এরিক আলিজার হাতের উপর মৃদু মৃদু হাত ঘুরাতে লাগল | এরিক তখনই এমন করে যখন তার মনে কিছু নিয়ে খটকা লাগে |
আলিজা একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, "কি এরিক ?"
এরিক নির্বিকারভঙ্গিতে বলল, "কিছুই না |"
আলিজা জিজ্ঞাসা করল, "কি নিয়ে চিন্তিত ?"
এরিক বলল, "তুমি মিথ্যা কেন বললে তাই !"
"আমি মিথ্যা বলিনি |"
"তো তোমার ভাইকে বললেনা কেন যে কিভাবে কেটে গেল ?"
আলিজা পরিস্থিতি সামলে বলল, "এরিক আমি ভাইয়া বা তার বন্ধু কাউকেই পরস্পরের সামনে বিব্রত করতে চাইছিলাম না |"
"বুঝলাম তোমার চাওয়া সঠিক কিন্তু যেটা হয়েছে সেটা সঠিক হয়নি |"
"জানি এরিক | কিন্তু কি ই বা করার আছে আমার ! এরিক এখন মানুষ কোন অবস্থাতেই নিজের ভুল স্বীকার করতে ইচ্ছুক না | তুমি সাহায্য করতে চাইলেও তারা নেবেনা |"
"এমন কেন বলছো ?"
"এরিক আমার কিন্তু বাচ্চাটার জন্য খারাপই লাগছে | আমি জানি আর মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি এরিক যে ম্যাডিসন হচ্ছে একটা ঐশ্বরীয় উপহার আমার জন্য | ওর মত সন্তান হয়না | ওর ভয়াবহ পরিস্থিতি ও অনেকেটা নিজেই সামলেছে আর আমরা যাতে ওকে সাহায্য করতে পারি ও সে সুযোগ করে দিয়েছে | সব বাচ্চা ম্যাডিসন নয় | তওসিফের ছেলেটা 'প্রবলেম চাইল্ড' ( সমস্যাগ্রস্থ শিশু ) আর ওর সাহায্য দরকার |"
"সেটা মনে হয়না তোমার 'ওল্ড ডিভোটি' ( প্রাক্তন ভক্ত ) চাইবে ! এমনকি এটা বললে সে ক্ষিপ্ত হবে |"
"এমন করবোনা আমি | আলিজা আজকে তুমি অনেকটা চোখ খুলে দিলে আমার | আমি শুনতে চাই |"
তওসিফের গলা শুনে এরিক চমকে ফিরে তাকাল |
তওসিফ বলল, "সমস্যাটা কতটা আজকে বুঝলাম আমি |"
এরিক বিরক্তভাবে বলল, "ইউ ওয়ার ইভসড্রপিং ? ( তুমি আড়িপেতে আমাদের কথা শুনছিলে ?)"
তওসিফ বিব্রতভাবে বলল, "আমি দুঃখিত আসলে এভাবে তোমাদের কথা শোনার জন্য | আসলে হয়েছে কি......."
এরিক উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "আমি বলছি কি হয়েছে এখানে ! তুমি এখনও মনে করছো তোমার ছেলেকে তুমি ব্যবহার করতে পারো আমার স্ত্রীর মন ঘুরাতে |"
আলিজা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "এরিক কি বলছো এসব ?"
এরিক ক্রুদ্ধভাবে তওসিফের দিকে তাকিয়ে বলল, "একদম সঠিক বলছি ! লিজ আমি তোমাকে বিন্দুমাত্রও অবিশ্বাস কোনদিন করিনা | কিন্তু এই লোকটাকে আমি একটুও বিশ্বাস করতে পারিনা আর !"
