পর্ব ৪২

706 22 4
                                    

এরিক একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, "লিজ আমার স্কুল ড্রামা, ফুটবল নাইট, বেসবল গেম, সকার ডে, প্রমোশন স্পিচ এমনকি পিটিএ মিটিং-এও মম কখনোই আসেনি | শী ওয়াজ আইদার ড্রিংকিং অর ডুইং এ ক্যাচ অব হারস ( সে হয় মদ খাচ্ছিলো বা তার কোন প্রেমিকের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলো ) |"
আলিজা এরিকের বুকের উপর হাতটা রেখে বলল, "এরিক তুমি কখনোই এসব কথা বলোনি আমাকে | তুমি শুধু বলেছিলে যে তোমার বাবার সাথে উনার সম্পর্ক ভালো ছিলোনা |"
"বলিনি কারন তুমি হয়ত ভুল বুঝতে |"
"এরিক আমি কখনোই তোমাকে ভুল বুঝিনি |"
"জানি | কিন্তু লিজ তার সম্পর্কে জানলে তোমার এটাই মনে হত যে তার সন্তান আমি কাজেই তার চরিত্রের প্রভাব অবশ্যই আমার উপর আছে |"
"এরিক, এরকম কোনকিছুই কখনোই আমি চিন্তা করিনি আর কোনদিন করবোও না |"
এরিক কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল আলিজার দিকে |
আলিজা একটু অবাক হয়ে বলল, "কি এরিক ?"
"কিছুনা লিজ |"
"বলো |"
এরিক আলিজার দিকে চেয়ে থেকে বলল, "লিজ আমার মা বারবার এককথাই বলত | সে বলত "আমি একাকী আর আর করুন অবস্থায় থাকি সবসময় | কারন আমার একাকিত্ব আমাকে খুব কষ্ট দেয় |" লিজ বাবার প্রচন্ড ভালোবাসা আর এতগুলো সুন্দর বাচ্চাদের সঙ্গ থাকা সত্বেও মম এই একই বাহানা করে যেত তার প্রতিটা ভুলের জন্য | লিজ আমার মা বাবার সাথে বিবাহিত থাকা অবস্থায় অন্তত চারজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল যার মধ্যে দুজনের সঙ্গে সে ইলিজিমেট এফেয়ারে ( অবৈধ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ) জড়িয়ে পড়েছিল | যার জন্য প্রথমবার ড্যাড ক্ষমা করে দিয়েছিল মমকে | কিন্তু পরে রবার্টের জন্মের পর মম কিছুদিন পর আবার একজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় | ড্যাড তাকে হাতেনাতে ধরে ফেললেও কিছুই করতে পারেনি কারন রবার্ট তখন দেড়বছরের অবোধ শিশু আর আমি চারবছরের একটা বাচ্চা | আমার বাবার লইয়ার তখন তাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলল | এর দুইবছর পর ড্যাড আর মা সেপারেশন নেয় | পরে অবশ্য ড্যাড আবার সংসারে ফিরেছিল | কিন্তু মম ! লিজ বলতে ঘৃণা হয় আমার একথা |"
"এরিক !"
