#সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষীপর্ব ৩
★
বসার ঘরে প্রীতম এবং তার বাবা মা বসে আছেন। তাদের সামনেই বসে আছে সুবর্ণা এবং তার বাবা মা। কেউ কোনো কথা বলছে না। সৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয়ে গেছে। সুবর্ণার মা নিজ হাতে নাস্তা বানিয়ে মেহমানদারী করেছেন। কিছুটা সময় নীরবতা কাটিয়ে সুবর্ণা মুখ খুললো।
" আন্টি আংকেল আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আপনাদের এভাবে হ্যারাস করা আমার একদমই উচিত হয়নি। আসলে এই মুহূর্তে আমি বিয়ের জন্যে একদমই প্রস্তুত নই আন্টি। এর মানে এই না যে আমি প্রীতমকে ভালোবাসি না। আসলে...."
সুবর্ণাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই প্রীতম চিৎকার করে উঠলো, " বিয়ের জন্য তৈরি না মানে? কি বলতে চাইছো তুমি? কেনো প্রস্তুত না? বিয়ের জন্য আবার প্রস্তুতি কিসের? এই তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা? "
প্রীতমের চিৎকারে বাশার হক ভীষণ লজ্জা পেলেন। নিজের ছেলের হাত ধরে ঝাকিয়ে ছেলেকে থামালেন।
" কতবার কইরা বলছি তোমারে, যা বলার, যা করার আমরা করবো। মান সম্মান ডুবাইতেছো কেন বাপ?"
বাবার বিড়বিড়িয়ে বলা কথায় ছেলে কিছুটা শান্ত হলো।
সুবর্ণার বাবা মা বেশ শান্ত আছেন। সুবর্ণা নিজেই বলতে শুরু করলো,
" দেখো প্রীতম আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি বলেই তোমার প্রতিটা কথা আমি মেনেছি। আমি তোমাকে কখনোই হারাতে চাই না। আমি বিয়েটাও তোমাকেই করতে চাই কিন্তু এই মুহূর্তে না। তুমি কেনো বুঝতে চাইছো না?"
এবার বাশার হক মুখ খুললেন,
" মারে! তোমার কোনো ভয় নাই। ভয় পাইও না। কুনো সমস্যা থাকলে আমাদের বলতে পারো। তুমি আমাদের মেয়ের মতই। আমাদের কাছে রেহানাও যা তুমিও তাই। আমার ছেলেটা তোমাদের ছাড়া বাঁচবে না। ওরে তুমি ফিরাইয়া দিও না।"
প্রীতমকে রাগে উসখুস করতে দেখে সুবর্ণার ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি বলে দি বিয়েটা হবে। কিন্তু না। ভেঙে পড়লে চলবে না। নিজেকে শান্ত করলো সে।
" প্রীতম আমাদের কত বছরের সম্পর্ক? "
" ছয় কেনো?" প্রীতমের মুখে ক্রোধ স্পষ্ট।
" এই ছয় বছরে তুমি আটবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছো। আর কেউ না বুঝুক আমি তো ঠিকই বুঝি এগুলো তুমি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্যই করেছো।"
প্রীতম যেনো কথাগুলো শুনে কিছু বলতে যাবে ওমনি হাত দিয়ে ইশারায় তাকে থামিয়ে দিলো সুবর্ণা।
" না প্রীতম। আমাকে বলতে দাও প্লিজ। বাবার বদলি হও সত্যেও শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি কখনো স্কুল বদলাইনি। এমনকি নিজের শখের কলেজে পড়িনি কারণ তোমাকে ছেড়ে যেতে হবে। আমি ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেলাম। আর তুমি তখন আমায় বললে আমি তোমাকে ভালোবাসি না, তোমার কাছে থাকতে চাইনা। কেনো প্রীতম? কেনো সবসময় আমার ভালোবাসাকে তুমি কাঠগড়ায় দাঁড় করাও প্রীতম? কেনো?"
কথাগুলো শুনে বেশ অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন শাহরিয়ার কবির। তার ওই স্কুলে থাকার জন্য এত জিদ করতো এই ছেলের জন্য? আন্দাজ করেছিলো কিছুটা। মেয়েকে শাসনও করেছিলো তখন। কিন্তু তাই বলে এত কাহিনি?
সুবর্ণা একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো,
" আন্টি রেহানা আপু এখন কিসে পড়ছে?"
" ওইতো অনার্সে। চার বছরে মনে হয়। "
মোহসিনা বেগম একদম গ্রামের এক মেয়ে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তার খুবই কম৷ ছেলেমেয়ে কিসে পড়ছে সে ব্যাপারে সে অতশত বোঝেও না। এই বিষয়টা যদিও সুবর্ণা অনেক পরে জেনেছে। তবে এখন বুঝতে অসুবিধা হলো না যে উনি কি বোঝাতে চেয়েছেন।
" রেহানা আপু অনার্স ফোর্থ ইয়ারে পড়ে। আপনারা আপুর বিয়ের কথা ভাবছেন না কেনো?"
প্রীতম ভীষণ চটে গেলো যেনো কথাটা শুনে।
" আরে আজব? আমার বোন পড়াশোনা করতেছে। এখন কেন বিয়ে দিবো? আর এসব কেন বলতেছো তুমি? সমস্যা কি? "
নিজের কথাটা বলেই যেন নিজে কিছু একটা বুঝে গেলো প্রীতম।
সুবর্ণা জোরে হেসে দিলো।
" অথচ আমি সবে মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে। তাহলে আমি এত আগে কেনো বিয়ে করবো প্রীতম? যেখানে তোমার নিজের বাড়ির মেয়েকে তুমি এত আগে বিয়ে করানোর কথা ভাবতেও পারো না। সেখানে আমি বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই বলা মাত্রই তুমি আমাকে, আমার ভালোবাসাকে অবিশ্বাস করে বসলে?"
প্রীতম এবার খুব রেগে গেলো। রেগেমেগে সমার সামনে সুবর্ণাকে সোফা থেকে টেনে তুলে ঝাঁকাতে শুরু করলো আর চিৎকার করতে লাগলো,
" এইসব তোমার অজুহাত তাইনা? নতুন ভার্সিটিতে গিয়ে এখন আমি পুরোনো হয়ে গেছি না? চোখে রঙিন চশমা লাগাইছো? থাপ্রা দিয়ে এসব ভুত নামাবো। নাকি তোমার এই বাবা মা তোমাকে ধমকাইছে? আমাকে বিয়ে করতে না করছে তাইনা? এখন তোমার বাবা মাই সব আমি কেউনা তাইনা? "
এই পর্যায়ে শাহরিয়ার কবির প্রীতমের উপর খুব রেগে গেলেন। মেয়েকে প্রীতমের হাত থেকে ছাড়িয়ে প্রীতমকে কষিয়ে একটা চড় লাগালেন।
" তোমার সাহস হয় কি করে আমার সামনে আমার মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলার? হাউ ডেয়ার ইউ?"
মূহুর্তে ভেতরেই খুব বাজে একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেলো। প্রীতম চড় খেয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। এত দ্রুত সব ঘটে যাবে কল্পনাও করতে পারেনি বাশার হক। মোহসিনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে ছেলেকে খুঁজতে পেছনে পেছনে বেড়িয়ে গেলেন। আর বাশার হক কোনো মনে ক্ষমা চেয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেন।
অল্প কিছু সময়ের ভেতরেই অদ্ভুত এক ঝর বয়ে গেলো সুবর্ণার জীবনে।