#24

41 4 0
                                    

সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষী

পর্ব ২৪

" আমি প্রীতম। প্রীতম হক। বাবা মায়ের দুইমাত্র সন্তান আর একমাত্র ছেলে। জি। মানে হচ্ছে আমার একটা বড় বোন আছে।
এইটুকুই আমার ভূমিকা। যদিও আমি জানি না এই ডায়েরিতে ভূমিকা লেখার কি দরকার। কিন্তু যার জন্যে যার কথায় এই ডায়েরি লেখা, তার কড়া নির্দেশ। যতবারই আমি লিখতে বসবো উপরে যেন অবশ্যই ভূমিকা দিয়ে আমার পরিচয় লিখি। এতে নাকি আমার লেখাগুলো একটু বড় হয় আর সে আমার লেখা পড়ে আমার ফেইস কল্পনা করার চেষ্টা করে। কি অদ্ভুত।
আসলে এইসব ডায়েরি লেখা আমার কর্ম নয়। জীবনে লিখিওনি। কিন্তু আমার জীবনের রাণী স্কুল লাইফে থাকার সময় এই আইডিয়া বের করেছিলো। যখন স্কুল ছুটি থাকবে, তখন আমরা একে অপরের জন্যে লিখবো। সে অনেক কিছু লিখতে পারলেও আমি অতকিছু লিখতে পারতাম না। তবে আজ অনেক দিন পর আমি নিজের ইচ্ছাতেই লিখছি আর মন থেকে লিখছি। লেখার কারণ এই যে আপাতত আমি একটা ভুল কাজ করে হাসপাতালে রয়েছি কিন্তু ভুল স্বীকার করার সুযোগ পাচ্ছি না৷ "
সুবর্ণা এইটুকু পড়া শেষ করে দেখলো বাকি পেজগুলোতে  বড় বড় করে শুধু সুবর্ণা, সুবর্ণা লেখা। সুবর্ণা ডায়েরিটার পেজ উলটে পালটে দেখলো। শেষ পাতায় কিছু লেখা চোখে পড়তেই পড়া শুরু করলো আবার।
" শোনো সুবর্ণা আমি জানি আমি ভুল করছি। কিন্তু কেন করছি বলো? তোমার জন্যেই তো তাই না। এইযে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো, আমি মরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কেন করলাম? তোমার জন্যেই তো। এই-যে আমি এখন হাসপাতালের বেডে৷ কার জন্যে? তোমার জন্যেই তো। তুমি যদি কাল বিয়েটা করতে তাহলে আজ আমাদের বাসর হত, একটা ছোট্ট সুন্দর সংসার হত৷ কিন্তু না। কে তোমাকে কি বললো আর তুমি কি বুঝলা, বিয়েটা ভেঙে দিলা। এগুলা আমাকে কষ্ট দেয় তুমি জানো না? তুমি তো জানোই আমার রাগ বেশি। আমাকে সামলানোর জন্য তোমাকে দরকার। তাহলে সবসময় আমার সাথে এমন করো কেন? আর মানলাম আমি ভুল করছি, তাই বলে একটাবার আমার সাথে দেখা করতেও আসলা না? এমন কেন করো আমার সাথে? তুমি জানো আমি রোজ বাবা মাকে জিজ্ঞাসা করি তুমি আসছো কি না, তুমি আসলেই যেন আমার কেবিনে পাঠায় দেওয়া হয়। কিন্তু তুমি তো আসলাই না। আমি কত কষ্ট পাইছি তুমি জানো? না জানো না৷ তুমি আসলে কিছুই জানো না। তোমার কাছে তোমার বাবা মা-ই সব। আমি তো কিছুই না। ভালোবাসলে আমাকে এত কষ্ট দিতা না। ঠিকই আমার মনের কথা বুঝতা। "
সুবর্ণা লেখাটা পড়ে শেষ করলো। কিন্তু আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না। লেখাগুলো কেমন অদ্ভুত। রিম্পিও এই প্রীতম নামের ছেলেটার ব্যাপারে বলেছিলো। স্কুল লাইফ থেকেই নাকি তার আর প্রীতম নামে একটা ছেলের সম্পর্ক আছে। কিন্তু এই অল্প কয়েকটা লাইন পড়েই তো সুবর্ণার মনে হচ্ছে ছেলেটার মাঝে সমস্যা আছে। কেমন শুধু নিজের সাইডে কথা বলছে।
সুবর্ণা নিজের মনেই ভাবছিলো। হঠাৎ পেছন থেকে পরিচিত গলার আওয়াজ পেলো।
" সুবর্ণা তুমি এখানে? থ্যাংক গড। আমি আর আন্টি তোমাকে কতক্ষণ ধরে খুঁজছি।"
সৌরভ আর মা-কে টেনশনে দেখে সুবর্ণা ঝটপট ডায়েরিগুলো নিজের হ্যান্ড ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো।
" আমার বোঝা উচিত ছিলো তুই এই রুমে থাকবি।" কাশফিয়া রহমান মেয়ের কাছে এসে দাঁড়ালেন।
" মস্তিষ্ক যতই ভুলে যাক, মনের একটা টান তো থাকেই। নিজের ঘর, নিজের বাড়ি, নিজের মানুষের প্রতি টান এক অদ্ভুত জিনিস। "
সুবর্ণা কোনো উত্তর দিলো না।
" অনেক হয়েছে। আজ চল ওইবাড়ি যাই। আবার একদিন না হয় আসা যাবে।''
" মা আমরা এই বাড়িতে কেন থাকছি না? "
মেয়ের প্রশ্নে অবাক হলেন না কাশফিয়া রহমান। যেন তিনি জানতেন মেয়ে এমন কিছুই জিজ্ঞাসা করবে।
" এমন কিছু কারণ আছে যার জন্য এই বাড়িটা এই মুহূর্তে তোর বা আমার কারো জন্যেই সেফ না। এইযে এখন আমরা এলাম এই বাসায়, এটাও ভীষণ রিস্কের ছিলো। তবে হ্যাঁ, তোর যেদিন সব মনে পড়ে যাবে, তারপর আমরা কঠিন কিছু স্টেপ নেবো৷ তারপর আবার আমরা এই বাসায় থাকবো। এবার চল, রাত হয়ে গেছে৷ বাড়ি যাই।"
সুবর্ণা কি বুঝলো কে যানে। কিন্তু পালটা আর কোনো প্রশ্ন করলো না। চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

সুবর্ণলতা [Completed✔️]Tahanan ng mga kuwento. Tumuklas ngayon