তওসিফ কি যেন বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল | আলিজা বিস্ময় নিয়ে দুজনকে দেখল |
আলিজা যেতে গেলে এরিক তার হাতটা ধরে বলল, "দাঁড়াও | এর মন আমি বুঝেছি কিন্তু তোমার মনে কি আছে এর বোঝা দরকার |"
আলিজা গম্ভীরভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, "আমি কারো কিছুই বুঝতে চাইনা | আমি শুধু এখন এখান থেকে যেতে চাই |"
তওসিফ অনুতাপের সাথে বলল, "আসলে আলিজা এই কয়েকদিন পরপর তোমাকে দেখে আমি.....আমি জানিনা কি হয়ে গিয়েছিল আমার | আমি দুঃখিত আলিজা |"
আলিজা এরিকের হাতটা ধরে বলল, "এরিক চলো |"
দুজনে সামনে এগিয়ে গেল |
তওসিফ প্রায় দৌড়ে আলিজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, "প্লিজ আমাকে ক্ষমা করতেই হবে তোমাকে | আমি টুকুনকে ডাকছি | ও তোমাকে স্যরি বলবে |"
এরিক আলিজাকে আড়াল করে সামনে দাঁড়িয়ে বলল, "তোমার ছেলের সাথে আমার স্ত্রীর কোন কথা নেই | আর কি জানো ? আমার এখন মনে হচ্ছে তোমার ছেলে তার আচরণের অনেকটাই তার অভিভাবকদের থেকে পেয়েছে |"
তওসিফ ক্ষিপ্র হয়ে বলল, "এরিক আর একটা কথা বললে তোমাকে আমি ছেড়ে কথা বলবোনা |"
আলিজা এরিকের সামনে এসে দাঁড়িয়ে প্রায় রুক্ষস্বরে তওসিফকে বলল, "খবরদার বলছি ! আমার সামনে আমার হাজবেন্ডেকে অপমান করার চেষ্টা করবেন না | আমি আমার মাবাবার মত নই যে নিজের আপনজনদের অপমান মুখ বুজে দেখব | ভাইয়া আপনি কথা বলতে চান তো টুকুনকে নিয়ে, বলুন |"
তওসিফ ঝোঁকের বসে করে ফেলা অদ্ভুত আচরণে নিজেই হতভম্ব হয়ে বলল, "আমি.....আমি স্যরি আলিজা |"
এরিক স্ত্রীর হাতটা শক্তকরে ধরে বলল, "চলো | এক মুহূর্তও আর এর সামনে আমি দাঁড়াতে দেবোনা তোমাকে |"
আলিজা নরমস্বরে এরিককে বলল, "এরিক একটু দাঁড়াও |"
আলিজা তওসিফকে উদ্দেশ্যকরে বলল, "ভাইয়া টুকুনকে এখন আপনাকে সামলাতে হবে | আপনার সন্তান এখন সম্পূর্ণই আপনার দায়িত্ব | ভাইয়া আপনি আমাকে নিয়ে এসব আর চিন্তাও করেন কিকরে ! ভাইয়া আপনি ওকে কাউন্সিলিং করান, কোন থেরাপিস্টকে দেখান | ও এমন কেন হয়েছে জানেন ? আমি হলফ করে বলতে পারব যে আপনি এখন তো থাক, এমনকি যখন নাবিলার সঙ্গে ছিলেন তখনও হয়ত ওকে কেউ সময় দেননি আপনারা দুজনের কেউই | দুজনেই অধিকাংশ সময় নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থেকে যখন ঘরে ফিরেছেন তখন ওর কথা আবদার এসব শোনার মত ধৈর্য্য আর ইচ্ছা কিছুই ছিলোনা আপনাদের | তখন ওর কিছুক্ষনের খুনসুটিতেই বিরক্ত হয়েছেন আপনারা আর তখন ওর মুখ বন্ধ করতে কি ওর ধ্যান অন্যদিকে করতে আপনারা ওর ইচ্ছামত আবদার পূরণ করেছেন | যখন যা চায় দিয়েছেন | এটাকে ও আপনাদের বিরুদ্ধেই এখন ব্যবহার করবে সেটাই স্বাভাবিক |"
তওসিফ সম্মতহয়ে বলল, "সত্যি | তাই হয়েছে |"
"এরকম অদ্ভুত ধারণা করে রেখেছেন আপনি যে ওর জীবনে একজন 'মা' এলেই সব ঠিক হবে ! এটা ভুল ধারণা | আপনি ওকে সময় দিন | ওকে বোঝান, ওর ভুলগুলো ওকে দিয়েই শোধরান |"
তওসিফ ব্যস্তভাবে বলল, "দেখেছো আলিজা এই ব্যাপারগুলো কত ভালো জানো তুমি | এজন্যই তোমার প্রতিই আশা করছিলাম আমি |''
তাদের কথার মাঝখানেই এইব্রাহাম এরিককে দেখে দৌড়ে এলো | এরিক হাসিমুখে ছেলেকে একহাতে আগলে কোলে তুলে নিলো |
আলিজা এইব্রাহামের গালে একটা চুমু দিয়ে বলল, "মনে পড়ল ড্যাড্ডাকে ?"
