#38

38 5 0
                                    

সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষী

পর্ব ৩৮

কেটে গেছে আরো পাঁচটি বছর।
এই পাঁচটি বছর যেন প্রত্যেকের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
বাশার হকের শাস্তি হয়েছে৷ সে এখন জেলে নিজের জীবনের শেষ সময়টুকু কাটাচ্ছে৷ জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে নিজের করা সব ভুলের প্রায়শ্চিত্ত সে একাই করছে৷
কিরণ অতিরিক্ত মদ্যপান করায় হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। কেউ খোঁজও নিতে যায়নি তার।
বাবা জেলে যাওয়ার পর থেকেই প্রীতম একদম একা হয়ে গেছে৷ বাবার টাকা আর ক্ষমতার লোভে যারা তার আশেপাশে বন্ধু সেজে ছিলো, তারা সবাই নিজেদের আসল রূপ দেখিয়ে দিয়ে প্রীতমকে একা করে দিয়ে চলে গেছে৷ বাবা জেলে যাওয়ার পর কোর্ট থেকে অনেক অবৈধ একাউন্ট সিস করে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রীতমের যখন তখন টাকাপয়সা পাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
এরমাঝে একবার অবশ্য প্রীতম দেশে ফিরেছিলো। পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ করে নিজেরটুকু বিক্রি করে টাকাপয়সা নিয়ে দেশেই নতুন করে নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে শুরু করেছে। প্রথম দুই বছর প্রচন্ড কষ্ট করে এখন কষ্টের ফল পাওয়া শুরু করেছে প্রীতম।
রেহানা এখন সুবর্ণলতাতেই থাকে। নিজের ভাগের সম্পত্তির অর্ধেক সুবর্ণলতায় দান করে দিয়েছে আর বাকিটা নিজের ব্যাংক একাউন্টে রেখেছে।
রেহানা নিজের পুরো সম্পত্তিটাই দিয়ে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু সুবর্ণা কিংবা সৌরভ কেউই রাজি হয়নি। ওরাই জোর করে বাকি সম্পত্তির টাকা ব্যাংকে রেহানার নামে রেখে দিয়েছে।
রেহানা এখন সুবর্ণলতার একটা বড় দ্বায়িত্বে আছে। নিজের বাচ্চাকে হারিয়ে সে এখন সুবর্ণলতার অনেকগুলো বাচ্চার মা। রেহানা আর সুবর্ণা দুজনে মিলে সুবর্ণলতায় নতুন একটু সেগমেন্ট ওপেন করে বাচ্চাদের। দেখানে অনাথ বাচ্চাদের দেখাশোনা করা হবে।
সৌরভ বয়স বাড়ার সাথে সাথে সাথে আগের থেকেও যেন হ্যান্ডসাম আরো হয়েছে৷ সৌরভের বিজনেসও দারুণ চলছে। সৌরভ তার বড় বাড়িতে আরো একজন নতুন সদস্যকে পার্মানেন্ট করেছে। সে হচ্ছে রহিমা খালা। সৌরভের রান্নাবান্না আর খাবারের দিকটা সেই দেখে। যেন একদম নিজের মা।
সুবর্ণা এখন পুরো নারী৷ চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। একরাশ কালো চুলের মাঝে একটা দুটা পাকা চুল। সুবর্ণা এখন তার নিজের বাসায় থাকে৷ রহিমা খালার মেয়ে ফুলি, সুবর্ণা আর ছোট্ট তুবা।
তুবাকে সুবর্ণা তার সুবর্ণলতার শিশু শাখা থেকে দত্তক নিয়েছে দুবছর হলো। মেয়েটার বয়স তখন তিন বছর ছিলো। এখন পাঁচ৷ নিজের একাকিত্ব কাটাতেই সুবর্ণা তুবাকে নিজের করে নেয়।
তুবাকে কেউ একজন সুবর্ণলতার গেটের কাছে ফেলে যায়৷ সুবর্ণার দেখে ভীষণ মায়া হয়। আর যেহেতু সুবর্ণা ভালো করেই জানে সে কখনো মা হতে পারবে না, তাই এই সুযোগ সে হাতছাড়া করেনি।
তুবা সুবর্ণার পুরো বাড়ি একদম মাতিয়ে রাখে। সুবর্ণাও তুবা বলতে একদম পাগল। তবে সে ঠিক করে রেখেছে, তুবার যখন আঠারো বছর হবে, তখন তাকে সত্যিটা জানাবে এবং সে যদি চায় তার আসল বাবা মাকে খুঁজে বের করতে পারে।

সুবর্ণলতা [Completed✔️]Where stories live. Discover now