সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষীপর্ব ১২
★
" কাল রাতে বের হতে পারবা? প্লিজ?"
" রাতে? রাতে কিভাবে বের হবো বলো তো। সন্ধ্যার ভেতরেই তো বাড়িওয়ালা আংকেল মেইন গেটে তালা দিয়ে দেয়। "
" তাহলে ছাদে? একটাবার প্লিজ। এটা আমাদের প্রথম এনিভার্সারি। আমাদের সম্পর্কের একবছর। প্লিজ জান প্লিজ।"
" ইশ প্রীতম তুমি বুঝতে পারতেছো না। অত রাতে আমি কিভাবে ছাদে যাবো? একা একা ভয় তো পাবোই তাছাড়া কেউ যদি দেখে ফেলে আমাকে জানে মেরে ফেলবে। ধুর রাতে কিছুতেই পারবো না।"
" ধুর। কাল কেন এক্সাম হলো না। তাহলেই দেখাটা হত। আচ্ছা কাল দিনে? "
" নাহ। পরশুদিন এক্সাম আছে মা জানে। মাকে যদিও কিছু বলে মেনেজ করা যেতো, বাবাও বাসাতে আছে। কখনোই না। "
" ধুত। এটা কিছু হলো বলোতো। সামনের বছর তো আরো একসাথে থাকার চান্স নাই। আমি কলেজে আর তোমার ক্লাস টেনের বছর। এটাই বেস্ট সুযোগ ছিলো। আচ্ছা একটা কাজ করতে পারবা? ভোরে বাসা থেকে বের হতে পারবা? তোমাদের বাসার পাশের রাস্তাটায়। দশ মিনিট হলেই হবে। শুধু একটাবার দেখা করবো। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।"
" আচ্ছা ঠিক আছে আমি চেষ্টা করবো। বাড়িওয়ালা আংকেল ফজরের নামাজটাও মসজিদে পড়েন। উনার পিছুপিছু আমিও বের হয়ে যাবো। আর ধরা পরে গেলে বলবো হাটতে বেড়িয়েছিলাম। "
" আর রাত ঠিক বারোটায় বারান্দায় দাঁড়াবে। আমরা একসাথে এনিভার্সারি সেলিব্রেট করবো।"
" একসাথে মানে? এই প্রীতম আবার কি প্ল্যান করতেছো?"
" অতশত তোমার বোঝা লাগবে না। বাড়ি যাও।"প্রীতম আর সুবর্ণার অবুঝ ভালোবাসার একবছর ছিলো পরেরদিন। তখন দুইজনেরই স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিলো। পরীক্ষা শেষ করে কিছুটা সময় একসাথে গল্প করে কাটাতো। তারপর যে যার বাড়িতে।
স্কুল থেকে ফিরে সুবর্ণা ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে বিছানায় যায়। কিন্তু সেদিন যেনো ঘুম আসে না। পরের দিনটা কল্পনা করতে করতেই সময় কাটে সুবর্ণার। দেখতে দেখতেই একবছর কেটে গেছে তা নিয়ে ভাবতে থাকে সে
।
বিকেলে কিছুক্ষণ পড়াশোনা করে একটু নাস্তা খেয়ে রাতে আবার পড়তে বসে যায়। রাতে সবাই খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়। দেখতে দেখতেই রাত বারোটা বেজে যায়। সুবর্ণা নিজের বারান্দায় দাঁড়াতেই চমকে উঠেছিলো সেবার।
সুবর্ণাদের বাসাটা একটু কোণাকুণি। আর সুবর্ণার রুমটা যে কোণায় তার সামনে একটা রাস্তা গেছে। রাস্তার পাশে একটা ছেলে ছোট্ট একটা কেক আর মোম ধরিয়ে সুবর্ণার দিকে তাকিয়ে আছে। দোতলা থেকে এত রাতেও নিয়নের হালকা আলোতে ছেলেটাতে চিনতে সেদিন কষ্ট হয়নি সুবর্ণার। প্রীতমের এই পাগলামিগুলোই ভালো লাগতো সুবর্ণার। কি ভয়ংকর সাহস ছেলেটার। দূর থেকে সুবর্ণা ফু দেওয়ার ভান করলো আর প্রীতম ফু দিয়ে কেকের উপরে রাখা জ্বলন্ত মোমটাকে নিভিয়ে দিলো।
সুবর্ণা দেখলো আশেপাশে কোনো মানুষ নেই। প্রীতম রাস্তার পাশেই বসে পড়লো। সারারাত একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়েই কেটে গেলো। সুবর্ণা বারান্দার গ্রিলে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো কখন ফজরের আজান দেবে আর কখন গেটের তালা খুলবে। অবশেষে সুবর্ণার অপেক্ষার অবসান হলো। রাত তিনটার দিকে সুবর্ণা টের পেলো সিড়ি দিয়ে কেউ নামছে। দৌড়ে নিজেদের বাসার দরজা খুলে দেখলো উপর তলার আংকেল সাথে তার বড় মেয়েকে নিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছিলো। তারপর সুবর্ণার মনে পড়লো আজকেই তো আংকেলের মেয়েটার দেশের বাইরে একটা ট্রীপে যাওয়ার কথা ছিলো। তাই হয়ত এত রাতে ফ্লাইট। মনে মনে ভীষণ খুশি হলো সুবর্ণা। নিজেদের দরজাটা আস্তে করে বাইরে থেকে লাগিয়ে চুপিচুপি সিড়ি দিয়ে নেমে এক দৌড়ে প্রীতমের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছিলো সেদিন।
ঘটনার আকস্মিকতায় প্রীতম হতবাক হয়ে গিয়েছিলো।
কিছুক্ষণ পর সুবর্ণা লজ্জা পেয়ে নিজেই প্রীতমকে ছেড়ে দেয়। আর এত তাড়াতাড়ি আসতে পারার ঘটনাটা জানায়। এরপর দুজনে মিলে কেক কেটে একে অপরকে খাইয়ে দিয়ে আবার এক দৌড়ে বাড়ি চলে আসে সুবর্ণা। প্রীতম যদিও আরো কিছুটা সময় থাকতে বলেছিলো, কিন্তু সুবর্ণার আর সাহস হচ্ছিলো না।