এরিকও হেসে ছেলের গালে চুমু দিয়ে আলিজার ঠোঁটের উপর আলতোকরে একটা চুমু বসিয়ে দিলো | তওসিফ বিস্মিতচোখে চেয়ে রইল তাদের দিকে |
আলিজা এরিকের হাতটা জড়িয়ে ধরে তওসিফের দিকে চেয়ে বলল, "ভাইয়া আমার পরিবার আমার পৃথিবী | আমি আমার স্বামীকে প্রচন্ড ভালোবাসি আর আমার সন্তানেরা আমার সবকিছু | আমার সব ভালোবাসা আর আমি শুধু ওদের জন্য |"
এরিক আলিজার মুখের দিকে চেয়ে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল, "চলো সুইটহার্ট | এলান অপেক্ষা করে আছে |"
আলিজা তওসিফের দিকে চেয়ে একটু হেসে এরিকের সাথে এগিয়ে চলে গেল |
.
.
.
মাহিরার বাবা মোস্তাকিম মাহফুজ আজ এসেছেন | তিনি এসেছেন তার বর্তমান বান্ধবী সুজানাকে নিয়ে | সুজানার আসল নাম সুমি আক্তার | বয়স একত্রিশ কিন্তু গত তিনবছর যাবৎ তা তেইশ (!) এবং আগামী তিনবছরেও তা হয়ত তেইশই থাকবে | সুজানা সুন্দরী এবং ফর্সা | বর্তমানে সে বেশ কয়েকটি নাটক, টেলিফিল্ম, বিজ্ঞাপনচিত্র আর দুটি ফ্যাশন হাউজের মডেলিং করেছে | তাছাড়া মোস্তাকিমের প্রযোজিত একটি ছবিতে সে অভিনয় করছে জানিয়ে সে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্ত্যব্য দিয়েছে | ছবিটির নাম 'প্রেম করে পাগল' বা 'পাগল করে প্রেম' ধরনের কিছু একটা |
সুজানার সঙ্গে মোস্তাকিমের সম্পর্ক প্রায় চার বছর | সুজানার আরো দুজন এরকম 'সুগার ড্যাডি' আছে | কিন্তু মোস্তাকিম সবচেয়ে সেরা তবে সে অত্যন্ত বদরাগী | এই যেমন সুজানার আরেকজন পোষক আছে শুনে পরশুর আগের রাতে সে বেধড়ক মারধর করেছে সুজানাকে | মোস্তাকিমকে ছেড়ে যেতে তার সুগার গার্লরা খুবই ভয় পায় কারন তিনি নিজে ইচ্ছায় ত্যাগ না করলে যদি কেউ চলে যেতে চায় তো তিনি তাদের জীবন অসাধ্য করে তোলেন | তিনি মেয়ে বদল করাটা পোশাক বদলের মত আনুষঙ্গিক ভাবেন |
আজ মোস্তাকিম পার্টিতে অংশগ্রহণ করবেন না এ ঠিক ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত | কিন্তু কেন যেন আসার সিদ্বান্ত নিলেন | সুজানার ইচ্ছা ছিল আজকে ওয়েস্টিনের বিজনেস ডিনারে যাবার কিন্তু শেষমুহূর্তে মোস্তাকিম মত বদলালেন বলে তাকে এখানে আসতে হল |
সুজানা তাও একবার বলেছিল, "গিয়ে হবে টা কি ! বোরিং পার্টি !"
