পর্ব ৪০

434 33 5
                                    

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখা- #AbiarMaria

#৪০

প্রিয়ন্তিকে হাত ধরে টেনে এনে আসিফ একটা রিকশায় উঠে বসল। প্রিয়ন্তির কোমরে হাত দিতেই ও নড়েচড়ে উঠল।
"ইশ, হাত সরাও। মানুষ কি বলবে!"
"আমার বউয়ের গায়ে হাত দিলে মানুষ যদি কিছু বলে তাতে আমার কি?"
"ভালো কথা তোমার বিয়ে হয়েছে। তাই বলে কি যায়গায় বেযায়গায় নির্লজ্জ হতে হবে?"
"আহ, এভাবে বসলে তোমার জন্যই নিরাপদ!"
"আমি শুধু এটার কথা বলিনি। তুমি যে এখলাস ভাইয়ের সামনে এই কাজগুলো করলে, একটুও লজ্জা লাগলো না তোমার?"
"সে যে তোমার সাথে জোর করে ছ্যাচড়ামি করছিল, তখন কি তার লজ্জা লাগছিল? লাগেনি। অথচ আমি কিছু করলেই শুধু লজ্জা পেতে হবে, না?"
"ছ্যাচড়ামি আর বেহায়া হওয়া দুটো আলাদা জিনিস। আমি তোমার বউ, ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে এভাবে বুঝাতে হবে?!"
"আমার বউকে আমার বউ প্রমাণ করার জন্য দরকার হলে আরও একশ বার করব! সমস্যা?!"

প্রিয়ন্তি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। বাসায় না জানি ঐ লোক কি বলেছে, না জানি ওর মা কি কি করেছে! আসিফ যে অর্ধ পাগল হয়ে এসব কাজ করছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রিয়ন্তির মনে বারবার মায়ের মুখ ভেসে উঠছে। না জানি ওর খালা এসব শুনে কি অপমান করে! আসিফ যতই রিকশায় ঘুরিয়ে মন ভালো করার চেষ্টা করুক, প্রিয়ন্তি উদাস হয়ে থাকে পুরোটা সময়।

ঘোরাঘুরি শেষ করে বাসার কাছে আসতেই প্রিয়ন্তি আসিফের হাত চেপে ধরে। চাপা কন্ঠে বলল,
"আমি বাসায় যাবো না!"
"কেন?"
"বাসায় গেলে আম্মু মেরে ফেলবে!"
"কিচ্ছু হবে না। মা বুঝবেই না। আর আমি তো আছি, নাকি?"
"আমি তাও যাবো না"
"আহ, এত ভয়ের কিছু নেই, আসো তো!"

রাব্বানী সাহেব বাসা আসেন তার এক পুরাতন বন্ধুকে নিয়ে। তিনি ওদের কয়েক বাড়ি পরেই থাকেন। রাব্বানী সাহেবের বাসা পেরিয়ে তার বাসায় যেতে হয়, তাই সে সন্ধ্যায় বন্ধুকে না খাইয়ে যেতে দিতে চাননি। ঘরে ঢুকে গিন্নির কাছে গিয়ে বলেন,
"চা নাস্তা দাও তো, আনিস ভাইকে নিয়ে আসছি। আমি হাত মুখ ধুতে গেলাম"
তার গিন্নিকে বলার পরও গিন্নির নড়াচড়া নেই। সে বিছানায় এক কোণায় বসে কপাল হাতে চেপে রেখেছেন। রাব্বানী সাহেব স্ত্রীর দিকে এগিয়ে যান।
"শরীর খারাপ নাকি তোমার?  কি হইছে? মাথা ব্যথা?"
আয়শা কোনো জবাব দেন না। রাব্বানী সাহেব আবার বলেন,
"আপা কোথায়? আজকে না এখলাসকে নিয়ে আসার কথা? চলে গেল নাকি এসেই? কি হলো, কথা বলো?"
আয়শা দুম করে দাঁড়িয়ে পড়েন। স্বামীকে উঁচু গলায় বলেন,
"তুমি যা চাইছ, তাইই হইছে! আমার বোন জেনে গেছে প্রিয়ন্তির এনগেজমেন্ট এর কথা! আমাকে যা তা বলে অপমান করছে! আমি নাকি বাটপার! আমি নাকি মেয়েকে নিয়ে ব্যবসা করতে নামছি! তুমিই বলো, আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হইছে, কিন্তু বিয়ে হওয়ার কোনো নাম নাই। আমি কি মেয়ের বিয়ের চেষ্টা করব না? মা হয়ে কি আমার চিন্তা হয় না মেয়ের জন্য? এই ছেলে যদি বিয়ে না করে, আমার মেয়ের বয়স যদি তখন পার হয়ে যায়, তাইলে ভালো পাত্র পাবো? পাবো আমি?!"
রাব্বানী সাহেব স্ত্রীকে শান্ত করে বসানোর চেষ্টা করতেই সে হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দেয়।
"ইসমাইল সাহেবের ছেলের সাথে বিয়ে নিয়ে তোমরা বাপ বেটি মিলে সিদ্ধান্ত নিছ, আমার মতামত জানো নাই, আমাকে জিজ্ঞাসাও করো নাই! বারবার মানা করছি, তাও শোনো নাই। মেয়ে কোন এক ছেলের সাথে প্রেম করছে, তার সাথেই বিয়ে দেয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছ! এই ভুল মানুষ করে?! তোমার মেয়ে নাইলে ছোট, তুমিও কি ছোট যে মেয়ের সাথে সাথে নাচবা?! আর আমি মা হয়ে কি মেয়ের উপর এইটুকুও অধিকার রাখি না? আমার মেয়ের বিয়ে নিয়ে আমি কি কোনো মতামতই দিতে পারি না?!"
"দেখো, আমি আমাদের মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করছি। ওর জীবন, ওর সুখটাই তো আগে আসা দরকার, আমাদের ইচ্ছা,অনিচ্ছা,মতামত না"
"তোমার ইচ্ছার দাম ঠিকই ছিল। তুমিই মেয়েকে এই যায়গায় বিয়ে দিতে রাজী হইছ! আমি কখনোই রাজী ছিলাম না; না তখন, না আজকে। সব তোমার আর তোমার মেয়ের ইচ্ছা! আমার কোনো দাম নাই এই সংসারে!"

অপরিণত নিকাহনামা (Complete)Where stories live. Discover now