#25

39 6 0
                                    

সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষী

পর্ব ২৫

" প্রীতম আম্মু আমাদের ব্যাপারটা ধরে ফেলেছে। লাস্ট ডায়েরিটা আম্মুর হাতে পরে গেছে। এখন কিছুদিন আমাদের যোগাযোগ না রাখাই ভালো। তুমি কিছুদিন আর আমার প্রাইভেটের সামনে দাঁড়িও না।"
" কিন্তু সুবর্ণা তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে চলবো। না না তোমাকে আমার সাথে যোগাযোগ করতেই হবে। যেভাবেই হোক। আমি যোগাযোগ না করে একদিনও থাকতে পারবো না। "
" তুমি আমার সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করো। আমি এখন অনেক কষ্টে তোমাকে কল দিচ্ছি। মা এসেই আমার ফোন নিয়ে নেবে আমি সিওর। প্লিজ একটু বোঝো।"
" আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না। তাছাড়া আমার ফেমিলিতেও তো প্রবলেম হয়। কই আমি কি যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলি?"
" তুমি কেনো বুঝতে পারছো না?"
" আমি ঠিকই বুঝছি, তুমি বুঝতে পারছো না। আচ্ছা এক কাজ করলে কেমন হয়? আমার তো দুটো ফোন। একটা তুমি লুকিয়ে রাখবে। রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে কথা হবে। প্লিজ না করো না। আমাদের হাতে তো উপায় আছেই তাই না। "
" আচ্ছা ঠিক আছে। তাই হবে।"
***
" প্রীতম তুমি এমন করছো কেনো? বাসা থেকে আমাকে রাবিতে এক্সাম দিতে দেবে না। কেনো বুঝতে চাইছো না?"
" আমি বুঝতে চাইছি না নাকি তুমি বুঝছো না? এখনই আমার থেকে দূরে যেতে চাইছো? বাহ দারুণ। "
" এসব কি বলছো। আম্মু আব্বু চায় আমি ঢাবিতেই এডমিট হই আর আমি তো আমার ফেভারিট সাবজেক্টটাই পেয়েছি। তুমি একটুও খুশি হওনি তাতে?"
" একটু না আমি অনেক বেশি খুশি। তারচেয়েও বেশি খুশি হতাম যদি তুমি আমার ভার্সিটিতে চান্স পেতে। কিন্তু তুমি তো এক্সামই দেবে না। অথচ তুমি বলেছিলে ঢাবির এক্সাম তোমার ভালোই হয়নি। আর এতই যখন এক্সাম দেবে না, কেন নাটক করে চারুকলায় ফর্ম তুলতে গেলে? এসব না দেখালেও তো হত।"
" প্রীতম! তুমি বিশ্বাস করো, আমি সত্যিই এক্সাম দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাসার কেউই রেজাল্ট জানার পর চায় না আমি কষ্ট করে রাবিতে এক্সাম দেই। একটু তো আমাকে বোঝো প্লিজ।"
" আমি সব বুঝি সুবর্ণা। তুমিই বুঝলে না। আমার খারাপ সময়গুলোতেই তুমি আমার পাশে থাকলে না। বাহ!"
***
সুবর্ণা চোখ খুলতেই আলতো একটা স্পর্শ অনুভব করলো। ভালোভাবে চোখ মেলে দেখার চেষ্টা করলো স্পর্শটা কার। কিন্তু আলো আঁধারিতে কিছুই দেখা গেলো না তবে সুবর্ণা বুঝতে পারলো হাতটা তার মায়ের। জ্ঞান ফিরতেই সুবর্ণা অবাক হলো। কারণ একটু আগে স্বপ্নে সে যেই ঘটনাগুলো দেখেছে সেগুলো অদ্ভুত ঘটনা। এত স্পষ্ট সব দৃশ্য কিভাবে সে দেখলো? প্রতিটি কথা তার কানে বাজছে। তবে কি ঘটনাগুলো তার জীবনে আগে ঘটেছে? সেগুলোই সে আবার স্বপ্ন হিসেবে দেখলো? এর মানে কি তার ব্রেইন তাকে ভুলে যাওয়া স্মৃতিগুলো মনে করানোর চেষ্টা করছে?