মোস্তাকিম জবাবে বললেন, "তুইও তো বোরিং ! তোর আছেই কি ? গায়ের গোরা চামড়া আর ম্যাচের কাঠির মত বডি ! মেকাপ ছাড়া তোর চেহারা দেখলে কুকুরেও কান্না জুড়বে !"
সুজানা বিব্রতহয়ে বলল, "না মানে কেন যাবে তাই |"
"ইচ্ছা হল তাই যাবো | কেন আবার কি ? তুই কেন জিজ্ঞাসা করিস কোন সাহসে ? বলিস গিয়ে হবেটা কি ? তোকে যে খাওয়াই, পড়াই, টিকেটভাড়া দিয়ে বিদেশ নিয়ে যাই, এই ডায়মন্ড কিনে দেই এতে আমার কি ? সেক্স ? এই তো বলবি ? সেতো একশটাকা দিলে রাস্তার ধান্দাওয়ালীরাও দেয় |"
সুজানা কেঁদে ফেলে বলল, "তুমি কেন এসব বলো আমাকে সবসময় ? এতো খারাপ কথা কেন বলো ?"
"খারাপ ? তোদের আবার খারাপ বলে আছে নাকি কিছু ? আরে ভাড়াখাটা মেয়েরা শরীর বেঁচে পেটের দায়ে ! তোরা তো এসব করিস লোভে ! তো ?"
সুজানা হুংকার করে বলল, "আমি নেমে যাব | গাড়ি থামাও |"
মোস্তাকিম একটা দশাসই থাপ্পড় সুজানার গালে বসিয়ে বললেন, "এক্কেরে চুপ ! একটুও তেড়িবেড়ি করবি তো এমন জায়গায় নামাবো যে উঠা তো দূরে থাক, নিঃশ্বাস নেবার জায়গা পাবিনা !"
.
.
মোস্তাকিম হলে ঢুকেই বললেন, "এত্ত গরম এখানে ! এমন জায়গায় কেন পার্টি হচ্ছে ?"
একবার করে কিছু লোকজন ফিরে তাকালেও কেউই তেমন কোন পাত্তা দিলোনা | কারন অনেক অতিথিই তখন চলে গিয়েছে আর যারা এখনও আছেন তাদের অনেকেই চেনেন না মোস্তাকিমকে |
মোস্তাকিম ওয়েটারের কাছে থাকা দুটো ভডকা ককটেল প্রায় চুমুকে শেষ করে রুক্ষভাবে বললেন, "হোয়ার আর দা রকস ? গেট মি এ হার্ড |"
ওয়েটার তার কথা কিছু না বুঝে বলল, "স্যার তিনটা ককটেল লিমিট পার গেস্ট | আরেকটা এনে দিবো স্যার ?"
মোস্তাকিম খিটখিটে কন্ঠে বললেন, "নো ককটেল ! ওসব ছেলেমানুষি জলপানি আমার চলবেনা | আর কি আছে ?"
"স্যার ...."
মোস্তাকিম প্রায় ধমকে বললেন, "গো ! গো ব্রিইং এ সলিড লিকার !"
ওয়েটার বুঝতে পারছেনা সে যাবে কিনা কারন অর্ডার যে দিচ্ছেন তিনি বেশ টলমলে অবস্থায় রয়েছেন |
মোস্তাকিম আঙ্গুল তুলে বললেন, "মূর্তির মত দাঁড়িয়ে কেন ? কথা শুনছোনা ? যাও ! জানো আমি কে ?"
