সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষীপর্ব ৭
★
ঘরের ভেতরে আবছা আলো। আলোটা কিসের ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আলোটা কোথা থেকে আসছে সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। চোখ ডলে বিছানায় শোয়া থেকে উঠে বসলো প্রীতম। চারিদিকে সময় নিয়ে তাকালো। পরিবেশটা ঠিক চিনতে পারছে না সে। বিছানায় বসেই কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর মনে পড়লো সে এখন দাদুবাড়িতে। কাল হাসপাতাল থেকে বাবা মা ওকে নিয়ে এখানে এসেছে। মায়ের ভাষ্যমতে শহরের হাওয়া বাতাস তার ছেলের জন্য আর ঠিক না। তার ছেলের এখন উচিত গ্রামে গিয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসা।
কথাগুলো অবশ্য মায়ের নাকি বাবার তা নিয়ে বেশ সন্দেহ ছিলো প্রীতমের। কিন্তু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারেনি। তাছাড়া গত কয়েকদিন ধরে যা সব ঘটে যাচ্ছে তার জীবনে, যেভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছিলো। সেসব থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে এটা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে তার। তারচেয়ে বরং শহরের কোলাহল ছেড়ে কিছুদিন একটু গ্রামের মুক্ত বাতাসে নীরব পরিবেশে কাটানো যাক। ভার্সিটি খুলে ফেললে তো আর এই সময়টা পাওয়া যাবে না।
প্রীতম বিছানা ছেড়ে উঠতেই আলোর রহস্যটা ধরতে পারলো। তার খাটের নিচে হারিকেন নিভু নিভু আলোয় জ্বলছে।
এটা তার মায়ের কাজ। মা জানে তার ছেলে অন্ধকার কি ভীষণ ভয় পায়। ঠিক মনে করে খাটের নিচের দিকটায় হারিকেন এমনভাবে রেখেছিলো যেনো পুরো ঘরটা আলো না হলেও কিছুটা আলো হয়। প্রীতম আপন মনেই কিছুক্ষন হাসলো। এই মহিলাটা সারাটা জীবন উৎসর্গ করলো সংসারের জন্য, স্বামী সন্তানের জন্য। অথচ এই সংসার থেকে সে কিছুই পায়নি। এতটুকু সম্মানও না।হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো প্রায় ভোর হতে চলেছে। ফোনের স্ক্রীনে তাকাতেই লক্ষ্য করলো এখানে কোনো নেটওয়ার্কই নেই। ব্যাপারটা দেখেই মন খারাপ হয়ে গেলো প্রীতমের৷ সুবর্ণা কল দিলে সে জানতেও পারবে না। আর গ্রামের বাইরে না যাওয়া পর্যন্ত সে জানতেও পারবে না সুবর্ণার কি হয়েছে। কেনই বা একটা বারের জন্যেও হাসপাতালে তাকে দেখতে এলো না।
তবে কি সত্যিই সুবর্ণা পালটে যাচ্ছে? পালটে গেছে? অন্য সবার মত সুবর্ণাও কি সুবিধাবাদী মেয়ে? সময় সুযোগ বুঝে ভালো পেয়ে চলে গেলো? তা না হলে যে মেয়েটা একটু অসুস্থতার খবর শুনলেই পাগল হয়ে যেত সে আজ এতবড় কথা শুনেও একটাবারের জন্যেও হাসপাতালে এলো না তাকে দেখতে? এতটা নিষ্ঠুর হয়ে গেলো কবে সুবর্ণা?
ভোর হওয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে আপন মনে ভাবতে থাকলো প্রীতম।