সুবর্ণলতা
- মেহেরুন নেছা হিতৈষীপর্ব ৪
★
" তখন আমি সবে ক্লাস ফাইভের সমাপনী পরীক্ষা শেষ করে ক্লাস সিক্সে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার বাবা একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। প্রতি বছরের শেষের দিকে বাবা অফিস থেকে সরকারি ডায়েরি, ক্যালেন্ডার উপহার হিসেবে পেতেন। মাঝেমধ্যে কাঠের কিংবা রঙ বেরঙের টেবিল ডায়েরি পেতেন, সেগুলো আমি নিজের ঘরে এনে রাখতাম। ডায়েরির প্রতি আমার কখনোই তেমন একটা লোভ ছিলো না। আমার দশম জন্মদিনে বাবা আমার হাতে প্রথমবারের মতন রঙিন একটা ডায়েরি এবং একটা কলম গুঁজে দিলেন। আর বললেন, ' সুবা! ছোটবেলা থেকেই তুমি বড্ড অভিমানী আর নরম মনের মেয়ে৷ কষ্ট পেলে কাউকে বলতে চাও না। ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে আশেপাশের ছেলেমেয়েরা তোমায় ইচ্ছে করে ধ্বাক্কা দিতো। তুমি চুপচাপ ঘরে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে। আমাদের কিচ্ছু জানাতে না। আর কোনো কারণে জিদ চাপলে তো কথাই নেই৷ নিজের মনের অনেক কথাই তুমি কাউকে বলতে পারো না। এখন তুমি বড় হচ্ছো। এবার থেকে প্রতি জন্মদিনে আমি তোমাকে একটা করে পেন আর ডায়েরি দেবো। তোমার যা ইচ্ছে তুমি সেগুলোতে লিখবে। সারাজীবন তো আর আমি কিংবা তোমার মা থাকবো না, অন্যরা তো আমাদের মতন করে তোমার সমস্যা, অভিমান, অভিযোগ নাও বুঝতে পারে৷ ডায়েরিগুলোই হবে তখন তোমার সঙ্গী। '
আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম সেবার। লেখালেখির ব্যাপারে আমার কোনো ঝোঁক নেই। মন খারাপ লাগলে কাউকে সেভাবে বলিনা যেমন, তেমনি আহ্লাদ করে সেগুলো লিখে রাখবো ভাবতেও হাসি পাচ্ছিলো। কিন্তু বাবার ভালোবেসে দেওয়া উপহার আমি না গ্রহণ করে থাকি কিভাবে! উপহারটা স্বযত্নে আমার পড়ার টেবিলে রেখে দিলাম। এরপর থেকে বাবা আমাকে প্রতি জন্মদিনেই বিভিন্ন ডিজাইনের রঙ বেরঙের ডায়েরি এবং পেন গিফট করতো৷
দেখতে দেখতে ক্লাস সিক্স সেভেন পার করলাম। প্রতিদিন টুকটাক অনেক ঘটনাই ঘটতো। কখনো ডায়েরি লেখার মতন ইচ্ছে হয়নি। বেশ কয়েকবার লিখতে চেষ্টাও করেছি। কিন্তু কি লিখবো খুঁজেই পাইনা। লিখতে বসলেই শুধু হাসি পেতো।
এরপর হঠাৎ অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটলো আমার সাথে।