১০

576 24 12
                                    

#অভিসারক_ও_অভিসারিণী
লেখা- #AbiarMaria

#১০

ফারহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঠোঁট কামড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ আগের একটা স্মার্টিপ্যান্ট ছেলে ওকে দেখে খুব ভাব জমানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল। পাশাপাশি তার আনাড়ি ইংরেজি দিয়ে তার পান্ডিত্য জাহির করতে ভুলেনি। ফারহা আড়চোখে শুনেও না শোনার কিংবা বুঝেও না বোঝার ভাণ করে থাকলো। এমন ভাব করল যেন ছেলেটা ভাবে ফারহা ইংরেজি বোঝে না। ছেলেটাও খুব খুশি হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই ডেট এক্সপায়ার বিদ্যে নিয়ে ইমিগ্রেশনের পুলিশের কাছে ঠেক খাচ্ছে। একটা বাক্য বলতে তিন বার চেষ্টা করতে হচ্ছে। ফারহা পেছন থেকে ঠোঁট টিপে হাসছে। আর মনে মনে ভাবছে, ফাঁকা কলসি বাজে বেশি! ইচ্ছা করছিল তখন এক থাপ্পড়ে তোর মাথা ঘুরিয়ে দি। এখন তো অফিসারই তোকে যা করার করবে!

ছেলেটা অনেক কষ্টে পার হওয়ার পর ফারহার সিরিয়াল আসলো, অফিসার হাত বাড়ালো পাসপোর্ট দেখার জন্য। ফারহা পাসপোর্ট সহ ওর বিসার কাগজপত্র এগিয়ে দিল। অফিসার সব দেখে প্রশ্ন করলো,
"হোয়াট ইজ ইউর পারপাস অফ ভিজিটিং আমেরিকা?"
ফারহা পিউর আমেরিকান একসেন্টে বলল,
"তোমাদের দেশের উন্নতি করার জন্য"
"মানে?!"
"আহ, আমরা ঘুরতে না গেলে তোমাদের দেশ উন্নত হবে নাকি? এজন্যই এত কষ্টের টাকা জমিয়ে সব তোমাদের নদীতে ঢালতে যাচ্ছি"
"আপনার আসল উদ্দেশ্যটা কি বলুন তো? ওখানে কি বিয়ে করবেন?"
ফারহা দাঁত কেলিয়ে বলল,
"আমি তো ভেবেছি তোমাদের ছেলেরা অনেক দামী, তাই তেমন কিছু ভাবিনি। কিন্তু তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে ওরা খুব সস্তা! আচ্ছা, তাহলে তো বিয়ে করাই যায়!"
অফিসার গম্ভীরমুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এটা বাংলাদেশ বলে বেশি একটা ঝামেলা করার আগেই ফারহা দাঁত কেলিয়ে বলল,
"আম জোকিং ম্যান, আম জোকিং!"

অফিসারের কাছ থেকে পাসপোর্ট আর ভিসার কাগজ বুঝে নিয়ে ফারহা যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ছেলেটা অত্যন্ত ইম্পেসড হয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসলো।
"আপা, আপনে কি সুন্দর কইরা ইংরেজি বলেন!"
ফারহা ছেলেটার মাথা থেকে পা পর্যন্ত এক ঝলক দেখে আবার মুখ ঘুরিয়ে হাঁটা শুরু করল। ছেলেটা ফারহার পিছু পিছু আসছে। ফারহা ধপ করে দাঁড়িয়ে পড়ল।
"সমস্যা কি ভাই? পেছন পেছন আসতেছ কেন?!"
"আসলে ইয়ে মানে...আপনি এত সুন্দর করে কথা বলেন..."
"তো? তো এখন কি করবেন? আমাকে মাথায় নিয়ে নাচবেন?"
"না না, তা না! এক সাথে যদি আমরা যাইতাম..."
"আমি কি বলছি আমি আপনার সাথে এক সাথে যাবো? যান? সামনে যান আপনি!"
ফারহা অগ্নিশর্মা হয়ে লোকটাকে আঙুল তুলে ওর সামনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। লোকটা ভাবেনি ফারহা এভাবে ক্ষেপে যাবে। সে তাড়াতাড়ি তার সাথে থাকা কয়েকটা বস্তা জাতীয় ব্যাগ নিয়ে রওনা দিল। ফারহা চুল ঠিক করে কোট গায়ের সাথে চাপিয়ে একমাত্র ছোট লাগেজ আর হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে হিল পরে টক টক করে হেঁটে যেতে শুরু করল। যেহেতু নিউ ইয়র্কে এখন বেশ শীত, তাই সে একটা কালো পিয়া কোট আর ভারী জিন্স, সাথে হাই হিল বুট পরেছে। ব্যাগে একটা কানটুপিও আছে, তবে আপাতত তার দরকার পড়ছে না,একটা কালো স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢেকে ফেলেছে । এয়ারপোর্টের ভেতর শীত আর গরমের মিশেলে একটা স্বস্তিদায়ক টেম্পারেচার। ফারহার মনে হচ্ছে, কোট খুলে ফেললে ভালো হতো, ভেতরে সাদা লং কুর্তি আছে। তবে পরমুহূর্তে এ চিন্তা বাদ দিয়ে আরেক দফা সিকিউরিটির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করল।

অভিসারক ও অভিসারিণী Tahanan ng mga kuwento. Tumuklas ngayon