#15

33 2 0
                                    

সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষী

পর্ব ১৫

সুবর্ণাদের ফ্ল্যাটটা খুব বড় না হলেও ঢাকা শহরের বাড়িগুলোর আন্দাজে বেশ বড়। অনেক খুঁজে এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিলেন শাহরিয়ার কবির। ছোট রুমের বাড়িগুলোতে তার কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসতো। সুবর্ণা ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছে বাবা বদ্ধ জাতীয় জায়গায় বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। অথচ আজ তাকে একা এক অন্ধকার ঘরে থাকতে হচ্ছে।
সুবর্ণা নিজের রুমে বসে বাবার স্মৃতি হাতরে বেড়াচ্ছিলো। বাড়িতে এখন শুধু সুবর্ণা আর রহিমা খালা। মাঝেমধ্যে অবশ্য রহিমা খালার মেয়েটা এসে টুকটাক কাজ করে দিয়ে যায়। সুবর্ণার মাথার চুল আচড়ে দেয়, চুল বেধে দেয়। ঘুমিয়ে গেলে মাথা টিপে দেয়।
মেয়েটার নাম ফুলি। একটা প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। সুবর্ণার বাবাই মেয়েটার লেখাপড়ার খরচ চালায়।
বাড়িটায় সুবর্ণা একা হয়ে যাবে বলেই কিছুদিন ধরে রাতেও থেকে যাচ্ছেন রহিমা খালা।
সুবর্ণা নিজের রুমেই শুয়ে ছিলো। পরিচিত এক কণ্ঠে সুবর্ণা চোখ তুলে তাকাতেই রিম্পিকে দেখতে পেলো। শাড়ি, চুড়িতে যেন এক পরিপূর্ণ নারীকে দেখছে সে। সুবর্ণা কোনোমতে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই রিম্পি দৌড়ে এসে সুবর্ণাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। শত কষ্টের মাঝেও এবার সুবর্ণা হেসে দিলো।
" এই গাধি এই! কই আমি কাঁদবো আর তুই আমাকে স্বান্তনা দিবি তা না নিজেই কেঁদে ভাসাচ্ছিস?"
রিম্পি কথাটা শুনে একটু লজ্জা পেলো। চট করে নিজের চোখমুখ মুছে ফেললো।
" তুই এখানে এভাবে কেনো পরে আছিস বল তো। আমাদের বাসায় গিয়ে থাকলেও তো পারিস। মা অন্তত তোকে দেখে শুনে রাখতে পারে। "
" তার দরকার নেই রে রিম্পি। তাছাড়া পুলিশ সবসময় আমার উপর নজর রাখছে। তোদের বাড়িতে গেলে পরিবেশটা ভালো হবে না।"
রিম্পি যেনো একটু অবাক হলো।
" বাইরে যে দুজনকে ঘুরঘুর করতে দেখলাম তারা পুলিশ ছিলো?"
সুবর্ণা আলতো হেসে সম্মতি জানালো।
" এসব বাদ দে। একাই এসেছিস? "
" হ্যাঁ রে। ও নামিয়ে দিয়ে গেছে। কাল তো আমাদের ফ্লাইট।"
" ওহ হ্যাঁ। ভাইয়ার সাথে তো তোরও ইউএস যাওয়ার কথা। ভুলেই গেছিলাম রে। তা ফিরবি কবে?"
" এবারে একমাসের জন্য যাচ্ছি। গিয়ে চেষ্টা করবো স্টাডি ওখানেই শিফট করানোর। সব ব্যাবস্থা করতে পারলে একমাস পরে এসে আবার যাবো। আর না করতে পারলে এই ইয়ার কম্পলিট করে তখন যাবো।"
কথাটা শুনে সুবর্ণার মন খারাপ করে উঠলো। ওর জীবনে একেরপর এক যা ঝর বয়ে চলেছে, রিম্পি আর মা বাবা ছিলো বলেই সব সামলে উঠতে পেরেছে। এখন তো বাবাও নেই। আর মা থেকেও নেই। এর মাঝেই রিম্পির চলে যেতে হলো।
রিম্পি যেনো সুবর্ণার মনের কথা পড়ে ফেললো।
" বিশ্বাস কর, বিয়ের আগে যতটা আগ্রহ ছিলো, বিয়ের দিন থেকে যা সব ঘটে চলেছে তোর জীবনে, আমার একদমই যেতে ইচ্ছে করছে না। ইভেন তোর ভাইয়াও বলছে খুব কষ্ট লাগলে যেনো থেকে যাই। তোকে এভাবে ফেলে আমি দম বন্ধ করেই মারা যাবো মনে হচ্ছে "
রিম্পির কথা শুনে সুবর্ণা নিজেকে সামলে নিলো। বান্ধবীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,
" চুপ পাগলি। কিচ্ছু হবে না। তুই যা তো। আর তাছাড়া আমরা কত প্ল্যান করে রেখেছিলাম বলতো? তুই ইউএস থেকে আমার জন্য কি কি আনবি কত্ত লিস্ট? আজ বাদে কাল তোর ফ্লাইট আর এখন এসব কি বলছিস? আর এটা ইন্টারনেটের যুগ। একটা ভিডিও কলেই তো আমরা একসাথে। এত ভাবছিস কেনো?"
দুই বান্ধবীর মান অভিমানের পর্ব চলতেই রহিমা খালা নাস্তা নিয়ে এলো।

সুবর্ণলতা [Completed✔️]Where stories live. Discover now