"লিজ শী ওয়াজ এ ট্রাম্প | ( সে একজন দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোক ) |"
আলিজা এরিকের গালে হাত রেখে বলল, "ছি এরিক এসব বলো না | যাই হোক না কেন সে মা তোমার |"
"সেটাই তো সবচেয়ে বড় দুঃখ |"
"এরিক এসব আলোচনা থাক এখন | তুমি কিছুক্ষন বিশ্রাম করো |"
আলিজা লক্ষ করল এরিকের চোখে পানি ছলছল করছে |
এরিক বলল, " লিজ চ্যাস মারা যাবার পর আমরা ভাইবোনেরা বিশেষ করে আমি সম্পূর্ণ একা বড় হয়েছি | একাই নিজের খেয়াল নিতে শিখেছি, নিজেকে সামলাতে শিখেছি | কারন মম সবসময় তার সারক্যাস্টিক লোনলিনেস ( রঙ্গপূর্ণ একাকিত্ব ) দূর করতে নতুন সম্পর্ক নিয়ে ব্যস্ত ছিল ! লিজ আমাকে দেখেছো তুমি আর জানোও | তোমার কাছে আমার লুকানোর কিছুই নেই | আমি অনেকের সাথেই সম্পক গড়েছিলাম একসময় | কিন্তু আমার মা আর আমার ব্যাপারটা ভিন্ন | আই ডিড দ্যাট কজ আই ফিল টু হ্যাভ সো বাট শী ............শী ওয়াজ লাইক দ্যাট বিকজ শী ওয়ান্টেড এন্ড মোস্টলি নীডেড ম্যান অর আই সে 'ম্যান্স' ইন হার লাইফ ( আমি সেসব করেছি কারন সেটা শুধুই আমার ইচ্ছাবসত কিন্তু সে.......সে ওরকম ছিল কারন তার জীবনের চাওয়া আর মূলত তার সবচেয়ে বড় প্রয়োজন পুরুষ বা আমার বলা উচিত 'পুরুষরা' ) |"
আলিজা এবার এরিকের মুখের উপর হাত চাপা দিয়ে বলল, "এরিক প্লিজ ! আর একটাও কথা নয় | এখন তুমি শান্ত হয়ে কিছুক্ষন আরাম করো |"
এরিক পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে বলল, "লিজ একটা অনুরোধ আমার |"
আলিজা দরদভরা কন্ঠে বলল, "কি এরিক ? বলো |"
"লিজ কখনোই আমার মা-কে দিয়ে আমাকে সাইকোএনালাইজ ( মনঃসমীক্ষাকরন ) করবে না | কখনোই না |"
"ঠিক আছে | কথা দিলাম |"
"লিজ ?"
"বলো |"
এরিক আবার চিৎ হয়ে শুয়ে আলিজার হাতটা ধরে বলল, "লিজ হয়ত এসব শুনতে তোমার বিচ্ছিরি লাগছে | কিন্তু আমার বলতে ইচ্ছা করছে |"
আলিজা এরিকের মাথায় হাতবুলিয়ে দিয়ে বলল, "যদি এই কষ্টকর অভিজ্ঞতাগুলো আর এসব কথার ভার আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করলে তোমার মন হালকা হয় তো সত্যিই সেটা করতে আমি চাই |"
"লিজ আমার সঙ্গে মেলিসার পরিচয়ের পর থেকে ও যেমন আমার সঙ্গে খুব যোগাযোগ রাখতে চাইত, প্রায় ফোন করত, দেখা করতে চাইত তখন জানো আমার মনে হল যে অবশেষে এমন কেউ এলো আমার জীবনে যে আমাকে ভরসা করবে, যে আমাকে নিয়ে ভাববে | এমন একজন ওকে মনে হয়েছিল যে আমার প্রতি মনোযোগ দেবে, আমাকে ভালোবাসবে | ও হয়ত চেষ্টা করেছিল কিন্তু সেটা অসৎ আর প্রচন্ড ত্রুটিপূর্ণ চেষ্টা | কিন্তু ও যখন ম্যাডিসনের জন্ম দিলো তখনই আমি সব ভুলে এই ভাবলাম যে নতুন করে শুরু হবে সব | এজন্যই ম্যাডিসনের জন্মের মাসখানেক আগেই আমি বিয়ে করতে চাইলাম ওকে কিন্তু মেলিসা বলল ও এখনই এর জন্য প্রস্তুত নয় | অবশ্য ম্যাডি জন্মাবার পরে মেলিসা রাজি হল | লিজ বিয়ের কয়েকমাস পরেই আমি ওর ব্যবহারেই বুঝতাম কিছু গলদ | কিন্তু যেদিন প্রথম আমি ফ্লাইং বেস থেকে ফেরার পরদিন দুপুরে আমাদের বস্টনের বাড়ির বিছানার নিচে একটা চেকার্ড মোজা পেলাম তখনই নিশ্চিত হলাম যে মেলিসা আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে | ওর কারো সঙ্গে এফেয়ার চলছে |"
