সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষীপর্ব ২৩
★
সুবর্ণা চলে যেতেই সৌরভ নিজের ঘরে কিছুক্ষণ পায়চারি করলো। সৌরভের অবস্থা দেখে রাফি বলেই উঠলো,
" আরে ভাই এত প্যারা নিচ্ছিস কেন? ও যদি শোনেও কি হবে তাতে? বরং ভালোই তো হবে। সত্যিটা তো ওর জানা দরকার। "
" উফ রাফি। তুই বুঝতে পারছিস না। ধুর। তুই বস আমি আসছি।"
নিজের ঘর ছেড়ে দ্রুত পায়ে সুবর্ণার ঘরের দিকে ছুটলো সৌরভ।কাশফিয়া রহমান মেয়ের ঘরেই বসে ছিলেন। মেয়েকে ঘরে ঢুকতে দেখে একটু নড়েচড়ে বসলেন।
" কিরে মা! মুখটা হঠাৎ অমন শুকিয়ে গেলো কেনো? আর সৌরভকে বলেছিস বিকেলে যাওয়ার কথাটা?"
সুবর্ণা ধীর পায়ে এগিয়ে বিছানার এক কোণে বসলো।
" না মা বলিনি। আসলে ও তো ওর বন্ধুর সাথে কথা বলছিলো। তাই আর মাঝখানে ঢুকে এসব বলতে পারিনি। তাই চলে এলাম।"
কাশফিয়া রহমান মেয়ের দিকে তাকিয়ে মেয়েকে দেখলেন। এই অল্প সময়ের ভেতরে কিছু একটা হয়েছে যা তার মেয়ে লুকানোর চেষ্টা করছে। কি অদ্ভুত বিষয়। মানুষ স্মৃতি ভুলে গেলেও নিজের অভ্যাসগুলো ভুলে যায় না। কাশফিয়া রহমান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মেয়েটার সুস্থ হয়ে ওঠা খুব জরুরি।
" আসবো?"
বাইরে থেকে সৌরভের গলা পেয়ে মা মেয়ে দুজনেই দরজার দিকে তাকালো।
" আরে সৌরভ বাবা! এসো না। বাইরে কেনো।"
সৌরভ ভেতরে ঢুকে একটা চেয়ার টেনে বিছানার কাছে বসলো।
" সুবর্ণা!"
সুবর্ণা ডাক শুনে চমকে উঠলো৷ যা কারোরই চোখের আড়াল হলো না। সৌরভ কারণ খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেই আর সেদিকে কথা বাড়ালো না।
" তুমি কি কিছু বলতে গিয়েছিলে আমার ঘরে? কিছু না বলেই চলে এলে। তাই শুনতে এলাম।"
সুবর্ণা এবার মায়ের দিকে তাকালো। কাশফিয়া রহমান নিজেই সৌরভকে বললো,
" আসলে বাবা আমি সুবাকে নিয়ে একটাবার আমাদের পুরোনো ফ্ল্যাটে যেতে চাই। আজই। যদি তুমি নিজে যেতে আমাদের খুব উপকার হত।"
" এমা ছিছি। এভাবে বলছেন কেনো আন্টি। আপনি আমাকে জাস্ট হুকুম করুন। কোথায় আর কখন যেতে হবে। বান্দা হাজির।"
সৌরভ হাত নেড়ে নেড়ে অভিনয় করে শেষের কথাটা বললো। আর এই দৃশ্য দেখে সুবর্ণা হঠাৎই খিলখিল করে হেসে উঠলো।
সুবর্ণার হাসি শুনে কাশফিয়া রহমান মেয়ের দিকে মায়াভরা চোখে তাকালেন।
" কত্তদিন পড় তুই এভাবে হাসলি। এই হাসিটার জন্য কতগুলো দিন অপেক্ষা করে ছিলাম। "
সুবর্ণার এবার কান্না পেয়ে গেলো কিন্তু কান্না করলো না। ও এই সুন্দর মুহুর্তটাকে নষ্ট করে দিতে চায় না। শুধু মনে মনে ভাবলো, সব ভুলে যাওয়ার আগে তার জীবনটা না জানি কত সুন্দর ছিলো। অথচ তার কিচ্ছু মনে নেই।