সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষীপর্ব ২৮
★
ইন্সপেক্টর কৌশিক আহমেদ অনেকক্ষণ ধরেই বসার ঘরে বসে আছেন। একটু আগে একজন কাজের লোক এসে এক কাপ চা দিয়ে গেছেন। এরপর আরেকজন এসে অনেক নাস্তা দিয়ে গেছেন খাওয়ার জন্যে। কিন্তু কাজের লোক ছাড়া এখন পর্যন্ত এই বাসায় কোনো মানুষ দেখেননি কৌশিক আহমেদ।
কৌশিক আহমেদ সময় কাটানোর জন্যেই বসার ঘরটা ঘুরেফিরে দেখতে লাগলেন। বাড়িটা বাইরে থেকে দেখে যতটা বড় মনে হয়, ভেতরে ঢুকলে বোঝা যায়, বাড়িটা তারচেয়েও বড়। ইনভেস্টিগেশনের কাজে অনেক মানুষের বাড়িতেই যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তার, কিন্তু এই ধরনের সৌখিন বাড়ি খুব কমই চোখে পড়েছে। এই বাড়ির প্রতিটা কোণা একদম ঝকঝকে পরিষ্কার। কৌশিক আহমেদ বুঝলেন এবাসায় কাজের লোকগুলো ঠিকঠাক কাজ করে। শুধু বসে বসে ঝিমায় না। যদিও এখন পর্যন্ত যে দুজনকে দেখেছেন, দুজনেরই বয়স বেশি। কিন্তু বেশ চটপটে আর কাজের ধরন দেখে মনে হয় অনেক বছর এই বাড়িতে আছেন। কৌশিক আহমেদ একটু বিরক্ত হলেন, কারণ তিনি এসেছেন প্রায় আধা ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে, এখনো বাড়ির কোনো মানুষ তার কাছে আসেনি। কাজের দুজন লোক এসেছিলো, দুজনকেই বলা হয়েছে যেন ভেতর থেকে কাশফিয়া রহমানকে ডেকে দেওয়া হয়। কিন্তু আদোও বলা হয়েছে কি না, তিনি ঠিক বাড়িতেই এসেছেন কি না কিছুই বুঝতে পারছেন না তিনি। কৌশিক আহমেদের বিরক্তি ক্রমশ বাড়ছিলো। তিনি এবার পায়চারী শুরু করলেন। বিরক্তি কমানোর চেষ্টা যাকে বলে।
" খুব বিরক্ত হয়ে গেছিস না রে?"
পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে সিড়ির দিকে তাকালেন কৌশিক আহমেদ। একজন ভদ্রমহিলা পড়নে হালকা শেডের শাড়ি, মাথার চুলগুলো অনেকটাই পেকে গেছে। কিন্তু চেহারার সৌন্দর্য এখনো আগের মতই। কৌশিক আহমেদের বুঝতে বাকি রইলো না ইনিই কাশফিয়া রহমান।
কাশফিয়া রহমান সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলেন।
" অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে দিলাম তোকে। বোস না। দাঁড়িয়ে কেনো? আসলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম একটু। তাই ওরা কেউ ডাকতে সাহস পাচ্ছিলো না। কিছু মনে করিস না ভাই।"
কাশফিয়া রহমান নিজে সোফায় বসতে বসতে কৌশিক আহমেদকে হাতের ইশারায় বসতে বললেন। কৌশিক আহমেদ লক্ষ্য করলেন তার বিরক্তি হুট করেই চলে গেছে।
" তুই তো দেখছি বুড়ি হয়ে গেছিস কাশফি।"
" তুই কিন্তু আগের মতনই আছিস কৌশিক। একদম ভার্সিটি লাইফের মতই। "
" তা বলতে পারিস। বিদেশের জল আর হাওয়া একবার গায়ে লাগলে বুড়ো হতে সময় লাগে। তাছাড়া তোর ভাবীকে তো জানিসই। সব সময় খাবার নিয়ম করে দেবে। নিয়ম করে ওয়ার্ক আউট করাবে। এতদিন শুধু আমাকে করাতো এখন বাবা ছেলে দুটোকেই করায়। হা হা হা"
কৌশিক আহমেদ এর কথায় দুজনেই হেসে ফেললো।
" তুই কিন্তু একদম বদলাসনি কৌশিক। আগের মতই আছিস। আচ্ছা তোকে সন্ত্রাসীরা ভয় পায় তো? আমার তো মাঝেমধ্যে বিশ্বাসই হয় না যে তুই এত বড় পুলিশ অফিসার হয়ে গেছিস। "
" আর বলিস না। তবে অন ডিউটিতে থাকলে চোখমুখে এমনিতেই একটু রাগী ভাবটা চলে আসে। তা তোর কথা বল না। হঠাৎ তলপ করলি যে? আমি তো দেশে এসেই তোর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কারো কাছেই তোর কোনো খবর পাইনি। শুনেছি শাহরিয়ার ভাইয়ের মৃত্যুটা নাকি স্বাভাবিক ছিলো না? কি হয়েছিলো বল তো? "
কাশফিয়া রহমান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
" বলবো ভাই বলবো। আজকে এসব বলার জন্যেই তোকে ডেকেছি। আমি আর দেরি করতে চাই না। আর এমন পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে যে তোকে ছাড়া আর কাউকে ভরসা করতেও পারছি না। "
কৌশিক আহমেদ অভয় দিলেন।
" কি হয়েছে আমাকে সব খুলে বল তো। "