একটা তীক্ষ্ণ নারীকন্ঠ জবাব দিলো, "ওয়ান অবসেসড ড্রাঙ্ক গাই ! ( একজন আসক্ত মদ্যপ )"
মোস্তাকিম ঘুরে তাকিয়ে দেখলেন লাল বেনারসি পরনে একজন রূপবতী যুবতী চোখে সূক্ষ্মদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে তার দিকে |
মোস্তাকিমকে সামান্য পরোয়া করলনা সে | এগিয়ে এসে সে ওয়েটারকে বলল, "উনাকে একটা 'কেনেডিয়ান ক্লাব ক্লাসিক' এনে দিন | নীট |"
ওয়েটার যেতে মেয়েটি মোস্তাকিমের দিকে ফিরে বলল, "গেস দ্যাটস হার্ড ইনাফ ? ( যথেষ্ট কড়া আশাকরি )"
মোস্তাকিম জড়ানকন্ঠে বললেন, "ইউ আর রুড ! বাট গুড চয়েজ | বাট ডোন্ট ট্রাই দ্যাট ইউ আর এ চাইল্ড | ( তুমি রুক্ষ ! তবে তোমার পছন্দ ভালো | তবে তুমি ওটা নিও না তুমি এখনও ছেলেমানুষ )"
"আমি পানাসক্ত নই |"
"ইউ আর গুড !"
"ইউ ক্যান গ্রাইন্ড ইওর একস সাময়্যার এলস ! নট এ পিকআপ ফর এ সুগার ড্যাড ! ( আপনার প্ৰচেষ্টা অন্যকোনখানে চালান ! আমি কোন পোষকের জন্য নই )"
মোস্তাকিম হেসে বললেন, "আমি কিন্তু তোমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছি |"
"আর আমি আপনাকে বোধহয় এর চেয়ে বেশি ঘৃণা করতে পারব না |"
"ইউ আর রুড ! ( তুমি রুক্ষভাষী )"
"আই নো | এন্ড ইউ আর এন অবনক্সাস এলকোহলিক | ( আমি জানি | আর আপনি একটা জঘন্য মদ্যপ )"
"ক্যান ইউ সেই ইট উইথ আ লিটল সুগারকোটিং ? ( কথাগুলো একটু মিষ্টি করে বলো )"
"ডু আই লুক লাইক আ কনফেকশনার টু ইউ হু ক্যারিজ আ আইসিং সুগার জার ? ড্রপ ইট ওল্ড ফেলা ! আই উইল কনভয় দা নিউজ দ্যাট ইউ স্টপড বাই | নাও ফাইন্ড ইওরসেল্ফ আউটা হিয়ার | ( আমাকে দেখে কি মিহিচিনি হাতে নিয়ে ময়রা মনে হচ্ছে ? এসব বন্ধ করুন মুরুব্বী ! আমি জানিয়ে দেব যে আপনি এসেছিলেন | এখন এখন থেকে যাবার পথ দেখুন )"
মোস্তাকিম এই মেয়ের তেজ দেখে হতবাক হচ্ছেন | তারমত ব্যক্তিকে তোয়াক্কাই করছেনা |
মোস্তাকিম কোন শিকারের প্রতি লুব্ধ হলে কখনোই ছাড় দেননা | তিনি রুক্ষভাষ্যে বললেন, "ওহ ! তো তুমি সুন্দরকরে কথা বলবেনা আমার সাথে |"
"সেটা আপনার প্রাপ্য নয় |"
"আই ক্যান মেক ইউ সুইটটক !"
মেয়েটি বিশেষভাবে হেসে বলল, "তাই ? কিভাবে ? বাই হুক ওর করুক ( সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকা করে )?"
মোস্তাকিম তার কোটটা একপাশে সরিয়ে বললেন, "যারা মিষ্টিভাবে কথা বলতে জানেনা তাদের জন্য আমি ব্যবস্থা রাখি |"
মোস্তাকিমের কোমরে একটা হ্যান্ডগান গুঁজে রাখা |
মেয়েটি ঠোঁটউল্টে বলল, "ওয়াও ! কোয়াইট আ টয় ! ( বাহ্ ! দারুন খেলনা )"
মোস্তাকিম বললেন, "খেলনার জোর টের পাবে | এর শক্তি কি তুমি জানোনা সুইটি !"
মেয়েটি দ্রুত বলল, "ওহ না না ! আমি অবশ্যই জানি |"
"জানো মানে ?"