সুবর্ণা অস্ফুট স্বরে ডাকতেই ঘরে আলো জ্বলে উঠলো। সুবর্ণা বুঝতে পারলো না এখন দিন নাকি রাত। চোখ মেলে দেখলো সৌরভ একটা চেয়ারে বসে আছে আর তার মাথায় অনবরত হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তার মা কাশফিয়া রহমান। সুবর্ণা উঠে বসার চেষ্টা করতেই মাথাটা কেমন দুলে উঠলো। আর ওমনি বিছানায় পরে গেলো। কাশফিয়া রহমান শক্ত করে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। সুবর্ণা দেখলো সৌরভ কাউকে একটা ডাকতেই একটা মাঝবয়েসী মেয়ে হাতে একটা বাটি নিয়ে তার দিকে এগিয়ে এলো। মেয়েটা এক বাটি গরম স্যুপ নিয়ে এসেছে। কাশফিয়া রহমান বাটিটা ধরে সুবর্ণাকে খাইতে দিতে চাইলেন।
" খেয়ে নে মা। অনেকটা ধকল গেছে। না করে না সোনা।"
বাটিটা দিয়েই মেয়েটা চলে গেলো। কিন্তু সুবর্ণা বেশ কিছুক্ষণ মেয়েটির যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটাকে বড্ড পরিচিত লাগছে কিন্তু মনে করতে পারছে না কোথায় দেখেছে। আশেপাশে তাকিয়ে মা আর সৌরভকে স্বাভাবিক দেখে আর কোনো প্রশ্ন করলো না। চুপচাপ মায়ের হাতে খেতে লাগলো। খাওয়ার সময়ে সুবর্ণা একটু ভড়কে গেলো। কারণ স্যুপের স্বাদটাও তার বড্ড বেশি চেনা। এটা মায়ের হাতের স্যুপ না। অন্য কারো হাতের। কিন্তু কার হাতের কিছুতেই মনে করতে পারলো না।
সুবর্ণাকে চুপ করে থাকতে দেখে সৌরভ কাছে এসে বসলো।
" ভাগ্যিস কলটা আমি ঠিক সময়ে রিসিভ করেছিলাম। তা না হলে কি হত ভাবতেই পারছি না। "
" তোমরা কতক্ষণ আমার কাছে আছো?"
" পুরো দুদিন।"
" দুই দিন? মান পুরো দুটো দিন আমি সেন্সলেস ছিলাম? মা?"
সুবর্ণা মায়ের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই কাশফিয়া রহমান স্যুপের বাটিটা টেবিলে রেখে আবার মেয়ের কাছে বসলেন।
" হ্যাঁ সুবা। এই দুদিন তুই হঠাৎ হঠাৎ চোখ খুলেছিস। কিছু একটা বিড়বিড় করে বলেছিস৷ আবার সেন্সলেস হয়ে গেছিস৷ তোকে স্যালাইনও দেওয়া হয়েছে। কারণ তুই ভীষণ উইক ছিলি৷ ভাগ্যিস সুভিকে কলটা করেছিলি আর সুভিও আল্লাহর রহমতে ফোনের কাছে ছিলো। তা না হলে যে কি হতো আল্লাহ। আমি ভাবতেও চাই না"
সুবর্ণা লক্ষ্য করলো তার হাতে ব্যান্ডেজ করা। বুঝল স্যালাইন দেওয়ার পর ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
সুবর্ণা আর কথা বাড়ালো না। মায়ের হাত থেকে কয়েকটা ঔষধ খেয়ে আবার মায়ের কোলে চুপচাপ শুয়ে পরলো আর দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে পরলো।

সুবর্ণলতা [Completed✔️]Where stories live. Discover now