আলিজা চুপ করে চেয়ে রইল এরিকের দিকে |
এরিক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "লিজ, এই কষ্টের কোন ব্যাখ্যা নেই | মানে ধোঁকা খাওয়ার চেয়েও বেশি এই ব্যাপারটাই আমাকে আঘাত করল যে, আমার মাকে আমি তার জঘন্য চরিত্রের জন্যই ঘেন্না করি আর আমার জীবনেই এমনটা হল যে ঠিক আমার মায়ের মত চরিত্রের একটা মেয়ের সাথেই আমার বিয়ে হল আর সে আমার সন্তানের মা | লিজ আমার সম্পূর্ণ দুনিয়া ওলটপালট হয়ে গেল এই ঘটনায় | কিন্তু ম্যাডিসনের কথা ভেবে আমি মেলিসাকে আবার সুযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু ও শোধরানোর মানুষ নয় | ও কতটা নোংরা চরিত্রের মানুষ তাতো দেখলেই তুমি ছয়বছর আগে |"
এরিক নিজের মনেই বলল, "অস আমাকে সবসময় বলত যে 'এরিক এতো যন্ত্রনা রেখোনা মনে | কারন রাগ তোমাকে জ্বালাই শুধু দেবে |' ও এটাও বলত 'এরিক একদিন ঈশ্বর তোমাকে এমন একজনকে মিলিয়ে দেবে যে একটা 'গার্ডিয়ান এঞ্জেল' হবে তোমার জন্য | তুমি যা চাও তাই পাবে তার মধ্যে |' লিজ অস কিন্তু তাই ছিল আমার জন্য |"
আলিজা অন্যমনস্কভাৱে চুপ করে চেয়ে রইল এরিকের দিকে |
এরিক আলিজার হাতটা নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে বলল, "লিজ তুমি শুধু আলাদা আমার জন্য | এজন্যই আমার সবসময়ই তোমাকে দরকার |"
আলিজা ফিরে চেয়ে একটু হাসল |
এরিক বলল, "আমাকে নিয়ে তোমার ভাবনা কতটা তা অনুভব করলাম যখন জানলাম যে আমাকে তুমি ওয়েস্টেড ( সুরার নেশাগ্রস্ত ) অবস্থায় পাবে ফেলে আসোনি আমি ট্রান্সদের হাতে এসল্টেড হতে পারি এই ভয়ে | এরপর আমার প্রতি তোমার ভরসা দেখলাম যখন তুমি পাম্পহাউজ পার্কে ওই মাগারদের ( লুটেরা/ছিনতাইকারী ) দেখে আমার হাতটা ধরে ভয়ভরা চোখে আমার দিকে তাকালে | তখন আমার প্রতি তোমার আস্থা, নির্ভরতা, ভরসা দেখলাম | নিঃস্বার্থ নির্ভরতা, একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আশ্রয় |"
আলিজা সুন্দরকরে হেসে বলল, "এবার থামো তুমি |"
"কেন ?"
"এরপর কি বলবে কিছুটা অনুমান করছি তাই |"
"লিজ তোমার সঙ্গে যখন তোমার দেশে এলাম তখন তোমাকে পুরোটা জানলাম | দেখলাম আর বিস্মিত হলাম | কেউ যে তার আপনজনদেরকে এতটা ভালোবাসতে পারে তা তোমাকে না জানলে আমি জানতাম না | এই ঘরে এসে কয়েকটা দিনে তোমার ভাইয়ের জীবন তুমি গুছিয়ে ফেললে | এরপর আমার মনে হাজারো দ্বিধাদ্বন্দ থাকলেও তোমার ভাইয়ের বাগদানের দিন সন্ধ্যায় যখন তুমি আমাকে ডাকতে এলে সেদিন ওই নরম আলোতে লাল পোশাকে তোমাকে দেখে আমার মনে হল কি জানো ?"
আলিজা মুখে হাসি ধরে রেখে বলল, "কি ?"
"মনে হল 'গুড গড ! আই হ্যাভ টু ম্যারি দিস লেইডি !' "
আলিজা হেসে এরিকের মুখে হাত চাপা দিলো |
এরিক আলতোকরে হাতটা সরিয়ে বলল, "তখনই মনে হল যে আমার জীবনে তোমাকে আমার চাইই |"
"এরিক !"