"ইটস আ ট্যারাস পিটি থ্রিএইট ! পয়েন্ট থার্টিএইট সুপার সেমাই অটোমেটিক | ফর পয়েন্ট টু ফাইভ ব্যারেল, টেন রাউন্ড, থ্রি পজিশন, সিঙ্গেল/ডবল |"
মোস্তাকিম প্রায় চমকে গেলেন | বললেন, "তুমি এর সম্পর্কে কিকরে জানো ? তুমি কি আইন কর্মকর্তা ? শোন এর লাইসেন্স আমার কোনদিনই দরকার হবে না |"
"আমি আইন কর্মকর্তা না |"
মোস্তাকিম প্রায় দাঁতেদাঁত পিষে বললেন, "এটা কোন সাধারণ পিস্তল না | এর ক্ষমতা জানো ?"
"আমি একটা থার্টিএইট ক্যালিবারের হ্যান্ডগানের ক্ষমতা খুবই ভালো জানি | আমি 'এনআরএ'-তে রয়েছি এখন ( NRA – National Riffeles Association of America ) | এই হ্যান্ডগান আমি তোমার চেয়ে ভালো চালাতে আর ডিস্প্যাচ ( খন্ডকরন ) করতে জানি | আর আমার ঘরে দুজন স্পেশাল মিলিটারি অফিসার রয়েছে তাই আমি 'এমো' ( আগ্নেয়াস্ত্র ) চিনি | এমনকি আমার নিজের একটা 'গ্লক ১৯' আর একটা 'রুগার এলসিআর' রয়েছে | আই এম এন রেজিস্টার্ড গান ওনার ( আমি একজন নিবন্ধিত অগ্নেয়াস্ত্রধারী ) | আমার স্বামীর সঙ্গে আমার বিয়ের আটমাসের মাথায় উনি আমাকে রিভলভার চালানো সেখান আর এনআরএ-তে ভর্তি করান | আর আমার স্বামীর সংগ্রহে ছয়টা আর আমার শশুরের সংগ্রহে পাঁচটা সেমি-অটোমেটিক আর একটা রিভলভার আছে | আর দুজনের সংগ্রহেই একটাকরে এম৪ আর এআর১৫ রাইফেল রয়েছে | যদিও এম৪ সবার কাছে থাকাটা লিগ্যাল নয় কিন্তু উনাদের জন্য ভ্যালিড | তো আরকিছু ? খেলনা নিয়ে ?"
মোস্তাকিম দেখলেন একজন সুপুরুষ মধ্যবয়স্ক যুবক দ্রুত এগিয়ে এসে দাঁড়ালো মেয়েটির পাশে | সেই মধ্যবয়স্ক যুবক মেয়েটির হাতটা ধরে বলল, "আলিজা ? কি হয়েছে ? তুই এমন রেগে গিয়েছিস কেন ? আর ইনি ? কে ইনি ?"
যুবকটি মোস্তাকিমের দিকে তাকাতে মেয়েটি বলল, "ভাইয়া ইনি তোর শশুড়সাহেব | ইনি মাহিরা ভাবীর বাপি |"
আইলান চমকে তাকিয়ে বলল, "উনি ? মানে উনিই মাহির বাবা ?"
আইলান দ্রুত সালাম করে বলল, "কখন এসেছেন ? কেমন আছেন আপনি ?"
মোস্তাকিম ঘটনার আকস্মিকতায় এতটাই আশ্চর্যান্বিত যে তিনি নির্বাক হয়ে গেলেন প্রায় | আইলান মোস্তাকিমকে দেখে আরেকদফা চমকালো কারন তখনও তার কোমরে হ্যান্ডগানটা দেখা যাচ্ছে |
আলিজা একটু হেসে বলল, "হ্যা ওটা আসল কিন্তু ভয়ের কিছু নেই ভাইয়া | উনি এখন ওটা চালাবেননা |"
আইলান হতবিস্মিত হয়ে বলল, "কিন্তু উনি পার্টিতে 'গান' কেন এনেছেন ?"
