#17

39 4 0
                                    

সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষী

পর্ব ১৭

বাশার হক চলে যেতেই সুবর্ণা কোনোমতে বাড়ির দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে দরজা ঘেঁষেই বসে পরলো। সুবর্ণার কাছে সবটাই কেমন অবাস্তব মনে হচ্ছে। একটা মানুষ এতটা নীচ আর এতটা ভয়ানক কিভাবে হতে পারে সেটা মাথাতেই ঢুকছে না তার। দরজায় বসে অনেকক্ষণ কাঁদলো সুবর্ণা। এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে সে। চাইলেই এই লোকটার বিরুদ্ধে স্টেপ নিতে পারবে সে কিন্তু তাতে কি আদোও কোনো লাভ হবে?
সুবর্ণা কতক্ষণ দরজার ধাঁরে বসে ছিলো তার হিসেব নেই। হঠাৎ নিজের চোখমুখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে নিজের রুমে এলো। কোনো একজনকে এই সব কিছু জানাতে হবে। কেউ একজন যার কাছে সাহায্য চাইতে হবে, বুদ্ধি চাইতে হবে। কারণ তার মাথায় কিছুই আসছে না। কিন্তু এই মুহূর্তে কাকে এসব জানাবে সে? ভাবতে ভাবতে নিজের ফোনটা তুলে বেশ কয়েকবার রিম্পির ফোনে কল করতে থাকলো, কিন্তু বারবার নাম্বারটা বন্ধ আসছিলো।
এই মুহুর্তে তাকে সাহায্য করার জন্য রিম্পি ছাড়া আর কেউ নেই। কিন্তু রিম্পির ফোন বন্ধ পেয়ে সুবর্ণা কেমন চুপসে গেলো।
চারিদিক কেমন যেন অন্ধকার লাগছিলো সুবর্ণার। কিছুক্ষণ পর ফোনের ডাটা অন করে রিম্পিকে পুরো ঘটনা ভয়েস মেসেজ করে হোয়াটস এপে পাঠিয়ে দিলো।
ফোনটা বিছানায় রেখে নিজেও একপাশে শুয়ে পড়লো। বড্ড ক্লান্ত লাগছে আজ। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কিছুই ভালো লাগছে না। রিম্পির ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছিলো।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে বাশার হকের বলে যাওয়া কথাগুলো মনে করছিলো সুবর্ণা। আর হঠাৎই তার মনে পড়লো রিম্পির তো এখন দেশের বাইরে থাকার কথা। রিম্পির ইউএসএ যাওয়ার কথাটা মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গেছিলো। চোখমুখ মুছে ফোনের ডাটা চেক করে ফোনটা পাশে রেখে দিলো যেন রিম্পি কল করলেই ধরতে পারে। অপেক্ষা করতে করতে একসময় সুবর্ণা ঘুমিয়ে পড়লো।

ফ্লাইট থেকে নেমেই সোজা নিজেদের নতুন বাড়িতে এসেছে রিম্পি এবং তার হাসবেন্ড। ঠিক নতুন না, বিদেশে আসার এক বছর পরেই এই এপার্টমেন্টটা রিম্পির স্বামী কিস্তিতে কিনে নেয়। কিন্তু রিম্পি আজই প্রথম পা দিলো এই বাড়িতে। নিজের নতুন সংসারে নতুন জায়গায় অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছিলো রিম্পির। রিম্পির হাসবেন্ড তুষার ফ্রেশ হয়ে পাশেই একটা গ্রোসারি শপে নিজেদের জন্য কিছু খাবার কিনতে গেলো। রিম্পি ফ্রেশ হয়ে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে একটু বিশ্রামের জন্য বসলো। বাবা মাকে কল করে জানিয়ে দেওয়ার জন্য ডাটা অন করতেই রিম্পির মনে পড়লো ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড তার জানা নেই। ঠিক তখনই রিম্পির ফোনে ছোট করে একটা টেক্সট এলো তুষারের নাম্বার থেকে। সেখানে ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ডটা লিখে তুষার টেক্সট করে দিয়েছে। মেসেজটা পেয়েই রিম্পি হেসে দিলো। এই মানুষটার সবদিকে খেয়াল।
ওয়াইফাই কানেক্ট করতেই হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ভয়েস মেসেজ পেলো রিম্পি। চেক করতে গিয়ে দেখলো সুবর্ণা বেশ কয়েকটি মেসেজ পাঠিয়েছে। রিম্পি হেসে দিলো। এই মেয়েটা নিশ্চয়ই এতক্ষণ ধরে তাকে মিস করছে, আর তাই এতগুলো ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছে। হাসতে হাসতে প্রথম ভয়েস মেসেজটা ওপেন করলো রিম্পি। কিছুদূর শুনতেই মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো তার। একে একে প্রতিটা ভয়েস মেসেজ ধৈর্য নিয়ে শুনলো সে।
শেষ মেসেজটা শেষ হতেই রিম্পি খেয়াল করলো পেছন থেকে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরেছে। চমকে তাকাতেই দেখলো তুষার।
" শান্ত হও। আমি আছি তো। আন্টি আর সুবর্ণাকে আমরা বাঁচাবো। সব ঠিক করে দেবো। তুমি শান্ত হও। "
রিম্পি তুষারকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলো।

সুবর্ণলতা [Completed✔️]Where stories live. Discover now