পর্ব ৩২

359 33 5
                                    

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখা - #AbiarMaria

#৩২

প্রিয়ন্তি পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদের মতো ওর কাছে এই বিষয়টা কঠিন লাগে না। ভবিষ্যতে কি এই বিষয়েই পড়াশোনা করা হবে? কে জানে! এখনো মেট্রিক পরীক্ষা দিতে পারল না, বিয়েটাও করতে পারল না, সব যায়গায় ঝুলেই থাকলো, সেখানে এত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করা মানে গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল! প্রিয়ন্তি মনোযোগ দিয়ে পড়তে পড়তে আচমকা ফোনের রিঙটোন শুনে রীতিমতো লাফিয়ে ওঠে। স্ক্রিনে বাবার নাম দেখে তাড়াতাড়ি ফোন কানে ঠেকায়।
"জ্বী আব্বু!"
"কি করছিস?"
"আব্বু পড়ছিলাম"
"কাল কি পরীক্ষা?"
"ফিজিক্স"
"এরপর পরীক্ষা শেষ?"
"না, এরপর প্র‍্যাকটিকেল পরীক্ষা আছে"
"আচ্ছা ঠিক আছে। তুই ব্যাগ গুছিয়ে রাখিস, কাল বাসায় নিয়ে আসবো"
রাব্বানী সাহেব এর বেশি কিছু না বলে কল কেটে দেন। প্রিয়ন্তির ওর আম্মু আর বোনদের কথা খুব মনে পড়ছিল। মাঝে মাঝে কান্নাও পেত, কখনো মাকে ছাড়া এভাবে দূরে থাকে নি তো! একবার মনে হয়, বিয়ের পর আসিফের সাথে অন্য বাড়িতে বাবা মাকে আর বোনদের ছাড়া কি করে কাটাবে?

পরদিন বিকালের দিকে রাব্বানী সাহেব এসে মেয়েকে ভাবীর কাছ থেকে নিয়ে যান। প্রিয়ন্তির চাচী বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছেন রাখার, কিন্তু রাব্বানী সাহেব রাখতে রাজী নন। সে এখন মেয়েকে নিজের কাছেই রাখতে চান। বাসায় আসার পর থেকে প্রিয়ন্তীর মা কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলেন না এই ভেবে, কেন তার মেয়ে তার কাছে এ ব্যাপারটা গোপন করলো? প্রিয়ন্তীও তার মাকে বুঝাতে পারছে না ব্যাপারটা কেন আসলেই সে মায়ের কাছ থেকে গোপন করলো! সত্যি বলতে, সে তো আসলে কখনো মাকে নিজের গোপন কষ্টগুলি যে সমস্যাগুলো বলতে শিখেনি!

কয়েকটি শান্তিময় দিন পেরোবার পর প্রিয়ন্তী এক বিকেলে ছাদে যাবার মনস্থির করল। অনেকদিন ধরেই ছাদে যাওয়া হয় না। একবার ভাবলো যাবে না। পরবর্তীতে চিন্তা করল, একলাই তো বাঁচতে হবে, সমস্যা গুলোকে ওকে একাই ফেস করতে হবে! ছাদের এমাথা-ওমাথা হাঁটতে হাঁটতে সে সেখানে আবিষ্কার করে তার এতদিনের সবচাইতে বিরক্তিকর মানুষটিকে। সে প্রিয়ন্তীর দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চেহারাতে সম্ভবত রাগ কিংবা বিরক্তি কিংবা অপেক্ষার প্রহর গোনা জাতীয় একটা অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে। প্রিয়ন্তী একবার ভাবলো ছাদ থেকে নেমে যাবে। তবে পরবর্তীতে ও দাঁড়িয়ে থাকলো। সমস্যা থেকে পালানো যাবে না, সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তাকে মোকাবিলা করতে হবে! বিশাল ওর কাছে এগিয়ে এসে বলল,
"কোথায় ছিলে এতদিন?"
"আপনার তাতে কি?"
"আমার কি? আমি তোমাকে কত খুঁজেছি জানো?"
"আমাকে আপনি খোঁজার কে? আর আপনি আমাকে কেন খুঁজবেন? আপনার জন্য কি আমি শান্তি মত পরীক্ষা দিতে পারব না? আমার ব্যক্তিগত কোন কাজ থাকতে পারে না? আমি অন্য কোথাও যেতে পারি না?! আশ্চর্য!"
"দেখো প্রিয়ন্তী! তুমি এখন থেকে আর কখনো আমাকে না জানিয়ে কোথাও যাবেনা!
"কেন? আপনি আমার কে হন যে আপনাকে জানিয়ে আমার ঘর থেকে বেরোতে হবে?
"আমি তোমার কে হই সেটা প্রশ্ন না। কেউ না কেউ তো একদিন হবই! দেখো, তোমার সাথে আসিফের কখনো বিয়ে হবে না। সেটা আমি কখনো হতে দিব না! আমি থাকতে তুমি অন্য কারো ঘরে যেতে পারবেনা!"
বিশাল কথা গুলো চিবিয়ে চিবিয়ে বলে। পেছন থেকে প্রিয়ন্তির বাবা বলেন,
"তাই নাকি? তা কার ঘরে যাবে? তোমার ঘরে?!"

অপরিণত নিকাহনামা (Complete)Where stories live. Discover now