পর্ব ২৪

453 30 8
                                    

#অপরিণত_নিকাহনামা
লেখা #AbiarMaria

#২৪

দিনকাল ওদের দুজনের ভালোই যাচ্ছে। রাগ,অভিমানের পালায় নতুন করে হাওয়া লাগিয়েছে আসিফের আইসেসবিতে যাওয়ার চান্স। যখন প্রথম মেডিকেল হয়,তখন আসিফ হাসতে হাসতে প্রিয়ন্তিকে বলল,
"বুঝছ,আমি তো আর্মিতে চান্স পেলে একেবারে নির্লজ্জ হয়ে যাবো!"
"কেন?! ঐখানে গেলে নির্লজ্জ হওয়ার কি হলো?!"
"আর বলো না! সব গুলো ছেলেকে এক সাথে কাপড় খুলিয়ে একটা ইনার পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল! হা হা হা!"
"ছি ছি ছি! আসিফ! এসব অসভ্য অসভ্য কথা কিভাবে বলো?!"
"আরেহ,আমি তো শুধু বললাম! ঐখানে তো লাইভ এক্সপেরিয়েন্স ছিল। একেকজন একেকজনের দিকে তাকায় আর হাসে"
"ছি নির্লজ্জ!কিভাবে এসব করে ওরা? লজ্জা লাগে না??"
"আরেহ, চেকাপ করবে না? মেডিকেল চেকাপ করতে হবে তো! পরে যদি দেখে কোনো সমস্যা আছে!"
"তাই বলে প্যান্ট খুলে? প্যান্টের ভিতর ওদের কি কাজ?! আমার জামাই আমার সামনে ছাড়া আরও মানুষের সামনে প্যান্ট খুলেছে?! অসভ্য কোথাকার!  সব অসভ্য, তুমি আর অফিসার, সব!"
ওদিকে  আসিফ হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়েছে।প্রিয়ন্তি ওদিকে লজ্জায় লাল হয়ে ফোন কেটে দিল।

রিটেন পরীক্ষাও আসিফের বেশ ভালো হয়েছে।রিটেনের পর যথারীতি ওর আইসেসবিতে যাওয়ার সুযোগও চলে আসলো। প্রিয়ন্তি একবার ভাবছে, আসিফের যেন না হয় চাকরি, আরেকবার ভাবছে এটা আসিফের স্বপ্নের চাকরি।ওর উচিত নয় এর বিরোধিতা করা। প্রিয়ন্তির যে সামনে পরীক্ষা, সেসব নিয়ে ভাবনা নেই। সারাক্ষণ আসিফের ভাবনা ওকে ঘিরে থাকে। আসিফের আইএসএসবি এর আগের রাতে প্রিয়ন্তি ফোন ধরে মন খারাপ করে বসে আছে।ওপাশ থেকে আসফ নরম কন্ঠে বোঝানোর চেষ্টা করছে,
"আচ্ছা, তুমি এত চিন্তা করছ কেন? আমি তো মাত্র চারদিনের জন্যই যাচ্ছি,আজীবনের জন্য না। চারদিন পর আবার আমাদের কথা হবে, আমি রেড বা গ্রীন কার্ড যাই পাইনা কেন!"
"আমার এজন্য মন খারাপ না"
"তাহলে কেন আপসেট?"
"আচ্ছা, গ্রীণ কার্ড পেলে, মানে অফিসার হলে আমাকে কি আরও আট বছর বিয়ে করবা?"

প্রিয়ন্তির নরম কন্ঠে একটা ভয়াবহ রকমের আকুতি আর হাহাকার মিশে ছিল। মাত্র বলা প্রশ্নটা শুনে আসিফের বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে দিয়ে এক বছর হয়ে যাচ্ছে, মেয়েটাকে অপেক্ষা করিয়ে রেখেছে। আজ যখন নিজের একটা স্বপ্নের পথে ও পা বাড়াচ্ছে, তখন আরেকটা স্বপ্ন ওর পিছু টেনে ধরছে। আসিফের একবার মনে হচ্ছে ও গ্রীন কার্ডের জন্য চেষ্টাই করবে না। আরেকবার মনে হচ্ছে, বড় বড় কিছু প্রাপ্তির জন্য ছোট ছোট বিসর্জন দেয়াটা খুব জরুরী। আসিফ প্রিয়ন্তির কথা শুনে নীরব হয়ে বসে রইল ফোনের ওপাশে। প্রিয়ন্তি আবার প্রশ্ন করল,
"কি হলো? আমাকে কি তুমি আসলেই আরও আট বছর অপেক্ষা করাবে?"
আসিফ দ্রুত কন্ঠে ওকে বুঝ দেয়ার চেষ্টা চালালো।
"আরেহ, এখনও তো গেলামই না ওখানে! আগে যাবো, চারদিন ট্রেনিং আর টেস্ট হবে, তারপরই না গ্রীন কার্ড! তাছাড়া এইটা কি হাতের মোয়া নাকি যে গেলেই পাবো! প্রতিবার চার ভাগের তিন ভাগ ছেলেরা রেড কার্ড পায় বুঝছ? আমি পাবো কিনা, সেটাই বা কিভাবে শিওর হচ্ছো? তাও আবার প্রথম বার। বললেই তো সুযোগ মিলবে না বাছা! শোনো, তুমি দুয়া করতে থাকো যেন আমি সুযোগ পাই। তোমার দোয়া আমার প্রয়োজন"
"আর যদি দুয়া না করি? তুমি তো অফিসার হলে আরও অনেক অনেক অপেক্ষায় থাকতে হবে আমার"
"প্রিয়ু! আজ থেকে পাঁচ বছর তুমি আর এভাবে ভাববে না যেভাবে এখন ভাবছ! আজ থেকে পাঁচ বছর পর তুমি যখন অনেক ম্যাচিউর হয়ে যাবে, আমি যখন দিনের পর দিন স্ট্রাগল করেও আমার বউকে অনেক সুখে রাখতে পারব না, তখন তোমার আজকের দিনের কথাগুলো মনে পড়বে। ঐ সময় মনে হবে, কেন আমি আমার স্বামীর জন্য দুয়া করলাম না! হ্যাঁ, আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি, কিন্তু আমি তো তোমাকে বিয়ে করবই। শুধু একটু সময় চাই আমার"
"তোমার ঐ একটু সময় মানে তো আট বছর!"
"না, আট বছর না, সাত বছর"
"ঐ একই কথা"
"না, এক না। ক্ষেত্র বিশেষে আমি তোমাকে আগেও বিয়ে করতে পারব, এরকম সুযোগও আছে। সেটা তখন দেখা যাবে"

অপরিণত নিকাহনামা (Complete)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora