আজ পেইং হাউজে ফিরে একটা ঝটকা খেলো আনোয়ার | তার মালপত্র সব লবিতে জমা করা, তার রুমে অন্য একজন ট্যানেন্ট |
একি কান্ড !
আনোয়ার অনেক বুঝিয়েও নিজের সংস্থান করতে পারলোনা সেখানে | তাদের এক কথা তোমার মেয়াদ শেষ, দুটো নোটিস দিয়েছি, তুমি যাওনি, কিছুই করার নেই, এখন বের হও !
আনোয়ার হতভম্ব হয়ে বলল, "এখন রাত সাড়ে এগারোটা | এখন কই যাবো আমি ?"
পেইং হাউজ সুপার বলল, "ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিচের দিকে চলে যাও | অনেকগুলো সস্তা হোটেল আছে আর সেখানে ঠাঁই না পেলে বিচ সাইড রোডে চলে যেও |"
আনোয়ার অবাক হয়ে বলল, "ওখানে কি ?"
"ওখানে অনেক হোমলেস ( গৃহহীন ) লোকজন রাস্তায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে | তাদের কারো পাশে শুয়ে পড়োও |"
মহিলার কথায় বিস্মিত হয়ে আনোয়ার বলল, "তুমি আমার সাথে এমন একটা সময়ে রসিকতা করছো ?"
মহিলা হাই তুলতে তুলতে বলল, "মি এনভার আমি মোটেও রসিক মানুষ নোই | তিনটা স্বামীকে সহ্য করে আর চারটে বদমাইশ বাচ্চা পেলে আমার জীবনের সব রসিকতা শেষ | এখন তুমি যেতে পারো |"
আনোয়ার বাইরে এসে বাবলুকে ফোন করল |
বাবলু বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিল, সে ঘুমজড়ানো গলায় ফোন ধরে বলল, "কি ব্যাপার আনোয়ার ভাই এতো রাতে ?''
"ইয়ে বাবলু একটা ঝামেলা হইসে |"
"কি ভাই ?"
"আমার নাকি পেইং হাউজের মেয়াদ শেষ |''
"আমি কেমনে বলবো ভাই ! আমি তো ডর্মেট |"
"মানে আজ ফিরে দেখি আমার মালপত্র বের করে দিসে !"
"ওরা তো নোটিস দেয় |"
"দিসিলো আমি ভাবসি নোটিসের সাধারণত একমাস মেয়াদ তাই কিছু বলিনি |"
"তো এখন কি করবেন ?"
"ইয়ে আমার তো কোন যাবার জায়গা নেই এখন | তো যদি তোমার কাসে আজ রাতটা থাকা যেত | দ্যাখোনা হয় কিনা ?"
"আপ্নে পাগল আনোয়ার ভাই ! এইটা কি পুরানঢাকার ম্যাস বাড়ি যে না সে ঢুকে যাবে ! আর আমার রুমমেটটা কি জানেন তো | ও আমারে ঘুষায়ে মেরে ফেলবে | ভাই কোন মোটেলে চলে যান |"
বাবলু ফোন দেখে দিল |
আনোয়ার হতবাক হয়ে রাস্তায় বসে রইল |
সকালে আলিজা নাস্তা করতে বসে দেখল, আনোয়ার এদিকেই আসছে | আলিজা কিছু না বলে খেতে লাগল | তার আটটার মধ্যে ল্যাবে যেতে হবে | ড. মারলেই একেবারে যাকে বলে পারফেক্ট আমেরিকান পাঞ্চুয়ালিটি ( পূর্নরকম সময়ানুবর্তিক ) |
আলিজার পাশে বসে আনোয়ার বলল, "আজকে তোমাকে সরাসরি একটা কথা বলি |"
আলিজা কোন জবাব দিল না | সে তার স্যান্ডউইচ শেষ করায় মন দিল |
আনোয়ার ইতস্তত করে বলল, "আমি ভাবসি যে তোমার যেহেতু রেস্পন্স আসেই আমার প্রতি তো একটা সিদ্ধান্ত নেই আমরা কি বল ?"