"হুম | লিজ যেভাবে তুমি আমার যত্ন রাখো খেয়াল করো আমার প্রতি সেটা অনেক বড় পাওয়া আমার জন্য |"
"এরিক আমি শুধু তোমার স্ত্রী হিসেবে আমার করণীয়টাই করে যাই |"
"তোমার নিঃস্বার্থ অশেষ ভালোবাসা সেটা এখানে আলোচনার টেবিলে রাখছিনা কারন সেটা ব্যাখ্যার মত ভাষা আমার কেন তোমারও নেই | কিন্তু আর সব ব্যাপারগুলো, সেটা ভাবি আমি প্রায়ই | আমার ঘর সামলানো, গ্রোসারি আনা, সব এরেন্ডস ( ভারপ্রাপ্ত কার্যাদি ) সামলানো, আমার সন্তানদের দেখে রাখা ও তাদের পরিপূর্ন মমতা আর সচেতনতায় রাখা আর এমনকি আমার ড্যাডকেও যত্ন করা এসব সবই তুমি বলে সম্ভব | তবে কি লিজ জানো এসব বড়বড় ব্যাপারগুলোকে আমি প্রায়ই পাশে রাখি | বরং লক্ষ করি ছোটছোট খুঁটিনাটি ঘটনাগুলোকে | আমার প্রতি তোমার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র খেয়ালগুলো | সেটা হয়ত আমার জামাকাপড় পরিষ্কার করে পরিপাটি গুছিয়ে রাখো, আমার ঘড়ি, কাফলিং বেল্ট, জুতোর মত শখের জিনিসগুলোকে যত্নে সামলে রাখো, আমার ক্লজেটটা পরিপাটি রাখো, আমি ঘরে থাকলে সবসময় আমার পছন্দের খাবারগুলো রান্না করে চমৎকার একটা ফ্যামিলি ডিনারের ব্যবস্থা করো, সকালে উঠেই বাথরুমে সবকিছু নির্দিষ্ট জায়গায় পাই, টেবিলে আমার পছন্দের ব্রেকফাস্টটা থাকে সবসময় এসব ব্যাপারগুলো লিজ | এই ব্যাপারগুলো মুগ্ধ করে আমাকে | আর সামান্য অসুখে তুমি যেমন নিরলস সেবা করে যাও মন থেকে সেটা ধন্য করে আমাকে | আমার সামান্য মাথাব্যথা হলেও দেখি তুমি রাতজেগে আমার মাথায় হাতবুলিয়ে দাও, আমি পাশ ফিরলেও উঠে বসে পড়ো আমার কিছু লাগবে কিনা জানতে এমনকি আমি ঠান্ডা পানি খাই বলে তুমি রাতে কয়েকবার উঠে ঘরে গ্লাসে রাখা পানি বদলে আনো |"
আলিজা কপালে হাত রেখে বলল, "আর কি এরিক ?"
"আর হল এই যে, লিজ....."
"কি ?"
এরিক একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, "আর হল এই, লিজ তুমি আসায় আমি শুধু অসের চলে যাওয়াটা সামলাই নি বরং আমি আমার মা আর মেলিসার অপরাধগুলোর কষ্ট থেকেও সামলে এসেছি | সত্যিকারের নিঃস্বার্থ ভালোবাসাটা কেমন সেটা জেনেছি | প্রকৃত একজন আপনজনকে পেয়েছি | আমার আরেকটা 'গার্ডিয়ান এঞ্জেল' !"
আলিজা ঠোঁটের কোন একচিলতে হাসি আনলো |
এরিক উঠে আলিজার ঠোঁটের উপর একটা চুমু দিয়ে বলল, "লিজ এখন এটা আমি জানি সত্যিকারের সুখস্বাছন্দ মানুষকে আমি কেমন আছি সেটা দেখানো নয় বরং আমি নিজেকে আর নিজের আপনজনদের নিয়ে কেমন আছি সেটা | ভালোবাসার জন্য অনুভতির দরকার যেটা তোমার রয়েছে আমার প্রতি | যেটা আমি সারাজীবন আগলে রেখে সংরক্ষণ করবো |"

মেঘের আলোয়Where stories live. Discover now