সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষীপর্ব ২২
★
রিম্পির বাড়ি থেকে ফেরার সময় পুরো রাস্তাতে সুবর্ণা একটাও কথা বলেনি। একদম চুপসে ছিলো সারাটা রাস্তা। সৌরভও কোনো কথা বলেনি সুবর্ণাকে। রিম্পির বাসায় বসে সৌরভ সুবর্ণার বিগত বছরের সবকিছু খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। সেসব নিয়ে সৌরভও একটু শকড৷ এমন অনেক কথাই সৌরভ জানতে পেরেছে যা সম্পর্কে সে এই কয় বছরে কিছুই জানত না। বিন্দু মাত্র আন্দাজও ছিলো না তার।
বাড়ি ফেরার পর থেকেই সুবর্ণা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরে। ডাক্তার সুবর্ণাকে দেখে বলেছিলো, বেশি স্ট্রেস নেওয়ার জন্যেই এমন হুট করে অসুস্থ হয়ে পরেছে। তবে ভয়ের কিছু নেই। পুরোনো স্মৃতি নিয়ে ভাবতে ভাবতেই একটা সময় আগের সবকিছু মনে পড়ে যাবে সুবর্ণার।
কাশফিয়া রহমান মেয়েকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত কি না তাকে দেখে একদমই বোঝার উপায় নেই। সৌরভ যতবারই তার সাথে কথা বলতে গেছে, কাশফিয়া রহমানকে ভীষণ শান্ত লেগেছে তার কাছে।
দেশ থেকে চলে যাওয়ার সময় দেশ এবং দেশের মানুষগুলোকে যেভাবে রেখে গিয়েছিল, কোনোকিছুই আর আগের মত নেই। সবকিছুই বদলে গেছে।" আসবো?"
কাশফিয়া রহমান সুবর্ণার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আওয়াজ করলেন।
মায়ের গলা পেয়ে সুবর্ণা শোয়া থেকে উঠে বসলো।
" হ্যাঁ আম্মু এসো না প্লিজ। ভেতরে এসো।"
কাশফিয়া রহমান ঘরে এসে মায়ের কাছে বসলেন। মেয়ের মুখের দিকে ছলছল চোখে তাকালেন।
" তোর কি আমাদের পুরোনো কথা কিচ্ছু মনে পড়ে না? আমার কথা, তোর বাবার কথা, তোর কথা?"
সুবর্ণা মাথা নিচু করে ফেললো। সেদিন রিম্পির বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই সে রিম্পির বলা প্রতিটা কথা নিয়ে ভেবেছে৷ এমনকি ভাবতে ভাবতে অসুস্থ হয়ে গেছে। প্রায় রাতেই কি সব যেন স্বপ্নেও দেখে সে। কেমন আলো আঁধারের খেলা। কিন্তু এসব বললে মা আরো চিন্তা করবে। তাই মাথা নিচু করে চুপ করে থাকলো।
কাশফিয়া রহমান নিজেই বলতে শুরু করলেন,
" সৌরভের কাছ থেকে আমি শুনেছি রিম্পি যা যা বলেছে। আমার মনে হয় তোর আরো কিছু জানা দরকার। আর এরজন্যে তোকে যেতে হবে আমাদের বাড়িতে।"
সুবর্ণা এবার অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকালো।
" আমাদের বাড়ি মানে? তাহলে এটা? "
" এটা সৌরভের বাবা মায়ের বাড়ি। তোমার এক্সিডেন্ট এর পর সৌরভ আমাদের এই বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর থেকে আমরা এখানেই আছি। সৌরভের বিশ্বস্ত লোকজন প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে আর আমাকে প্রটেকশন দিয়ে যাচ্ছে।"
সুবর্ণা বেশ অবাক হলো।
" তাহলে আমাদের বাড়ি কোথায় মা? "
" আমি তোমাকে আজ সেখানে নিয়ে যাবো। সৌরভকে একবার বলতে হবে। ওর ঘরে সম্ভবত ওর কোনো বন্ধু এসেছে তাই আমি আর ওদিকে যাইনি। তুমি কি একবার যাবে? ওকে গিয়ে বলো আজ বিকেলে যেন একবার আমাদের বাইরে নিয়ে যায়।"
" কিন্তু তুমি যে বললে ওর বন্ধু এসেছে? সে যাক তারপর না হয় যাই?"
কাশফিয়া রহমান একটু নড়েচড়ে বসলেন।
" না না। শুনলাম ছেলেটা নাকি কিছুদিন এখানে থাকবে। তুমি যাও। আমি দেরি করতে চাই না। "
সুবর্ণা আর কোনো কথা বাড়ালো না। আস্তে করে বিছানা ছেড়ে উঠে সৌরভের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।