আলিজা জুসটা শেষ করে উঠে যেতে গেল, আনোয়ার খপ করে তার হাতটা ধরে বলল, "এত দেমাগ কিসের হ্যা ? এত নখরা কেন ? পড়তো ভিক্ষার টাকায় ! এই স্কলারশিপের মানে বুঝো ? এগুলো হল দয়া ! চ্যারিটি পোলাপানের এত তামসা কেন ?"
আলিজার প্রাক্তন স্টুডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ দ্রুত এগিয়ে এসে বলল, "এই আনোয়ার ভাই কি করেন ? থামেন ! থামেন !"
আনোয়ার খেপে উঠে বলল, "কেন ? আজকে এর গরম বাইর করবো আমি ! দেখি কি করতে পারে এ !"
আনোয়ার তাকানোর আগেই আলিজা ব্লেকের কফিটা নিয়ে আনোয়ারের চেহারায় ছিটিয়ে দিয়ে বলল, "অনেক সহ্য করেছি ! আর না !"
আলিজা তার ট্রেটা দিয়ে আনোয়ারের মাথায় একটা বাড়ি মেরে বলল, "ইতর যেখানেই থাকুক সে ইতর ! যত ডিগ্রীই তার থাকুকনা কেন সে ইতর !"
আলিজা বেরিয়ে চলে গেল |
আলিজার পিছনে যেতে গিয়ে সে দেখল সেখানে মার্জ দাঁড়িয়ে |
ব্লেক এগিয়ে যেতে গেলে মার্জ তাকে থামিয়ে বলল, "আ গট দিজ শিটহেড ( আমি দেখছি এই বদকে ) !"
মার্জ এগিয়ে এসে একটা ধাক্কা মেরে আনোয়ারকে বলল, "তুই আমাকে কালো জলহস্তী বলেছিস তাইনা ? আজ তোকে জলহস্তীর জোর দেখাবো !"
বিশমিনিট পর আনোয়ারকে কলার ধরে ময়লার বাক্সে ফেলে দিয়ে এল কয়েকজন মিলে |
কোনরকমে সাফসুতরো হয়ে এসে সে অভিযোগ দিতে গেল | আশ্চর্য ! কেউ কিছুই দেখেনি ! কোন প্রমাণাদি নেই এই ঘটনার |
আজ আরো অনেক বিপদই অপেক্ষা করছিল আনোয়ারের জন্য | তার কার্ড পাঞ্চ হচ্ছে না | সে কনফারেন্স রুমে যেতে পারল না | ধীরে ধীরে সে আবিস্কার করল যে তার স্টুডেন্ট কার্ড আর ক্রেডিটকার্ড কাজ করছে না |
আনোয়ার বাবলুকে বলতে সে বলল, "ভাই এত সাবধান করলাম কিন্তু কানে নিলেন না ! আপনি সিংহের মুখে হাত দিসেন ! এখন বুঝেন ! ড. মারলেই এর ক্ষমতা যে কি টের পাবেন !"
আধঘন্টা সময় পর দুজন তাগড়া লোক এসে তাকে ডেকে নিয়ে গেল |
আনোয়ার ইউনিভার্সিটি রেগুলেটরি কমিটিতে বসে আছে | তার সামনে বসা এই রুগ্ণ বৃদ্ধের বক্তব্য মোতাবেক আনোয়ারকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে এই ক্যাম্পাসে | সে আজ মদ্যপ অবস্থায় হল্লা করেছে | এমনকিছু এখানে মেনে নেয়া অসম্ভব ! তার কোনরকম ব্যাখ্যা যুক্তি কিছুই শুনলনা কেউ ! তাকে তার এসিস্টেন্টশিপ পেমেন্ট ফিরিয়ে দিয়ে বের করে দেয়া হল |
মজার কথা হল কোন কারণবশত সে রিচমন্ডের কোন মোটেলে চেকইন করতে পারল না | সে যেখানেই গেল, শুনল নেই | বাধ্য হয়ে ভার্জিনিয়া স্টেট্ ইউনিভার্সিটিতে এলো | এখানে সে আগেও এসেছে একাধিক কনফারেন্সে | কিন্তু তার জায়গা হলনা পেইং হাউজে | তাকে জানিয়ে দেয়া হল, কোন অফেন্ডারকে ( অপরাধী ) রুম দেয়া হয়না |