সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষীপর্ব ২১
★
সৌরভ শাহরিয়ার। দেশের স্বনামধন্য ব্যাবসায়ী হাসনাত শাহরিয়ার এবং সুরভি শাবনামের একমাত্র ছেলে। ঢাকা শহরের বিশাল বাড়ি, বড় বড় গাড়ি, দেশের বাইরেও বিদেশের মাটিতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ব্যাবসার বিস্তার এমন এক ঘরেই জন্ম হয় সৌরভের। ছোটবেলা থেকেই যেন সোনার চামচ মুখে জন্ম তার। অভাব কি জানে না বললেই চলে। বিদেশের প্রতি ঝোঁক থাকায় সৌরভকে ছোটবেলায় ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করে দেয় তার বাবা মা। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ বাধ্য নম্র এবং ভদ্র একটা ছেলে সৌরভ। বাবা মায়ের প্রতিটি কথাই সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে ব্যাস্ত থাকতো। কিন্তু বিধাতা হয়ত ছেলেটার ভাগ্যে বাবা মায়ের ভালোবাসা বেশিদিন রাখেনি৷ সৌরভকে বাড়িতে রেখে হাসনাত শাহরিয়ার এবং সুরভি শাবনাম দুবাইতে গিয়েছিলেন ব্যাবসার কাজে। ফেরার সময় প্লেন ক্র্যাশে দুজনেরই স্পট ডেড হয়ে যায়। ছেলেটার ভাগ্য এমনই, বাবা মায়ের শেষ ইচ্ছে কি ছিলো তাও জানতে পারেনি।
বাবা মা মারা যাবার পর সৌরভ তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় শাহরিয়ার কবিরের বাসায় আশ্রয় নেয়। শাহরিয়ার কবিরও সৌরভকে নিজের ছেলের মতনই মানুষ করতে চেষ্টা করেছেন সবসময়।
শাহরিয়ার কবির এবং হাসনাত শাহরিয়ার একে অপরের খুব দূরের আত্মীয় হলেও একে অপরের মাঝে সম্পর্ক ছিলো আপন ভাইয়ের চেয়েও গাঢ়। তাই নিজের প্রিয় ভাই প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর পর শাহরিয়ার কবির অনাথ ছেলেটাকে নিজের কাছে এনে রাখে। সৌরভের যেন কখনো বাবা মায়ের অভাব বোধ না হয়, সেই দিকে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখতেন শাহরিয়ার কবির এবং কাশফিয়া রহমান।
যেহেতু সৌরভ ছোটবেলা থেকেই ইংলিশ ব্যাকগ্রাউন্ডের ছিলো এবং ওর বাবা মায়েরও ইচ্ছে ছিলো বড় হয়ে দেশের বাইরে পড়াশোনা করানোর তাই শাহরিয়ার কবির সৌরভকে পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেয়।
সৌরভের বাবা মা মারা যায় যখন সৌরভ ক্লাস ফাইভে পড়ে। ক্লাস টেনের পর সৌরভও জানায় সে দেশের বাইরে যেতে চায়, বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চায়, পড়াশোনা শেষে নিজেদের ব্যবসার হাল ধরতে চায়।
শাহরিয়ার কবির আর আপত্তি করেননি। এরপর সৌরভ বিদেশে চলে যাওয়ার পর থেকে প্রায়ই অনলাইনে কথা হত সবার সাথে। ধীরে ধীরে সময় গড়াতে লাগলো আর সৌরভও বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যাস্ত হয়ে উঠলো।
সৌরভের সবসময় আফসোস ছিলো মৃত্যুর আগে তার বাবা মায়ের তাকে নিয়ে কি ইচ্ছা কি স্বপ্ন কিছুই জানতে পারেনি। তাই যতটুকু জানতো সেটুকুই পূরণ করতে উঠেপড়ে লেগেছিলো।