সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষীপর্ব ১
★
''আমি সুবর্ণা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে এবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছি। ঠিক প্রথম বর্ষে বললে ভুল বলা হবে। কিছুদিন আগেই আমার প্রথম বর্ষের শেষ পরীক্ষাটি হয়ে গেছে। ছাত্রী হিসেবে আমি তুখোড় না হলেও ভালোর পর্যায়েই পরি। আর আমার পরীক্ষাও বেশ ভালো হয়েছে। তাই বলা যায় আমি আনঅফিশিয়ালি অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। ওহ! বলাই তো হয়নি, আমি সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্স নিয়ে পড়ছি। আমি বোধহয় খুব ইংরেজি বাংলা গুলিয়ে কথা বলছি তাইনা? আরে! কথা বলছি কোথায়, আমি তো লিখছি৷ আসলে কথা বলার সময়েও আমি এভাবেই কথা বলি। তার উপর অনেকদিন পর লিখছি তো, একটু আয়োজন করে ভনিতা করে লিখবো ভেবেছিলাম। ফলাফল সবই কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
যা বলছিলাম, ঢাকা ভার্সিটির মতন একটা জায়গায় তাও আবার ফিজিক্সের মতন একটা বিষয় নিয়ে পড়ছি শুনলে সবাই ভেবে বসে আমি বোধহয় দিনরাত পড়াশোনাই করি। আর আমি বুঝি ভীষণ কাটখোট্টা ধরনের। অথচ আমি কিন্তু একদম সেরকম মেয়ে নই। আমি ভীষণ আবেগী একটা মেয়ে৷ জীবনের বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই আবেগ দিয়ে নেই। কেউ একটু আবেগী সুরে আমাকে কিছু বললেই আমি গলে পানি হয়ে তার সব কথা মেনে নেই। জীবনের বড় বড় কিছু ভুলও আমি আবেগের বসেই করে ফেলেছি। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার সিদ্ধান্তটাও তেমনই একটা সিদ্ধান্ত। খানিকটা জিদও অবশ্য ছিলো। কি ভাবছেন? এ আবার কেমন কথা? সে নিয়ে পরে একদিন লিখবো। আজ ওই কাহিনী টানতে ইচ্ছে করছে না।
আমি মেয়েটা আবেগী হলেও ভীষণ জেদী প্রকৃতির। আবেগ এবং ভুল জায়গায় জিদ খাটিয়ে জীবনের অনেকটা সময় আমি হেলায় হারিয়েছি।
আচ্ছা আমার লেখাগুলো খুব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তাইনা? আমারো সেটাই মনে হচ্ছে। আসল কথাটায় পৌঁছাতেই পারছি না। এক কাজ করি, সরাসরি আসল কথায় আসি। আমি ক্লাস এইট থেকে একটা ছেলেকে ভালোবাসি। না না এক তরফা ভালোবাসা না। আমরা দুজনেই একে অপরকে ভালোবাসতাম। যেমন তেমন ভালোবাসা না। একে অপরকে পাগলের মত ভালোবাসতাম। দুজনের সুন্দর একটা রিলেশনশিপ ছিলো। ও আমার চেয়ে এক বছরের বড় ছিলো। আমরা একই স্কুল একই কলেজে পড়াশোনা করেছি। আমরা একে অপরকে এতটা ভালোবাসতাম যে ভার্সিটি লাইফে আমরা আলাদা হবো ভাবতেও পারতাম না। আসলে ভাবতে পারতাম না বলাটা একটুখানি ভুল৷ ও চাইতো না আমরা আলাদা হই। প্রতিটা মূহুর্তে ও আমাকে নিয়ে ভয় পেতো। এই বুঝি আমি ওকে ফেলে চলে যাবো, এই বুঝি আমি অন্য কারোর হয়ে যাবো, এই বুঝি আমি ওকে আর ভালোবাসবো না ইত্যাদি ইত্যাদি। ভয়টা আমারও ছিলো কিন্তু ও যেনো একটু বেশিই ভয় পেতো এসব নিয়ে।
আমাদের দুজনেরই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা একটা মফস্বল শহরে। ঢাকাশহর আমাকে সেভাবে না টানলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে খুব টানতো।
কিন্তু আমার সেই প্রিয়তমের তেমন ইচ্ছে ছিলো না। সেও কলেজ পর্যন্ত সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ডে ছিলো। ভর্তি পরিক্ষার সময় সে চান্স পেলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। হয়ত ভাবছেন আমার উনি তেমন একটা ভালো স্টুডেন্ট না তাইনা? না না একদম তা ভাববেন না। ও আমার থেকেও ভালো স্টুডেন্ট। যাকে বলে কিনা তুখোড়। কিন্তু ওর ছোটবেলা থেকেই আঁকিবুঁকির প্রতি ভীষণ ভালোবাসা। আমার আবার ওইসবের সাথে কোনো ভাব ভালোবাসা নেই। ওর ভর্তির পরের বছরেই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলাম। এতে ও খুব মন খারাপ করলো। হয়ত ভাবছেন কেনো? বলছি শুনুন।
আসলে ও চাইতো না আমি একমুহূর্তের জন্যেও ওর থেকে আড়াল হই। আর আগেই বলেছি আমরা একই স্কুল এবং একই কলেজ থেকে পাস করেছি। যদিও ও আমার এক বছর আগে পাস করেছে। সে আরেক গল্প। বলবো অন্যকোনো দিন। যা বলছিলাম, ওর শখ ছিলো আমিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো এবং চারুকলাতেই। যেহেতু আমি ওই বিষয়ে কিছুই পারতাম না, ফলাফল আমার চান্সও হলো না। অন্য ডিপার্টমেন্টে ফর্ম তুললেও বাড়ি থেকে আমাকে আর এলাউ করলো না। কারণ এর মাঝেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট পাবলিশ হয়ে গেছিলো। বাবা মা চাচ্ছিলো না আমি আর কোথাও পরীক্ষা দেই।
অবশ্য আমার প্রিয়তম প্রথমে মন খারাপ করলেও পড়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলো আমি আমার প্রিয় সাবজেক্টে চান্স পেয়েছি বলে।