান আমেরিকান ভদ্রলোকের |
আলিজা ছবিগুলো দেখে ফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে বলল, "খুব আত্মিক বন্ধু তোমরা |"
এরিক শুধু বলল, "হুম | খুব |"
আলিজা বলল, "এরিক তোমার সাথে কি উনার ঝগড়া হয়েছে ?"
"এমন মনে হল কেন ?"
"মনে হল তুমি মিস করো উনাকে |"
"হুমম | খুব মিস করি |"
"এরিক ?"
"বলো লিজ |"
"তুমি উনার সাথে কথা বলো | বলে মিটমাট করে নাও |"
"সেটা সম্ভব হলে অবশ্যই করতাম লিজ |"
"সম্ভব নয় কেন ?"
এরিক একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "সম্ভব নয় | কারণ অস আর বেঁচে নেই |"
আলিজার যেন বুকের মাঝে হঠাৎ একটা চাপা ব্যাথা লাগল কেমন এরিকের শেষ কথাটায় |
এরিকের চোখ ভেজা | এরিক ভারীগলায় বলল, "আমি বললাম না লিজ কর্মফল | আমি পেয়েছি আমার জীবনে |"
আলিজা অবাক হয়ে দেখল একজন বেপরোয়া, অনুভূতিহীন মানুষের চাপা কষ্টের দীর্ঘশ্বাস |
এরিক বলল, "অস ! ও আমার বন্ধু না শুধু | ও আমার ছায়া ছিল | যেকোন কষ্ট যেকোন যন্ত্রনায় ও ছিল আমার আশ্রয় | জুনিয়ার হাই ( যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মধ্যবর্তী শিক্ষাপ্রদান কেন্দ্র ) থেকে আমরা একসাথে | ও সবকিছুতে আমার সঙ্গে ছিল | আমার পারিবারিক সমস্যা, আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে সমস্যা, আমার পেশগত সিদ্ধান্ত সবকিছু ও দিয়েছে আমাকে | লিজ আমি ম্যাডিসনের কাস্টডি ( সন্তানের অভিভাবকত্ব ) যখন পেলাম না আমার পেশাগত কারণে আমি ঘরে কম থাকি বলে তখন আমি সত্যিই খুব কষ্ট পেয়েছিলাম | ও আমার হয়ে অনেক চেষ্টা করেছিল | ওই আমাকে বলেছিল যে আমি যদি সত্যিই আমার মেয়েকে ভালোবাসি তো একদিন না একদিন আমার মেয়ে নিজেই চলে আসবে আমার কাছে | ভাবতে পারো লিজ ? ভাবতে পারো অস কতটা ভালো বন্ধু ছিল ?"
আলিজা নির্বাক চেয়ে রইল |
এরিক বলল, "এই অসকে আমি নিজের দোষে হারিয়েছি |"
"কিভাবে এরিক ?"
"মিডলইস্ট আনরেস্ট সিচুয়েশন ( মধ্যপ্রাচের রাজনৈতিক অস্থিরতাকালীন সময় ) -এর সময় আমরা নেইটো ( NATO )-এর হয়ে মার্সেনারিস হয়েছিলাম ( বিশেষ অভিযানে নিযুক্ত ভাড়াটে সৈনিক ) তখন ফার্স্ট ফ্লিট সোয়ার্মের পর এতগুলো মৃত্যু দেখে অস আর আমি এবং আমার ফ্লিটের অনেকেই ঝিমিয়ে পড়ি | আমরা চলে যেতে চাই কিন্তু পারছিলাম না | অনুমতিই নেই | আমরা মিশনের ফাঁকে প্রায়ই রাস্তায় বের হতাম | রাজনীতির যাতায় পড়ে পিষতে থাকা সাধারণ মানুষগুলোকে দেখতাম | ওরা যুদ্ধ চায়না | আমরাও চাইনা | কিন্তু আমাদের চাওয়ার মূল্যই বা কি ! কোন মূল্য নেই | আমার ফ্লিটের কেউই নেক্সট বোম্বার্টমেন্ট সোয়ার্মের জন্য রেডি হল না | মেজরের অনেক বকা খেয়ে আমরা বাধ্য হলাম উড়তে প্রস্তুত হতে | অস রাজিই নয় | অনেক বলে ওকে রাজি করলাম |"
"এরপর কি হল ?"
