পর্ব ২৮

378 26 3
                                    

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখা #AbiarMaria

#২৮

প্রিয়ন্তির পরণে একটা রানী গোলাপি রঙের থ্রিপিস। মাথায় ভালোভাবে ওড়না দিয়ে চুল ঢেকে ও ছাদে চলে এলো সবার অলক্ষ্যে। বিশালকে ওর বলতেই হবে, সে যেন এমন না করে। কিছুদিন আগে থেকেই আবার এই ভাইয়া এসে এসে প্রিয়ন্তিকে খুঁজে যায়। এত নির্লজ্জ যে মাঝে মাঝে প্রিয়ন্তির মায়ের কাছেও  জিজ্ঞেস করে বসে প্রিয়ন্তির কথা। মিষ্টি দিতে আসিফ যখন বিশালকে দেখে রিএক্ট করেছিল, তখন থেকেই প্রিয়ন্তি তার থেকে পালিয়ে পালিয়ে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু লোকটা এমন নাছোড়বান্দা কেন যে পিছে লেগে থাকে? প্রিয়ন্তি অস্থিরতায় ছাদের এমাথা ওমাথা হাঁটছে আর বারবার সিঁড়ির দরজার দিকে তাকাচ্ছে। বিশালকে আজকে সব সরাসরি বলবে, আসিফ যে ওদের দেখে রাগ করেছিল, সেটাও বলবে।

প্রিয়ন্তি পায়চারি করতে করতে হাতের ফোনের দিকে তাকায়। আসিফ কিছুক্ষণ বাদেই ট্রেনে উঠবে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। আর্মির কমিশনড অফিসারের জন্য তিন বছরের কোর্স করতে যেতে চট্টগ্রামে অবস্থিত বিএমএ- বাংলাদেশ মিলিটারি এজেন্সি তে যা চট্টগ্রাম ভাটিয়ারীতে চট্টগ্রাম হিল ট্রেকসের কাছে।  আসিফ রওনা দেয়ার আগে আরেকবার ফোন দিবে। প্রিয়ন্তি সেজন্যই অপেক্ষা করছে। এই সময় পেছনে কোনো একজনের গলা খাঁকারির যসব্দ শুনে প্রিয়ন্তি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। প্রিয়ন্তিকে ঘুরে তাকাতে দেখে বিশাল এক গালে হাসলো। প্রিয়ন্তি দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে, বিশালকে দেখে ওর অস্বস্তি লাগছে। বিশাল প্রিয়ন্তির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে ওর মনে হচ্ছে দম ফেটে মরেই যাবে। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়েও অশান্তি লাগছে খুব।

কয়েকদিন আগে ছাদে এমনিতে এসে বিশালের সাথে ওর দেখা হয়ে যায়। ওর চোখের আড়ালে যাওয়ার আগেই বিশাল দেখে ফেলল। প্রিয়ন্তিকে একা পেয়ে সে সময় ক্ষেপণ না করে এগিয়ে এসে বলল,
"তোমাকে তো আজকাল দেখাই যায় না। ছাদে আসো না নাকি?"
প্রিয়ন্তি ওড়নায় আঙুল পেঁচাতে পেঁচাতে বলল,
"পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি একটু"
"তাই বলে ছাদে আসবা না? এটা কোনো কথা? পড়াশোনার পাশাপাশি রিফ্রেশমেন্টও তো দরকার,নাকি?"
প্রিয়ন্তি নীরব হয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। বিশাল আবার হেসে বলে,
"তুমি তো দেখি বাসায় থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছ!"
"সরি?"
"বাসায় থেকে থেকে অনেক সুন্দর হচ্ছো তুমি। দেখো না আমি কত কালো হয়ে গেছি বাহিরে ঘুরে ঘুরে। কি মাখো তুমি?বলো না? আমিও একটু মাখি!"
"কিছু মাখি না ভাইয়া"
"আরেহ নাহ, লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই। বলো না? নাকি ভয় পাচ্ছো যে আমিও ওসব মেখে সুন্দর হয়ে যাবো? তারপর আমার প্রেমে পড়ে যাবা তুমি? হুম?"
প্রিয়ন্তির পিত্তি জ্বলে গেল। বিশালের কথা শুনলে যে কারো মনে হবে, সে নিজেকে শাহরুখের চেয়েও বেশি কিছু ভাবে। তার কথা শুনলে আরও মনে হবে, বাংলাদেশের অর্ধেক মেয়ে তার পেছনে ঘোরে। আর বাকি অর্ধেকের বিয়ে হয়ে গেছে বলে তার পেছনে ঘুরতে পারে না। প্রিয়ন্তি বিশালের অপ্রয়োজনীয় শব্দাপচয় কিছুক্ষণ সহ্য করে বলল,
"ভাইয়া, আম্মুকে বলে আসতে ভুলে গেছি। আম্মু রাগ করবে। আমি আসি"
পেছন থেকে বিশাল বারবার ডাকলেও প্রিয়ন্তি পালিয়ে বাসায় চলে গিয়েছিল। আজকে আবার ছাদে এসে স্বেচ্ছায় তার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রিয়ন্তি আঙুল মটকে বিশালকে কি কি বলবে সে সব প্রস্তুতি নিতে থাকে। তার মাঝেই বিশাল ওর চিন্তাভাবনার দেয়াল ভেঙে বলল,
"যাক ভালো, তবুও তো ছাদে আসলা আমার জন্য!  আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আসবে না"
"অ, কেন ভাবলেন যে আসব না?"
"আমার মনে হয় তুমি আমাকে এড়িয়ে চলতে চাও, এজন্য আসবে না"
"কি বলেন? এড়িয়ে যাবো কেন? না না, এড়িয়ে যেতে চাই না তো। এমনিই আমি ব্যস্ত থাকি এজন্য ছাদে আসি না। আপনার সাথেও দেখা করা হয় না"
"ও!আচ্ছা!"
"আজকে কি জন্য এভাবে ডাকলেন ভাইয়া?"

অপরিণত নিকাহনামা (Complete)Where stories live. Discover now