#7

47 5 0
                                    

সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষী

পর্ব ৮

চারিদিকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরছে। এমন অসময়ের বৃষ্টিগুলো খুব খারাপ হয়। মানুষের মন খারাপ করে দেওয়া আবহাওয়া। প্রীতম ঝটপট নিজের ব্যাগে জামাকাপড় গুছিয়ে নিলো। দুইদিন পর ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হবে। আজ না গেলে গুছিয়ে উঠতে একটু কষ্ট হয়ে যাবে এমনটাই বাড়ির সবাইকে বলেছে প্রীতম। সবকিছু গুছিয়ে সব শেষে নিজের ফোনটা পকেটে ভরতেই পেছন থেকে বাবার গলার আওয়াজ পেলো।
" আব্বাজান তৈরি? গাড়ি চলে আসছে। তোমাকে রেলস্টেশন পর্যন্ত নামায়ে দিবে। তারপর তুমি সেখান থেকে তোমার হলে যাইবা।"
প্রীতম বাবার এই ভালোবাসাটুকুতে একটু বিরক্ত হলো। সে চাচ্ছে না বাবার লোকজন তাকে ট্রেন পর্যন্ত ছেড়ে আসুক। এতে তার একটু ঝামেলা হয়ে যাবে। কারণ সে এই মুহূর্তে রাজশাহীতে নয় ঢাকাতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। মুখের ভাবভঙ্গী ঠিক করে বাবার দিকে তাকালো প্রীতম,
" এসবের কি দরকার ছিলো বাবা? আমি তো একাই যেতে পারবো।"
" দরকার আছে আব্বা। গ্রামের রাস্তাঘাট ভালো না। তাছাড়া এই অসময়ের বৃষ্টিও ভালো না। আমার লোকজন থাকতে তুমি একা স্টেশন পর্যন্ত যাইবা এইটা আমি কেমনে মাইনা নেই বলো তো।"
বাবা ছেলের কথার মাঝেই মোহসিনা বেগম ঘরে ঢুকলেন।
" আব্বাজান যাইতেছো? তৈরি?"
" হ্যাঁ মা। যাচ্ছি। তুমি সাবধানে থেকো। আমি আবার ছুটি পেলেই চলে আসবো।"
মোহসিনা বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। এই দৃশ্য দেখে বাশার হক খানিকটা বিরক্তই হলেন।
" আহা করো কি মোহ! করো কি! পোলাটা আমার যাইতাছে আর তুমি যাওয়ার মুখে এইভাবে কানতে লাগলা? দেখি ছাড়ো তো ছাড়ো। চল আব্বাজান চল। দেড়ি হইতাছে।"
প্রীতম মাকে ছেড়ে নিজের ব্যাগটা কাঁধে নিতেই কিছু লোক দ্রুত প্রীতমের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। প্রীতম জানে এরা তার বাবার লোক। সবসময় বাবার খাতিরযত্ন করার জন্য তৈরি থাকে। কথা না বাড়িয়ে প্রীতম বাবা মাকে সালাম জানিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলো।
মোহসিনা বেগম আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে ছেলের যাওয়া দেখলেন। প্রতিবার বাড়ি ছেড়ে হলে যাওয়ার সময়ই তিনি এই কাজটা করেন। কারণ ছেলে যতদিন বাড়িতে থাকে ততদিনই যেন সে আনন্দে থাকেন। মোহসিনা বেগম বাড়ির ভেতরে ঢুকে যেতেই একজন চ্যালা মতন লোক বাশার হকের পাশে এসে দাঁড়ালেন।
মুখে চাবানো পানের অবশিষ্টাংশ থু থু করে ফেলে দাত বের করা হাসি দিয়ে বাশার হকের দিকে তাকালেন।
" বুঝলা কিরণ, ছেলে আমার বড় হইলেও বুদ্ধি হয় নাই। এখনো সেই বাচ্চাটাই আছে। না হইলে আমার পোলা হইয়া একটা মাইয়ার জন্যে কেউ এমন পাগলামি করে?"
কিরণ নামক লোকটার ইশারায় বাড়ির ভেতর থেকে একজন লোক এসে দুটো চেয়ার দিয়ে চলে গেলো। দুজনে চেয়ারে বসতেই কিরণ নামক লোকটি মুখ খুললেন,
" কিন্তু সাহেব, আপনে যে আব্বাজানের ফোনের সিম উল্টাপাল্টা কইরা দিছিলেন, শহরে গেলেই তো প্রীতম আব্বাজান ধইরা ফালাইবো। তখন কি করবেন?"
বাশার হক এবার উচ্চস্বরে হাসতে লাগলেন।
" কিরণ! তুমি সেই ছোট্টবেলা থেকা আমার সাথে আছো। তাও আমারে চিনতে পারলা না? আমি অশিক্ষিত হইতে পারি, কিন্তু বহুত শিক্ষিত ছেলেপেলে আমার হাতের ইশারায় ওঠে আর বসে৷ কাল রাইতে প্রীতম ঘুমানোর পরেই আমি তার ফোনের সিম আবার আগের মতন ঠিকঠাক কইরা দিছি। আমার পোলা শহরে যাইয়া যখন ফোন বাইর করবে, দেখবে ফোনে ঠিকই নেটওয়ার্ক আছে। পোলায় আমার জানতেও পারবো না আমিই তারে ইচ্ছা কইরা ওই মাইয়ার সাথে যোগাযোগ করতে দেই নাই।"
" কিন্তু সাহেব! আব্বাজান যদি এখন ঢাকায় যায়? তখন?  যদি ওই মাইয়া সব কইয়া দেয়? "
" আহহা কিরণ। তুমিও না। সুবর্ণা মায়ের বাবা এখন হাসপাতালে। মৃত্যুর সাথে লড়াই করতেছে। তার কি আর সেইসব কথা বলার সময় আছে নাকি? আর আমার পোলারে তো আমি চিনি। ও এখন ঢাকাতেই যাইতাছে। কোনো সমস্যা নাই কিরণ। যদি ওই মাইয়া আর ওর বাপ বেশি বাড়াবাড়ি করে, তখন আমি তো আছিই দেখার জন্যে। তুমি এত চাপ নিও না।"
কিরণ নামক লোকটা এবার উচ্চস্বরে হেসে দিলেন। জোরে জোরে ডাকতে থাকলেন মোহসিনা বেগমকে, " ভাবী দুইকাপ চা দিয়া যান। আপনার চায়ের বড্ড তিয়াস লাগছে "

সুবর্ণলতা [Completed✔️]Where stories live. Discover now