"উনি ওটা নিয়েই ঘোরেন বোধহয় | আর উনি ওটা তোর জন্য নয়, আমার প্রতি প্রদর্শন করেছেন |"
"মানে ?"
"উনি মনে হচ্ছে উনার বর্তমান "সুগার গার্ল"-টা বদল করতে চাচ্ছেন | এজন্যই যখন শুধু কথায় আমি উনাকে আমার 'সুগার ড্যাডি' মানার ব্যক্তি নই তো ক্ষমতা প্রদর্শন | ইটস ওকে ভাইয়া | উই আর গুড এন্ড মেড আ ট্রুস ( আমরা ঠিক আছি আর বিরতি নিয়ে নিচ্ছি )"
এতবড় লজ্জায় জীবনে কোনদিন পড়েছেন বলে মনে করতে পারলেন না | এই কিছুসময় আগে তিনি তার কন্যাজামাতার ছোটবোনকে একটা কুইঙ্গিতপূর্ন প্রস্তাব দিয়েছেন ! ছি ছি ! কি লজ্জা !
আইলান হতভম্ব চোখে তার স্ত্রীর বাবার দিকে চেয়ে বলল, "সত্যিই কি তাই ?"
আলিজা বলল, "ভাইয়া ! ওয়াক পাস ইট | ( প্রসঙ্গটা এড়াতে হবে )"
মোস্তাকিম চুপ করে রইলেন |
আলিজা মোস্তাকিমকে বলল, "আপনি বোধহয় আপনার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছেন | একটু অপেক্ষা করুন |"
আলিজা ওয়েটারের কাছ থেকে একগ্লাস লেমোনেড নিয়ে বলল, "এটা খেয়ে নিন |"
মোস্তাকিম নাক সিটকে বলল, "অবশ্যই নয় |"
আলিজা গ্লাসটা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে কড়াস্বরে বলল, "খেতেই হবে | আপনি সাতবছর পর মেয়ের সাথে দেখা করতে এসেছেন | এইরকম মাতাল টলমলে অবস্থায় আপনার অন্তঃসত্বা মেয়ের সামনে যেতে আপনার হয়ত লজ্জা করবেনা কিন্তু আপনার মেয়ে মাহিরা তার বাবার দুরাবস্থায় লজ্জায় মাটিতে মিশে যাবে |"
মোস্তাকিম ক্রুদ্ধভাবে বললেন, "তোমার স্পর্ধা কতটা ? তুমি একথা বলছো আমাকে ?"
"আপনার স্পর্ধাটা দেখেই বোধহয় স্পর্ধা করার সাহস হল আমারও | ইউ আর আ মিজারেবল ফাদার ( আপনি একটা শোচনীয় পিতা ) | আপনি সারাজীবন নিজেকে আর নিজের সুখকে মূল্য দিয়েছেন আর সন্তানদেরও নিজেরমতোই করে গড়েছেন | কিন্তু 'দৈত্যকূলের প্রহ্লাদ'-এর মত আপনার মত একটা মানুষের ঔরসে মাহিরার মত একটা মেয়ে জন্মেছে | এটা আল্লাহর আশীর্বাদ আর আপনাকে অনেকটা আয়না দেখানো যে আপনি যা কোনদিন পারেননি তা আপনার মেয়ে করেছে |"
মোস্তাকিম কিযেন বলতে গেল কিন্তু আলিজা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, "তো আমি অনুরোধ করব আপনাকে | সো ওয়ান্স ইন ইউর লাইফ বি আ ম্যান আপ এন্ড পুল সাম গাটস টুগেদার টু শো ইওরসেল্ফ এজ আ ফাদার টু দ্যাট ডটার হু স্টিল রেস্পেক্টস ইউ ইভেন নোয়িং দ্যাট ইউ আর আ মনস্টার ( তো জীবনে অন্তত একবারের জন্য হলেও নিজের সব সাহসিকতা এক করে একজন মানুষের মত আচরণ করুন আর পিতার ভূমিকায় আসুন সেই মেয়েটার সামনে যে জানে যে আপনি একটা দানব কিন্তু এরপরেও সে আপনাকে সম্মান করে ) |"
মোস্তাকিম বোবার মত চেয়ে রইলেন এই অসম সাহসী মেয়েটির দিকে |
আলিজা আইলানের হাতটা ধরে বলল, "চল তো ভাইয়া | এনার কাছে এতটা আশা করাটা হাস্যকর |"
আলিজা কিছুদূর গিয়ে ঘুরে তাকিয়ে বলল, "আর ওই ট্যারাস পি৩৮-টা চালানোর কথা এখন চিন্তাও করবেন না | কারন ওটার জন্য কতটা হাত আর কাঁধের শক্তি আর দৃঢ়তা জানেন তো সেটা নিশ্চই ! আপনি বরং আরেকটা হার্ডলিকার নেন | কানাডিয়ান ক্লাবস অন দা হাউজ !"