"প্রথম বোম্বার্টমেন্ট শেষ হবার পরেই আমরা মার্কড হলাম | দুটো এসএ-২ আমাদের ল্যাজে ল্যাজে ঘুরছে | হিট করবেই | বিশ মিনিট পর আমরা দুজনেই বুঝে গেলাম এই নুক ( মিসাইল ) থেকে বাঁচা যাবে না | আমরা ইজেক্ট ( বোমারু বিমান থেকে প্যারাসুট সহযোগে ঝাঁপিয়ে পড়া ) করলাম | আমি ২০০ ফুট ফল দিয়ে আমার শ্যুট ( প্যারাস্যুট ) খুলে দিলাম | কিন্তু দেখলাম অস তখনও ওর শ্যুট খুলছেনা | আমি চিৎকার গালাগালি শুরু করলাম | অবশেষে ওর শ্যুট খুলল | কিন্তু সেফ ল্যান্ড ও করল না | আমি নেমে দৌড়ে গিয়ে দেখলাম ওর নাকে মুখে রক্ত | বুঝলাম অত হাই ভেলোসিটি জেট আল্টিটিউড থেকে ইজেক্ট করার সময় কোনভাবে ওর লেগে গিয়েছে | ওর প্রচন্ড রক্তপাত হল কিছুক্ষন | ও সেরে উঠে বসল |"
এরিক প্রায় একটা চুমুকে তার বিয়ারের বোতলটা পুরো শেষ করল | তারপর বলল, "লিজ আমরা বেসে ফিরলাম | সেদিনও ও ভালোই ছিল | কিন্তু পরদিন সকালে বমি করে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেল | দুপুরের মধ্যে আমি বুঝে গেলাম কি হতে যাচ্ছে |"
এই প্রথম আলিজা এরিকের চোখ ছাপিয়ে অশ্রু পড়তে দেখল | এরিক অনেক সামলেও নিজের কান্না আটকাতে পারল না | আলিজা এরিকের হাতের উপর হাত রাখল |
এরিক কোনোরকমে তার আবেগ চেপে বলল, "লিজ পরদিন বেলা এগারোটার দিকে ও চলে গেল আমাকে ফেলে রেখে | লিজ দেশে ফিরে ওকে সামরিক মর্যাদায় শেষকৃত্য দেয়া হল | ওর কফিনের উপর রাখা পতাকাটা ভাঁজ করে আমিই অসের মায়ের হাতে দেই |"
"এরিক !''
"আমি আর নয় মাসের মত এএফ -তে ছিলাম | এরপর আমি আমার মেজর আর কর্নেলের সম্পূর্ণ অনিচ্ছায় ছেড়ে আসি আমার কাজ | ওরা চায়নি আমাকে রিজাইন দিতে |"
এরিক মাথা নিচু করে ফেলল | তারপর সে কান্না চাপবার কোনো চেষ্টা করলনা | কেঁদে ফেলে বলল, "লিজ আমি কেন ওকে সেদিন আমার সাথে যেতে বললাম ? ওতো যেতে চায়নি | আমার জন্যই মারা গেছে ও ! আমাকে সম্পূর্ণ একা ফেলে রেখে চলে গেছে অস !"
এরিক দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল, "লিজ ওর সেই হাসিমাখা মুখ আমি ভুলতে পারিনা | আমি কণ্ঠ শুনি | আমি দায়ী লিজ .......ওর মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী |"
আলিজা এরিকের কাঁধে হাত রেখে বলল, "এরিক | শোনো তাকাও আমার দিকে |"
"লিজ আমিই দায়ী | আজ আমি এমন অদ্ভুত জীবনযাপন করছি নিজের দোষে | আমি যদি সেদিন ওকে জোর না করতাম তো আজ ও বেঁচে থাকত | আমার এই অপরাধের জন্য আমি কোনদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা |"
আলিজা দৃঢ়ভাবে বলল, "এরিক | প্লিজ তাকাও আমার দিকে |"
আলিজাকে জড়িয়ে ধরে এরিক কাঁদছে | আলিজা চুপ করে রয়েছে | এরিক বারবার একই কথা বলছে, "আমি খুব কাঁদতে চেয়েছি | অনেক চেয়েছি কাঁদতে এই চার বছর অসের জন্য ! | কিন্তু পারিনি কাঁদতে | কান্না আমার গলা পর্যন্ত এসে থেকে গিয়েছে সবসময় | আমি আজও বুঝিনা কেন ঈশ্বর অসকে নিয়ে চলে গেল ! অসওয়াল্ড ! কেন ? আজ কাঁদতে চাই আমি | সবাই ভাবে আমার কোন অনুভতি নেই | হয়ত নেই | অস ছিল আমার একমাত্র পরিবার | কেন ওকে চলে যেতে হল ! আমি এতদিন কাঁদিনি | আজ কাঁদতে চাই |"
আলিজা ধীর কণ্ঠে বলল, "কাঁদো | কখনো কখনো কান্নাটা খুব দরকার |"

মেঘের আলোয়Nơi câu chuyện tồn tại. Hãy khám phá bây giờ