আলিজা যেতে যেতে বলল, "স্যরি ভাইয়া এভাবে তোর শশুরকে কথা শোনানো ঠিক হয়নি আমার | কিন্তু উনি মানুষই এমন যে আমি বাধ্য হলাম |"
আইলান গম্ভীরমুখে বলল, "ঠিক কাজ করেছিস | আলিজা একটা কথা | উনি যে তোকে এসব বলেছিল সেগুলো প্লিজ মাহিরাকে বলিস না |"
"পাগল তুই ! ভাবীকে এসবের মাঝে কখনোই টানবিনা তুই | আর আমার মনে হয় উনাকে আজ না জানানোই ভালো যে উনার বাবা এসেছিল | কারন এতটা খুশির মুহূর্তে বাপের এমন চেহারা দেখলে উনার মনটা ভেঙে যাবে |"
"না রে বলবোনা |"
.
.
.
মেহমানরা প্রায় সবাই চলে যাবার পর আইলান এবার সবাইকে নিয়ে খেতে বসল | দুটো টেবিল একত্র করে নিয়ে খেতে বসেছে সবাই | ফাহমিদার বাড়ির কিছু লোকজন এখনও রয়ে গিয়েছে যারা সাথে বসেছে |
এরিক মুখ গম্ভীর করে রেখেছ একটু কারন কিছুক্ষন আগেই ফাহিমার ছোটছেলে মন্টি আর তার দুজন বন্ধু বেশ কুৎসিত কিছু কথা বলেছে আলিজাকে | এরিক সবার সামনে হল্লা করেনি কিন্তু সে মনে পণ করে রেখেছে যে খাবার শেষ হবার পরেই সে মন্টিকে শায়েস্তা করবে | এরিক এই জঘন্য স্বভাবের ছেলেটিকে কখনোই পছন্দ করেনা | এর কথাবার্তা জঘন্য আর আচরণ অশালীন | মন্টির চেয়ে মন্টির বৌটা বেশি জঘন্য আচরণের দিক থেকে | এজন্যই এদের ব্যবহারে এরিক অস্তুষ্ট | সে নিজের অসন্তুষ্টি নিজের মধ্যে চেপে রেখেছিল কিন্তু হঠাৎই আজ মন্টি সবার সামনে আলিজাকে একটা খারাপ কথা বলে বসল যা অনেকটা এমন "তুমি তো ভেগে আমেরিকা গিয়ে এই ব্যাটার সাথে বিয়ে বসছো ! বিয়ের আগেই মজা লুটে নিয়েছো ! তোমার আবার এত কথা কিসের !"
এরিক কখনই এলিজার চরিত্র নিয়ে কেউ কোন কথা বললে তা সহ্য করেনা | আজকে একথা শুনে আইলানই খেপে গিয়েছিল | কিন্তু এরিক কিছু বললনা দেখে আইলান বিস্মিত হল |
এরিক আইলানকে থামিয়ে দিয়ে শুধু এটাই বলল আইলানকে "আমার রক্তে জ্বালা ধরে গিয়েছে | ওকে এত সাধারণ শাস্তি দেবনা আমি |"