সূচনা পর্ব

312 0 0
                                    

০১

"কেউ বলে পৃথিবী আগুনে শেষ হবে,
কেউ বলে বরফে।
যারা আগুনের পক্ষপাতী
তাদের আমি ধরে রাখি।"

গোধূলী সন্ধ্যায় আগুন রাঙ্গা আকাশের দিকে তাকিয়ে রবার্ট ফ্রস্টের 'ফায়ার অ্যান্ড আইস' কবিতাটির অনুবাদ মনে মনে আওড়াচ্ছিলো। পশ্চিম আকাশে তখন ডুবন্ত সূর্য বিদায় বেলায় ছড়িয়ে দিয়েছে তার সমস্ত রং। রক্তার্ত লাল রং ধীরে ধীরে কমলা আভা ছড়াতে ছড়াতে মিলিয়ে গেছে। তাকে ভীষণ মনোযোগ দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বান্ধবীরা ডাকতে শুরু করলো,
'বিপর্ণা, এই বিপর্ণা। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরতে হবে।'

বিপর্ণা দ্রুত পা চালিয়ে পুকুরঘাটের সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে এলো। কলেজের শেষপ্রান্তে অবস্থিত আকারে খানিকটা বড় পুকুরটির জল শুকিয়ে এসেছে। তলানিতে একটুখানি জল দেখা যাচ্ছে। সারাদিনের কাঠফাটা রোদ্দুরে সেটুকুও মনে হয় শুকিয়ে যাবে। এতোক্ষণ আকাশের মাঝে হারিয়ে গেলেও এখন বিপর্ণার সম্পূর্ণ মনোযোগ বাড়ি ফেরায়। যতটা দ্রুত সম্ভব পা চালিয়ে বাড়ি পৌছানোর চেষ্টা করছে৷ এ কারনে বান্ধবীর দলটা কিছুটা পেছনে পরে গেছে। শাড়ির কুচি খানিকটা উপরে তুলে আফরা এক ছুটে বিপর্ণার কাছাকাছি চলে এলো। ঝপ করে ওর হাতটি ধরে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
- ওমন দৌড়াচ্ছিস কেনো? শাড়ি পরে তোর সাথে তাল মিলিয়ে দৌড়াতে পারছি না। একটু আস্তে চল।

হাঁটার গতির কমিয়ে দিয়ে চিন্তিত মুখে বিপর্ণা বললো,
- বেলা দেখেছিস? সন্ধ্যা নেমে গেছে। বাড়ি ফিরতে হবে। তোদের ছবি তুলে দিতে গিয়ে কখন যে বেলা বয়ে গেলো টেরই পেলাম না। তোদেরও যতো ঢং! ছবি তোলা শেষ হওয়ার নাম নেই। একজনের হাজারখানা ছবি তোলা চাই।
- কতোদিন পর শাড়ি পরলাম, ছবি তুলবো না! তোর হিংসা হচ্ছে, বল? শাড়ি পরতে যখন বললাম, তখন তো না করে দিলি।
- আমার বয়েই গেছে হিংসা করতে। এই শাড়ির কারনে এখন হাঁটতে পারছিস না।
- এই তো হাঁটছি। আবার কবে দেখা হয় তার ঠিক নেই। এভাবে কখনো সবাইকে একসাথে পাবো না। তাই গ্রুপ ফটো তুলে নিলাম।

ফুটবল মাঠে তখনো দুটি দল একে অপরের বিপরীতে জয়ের লক্ষ্যে লড়াই করে যাচ্ছিলো। দুই-দুই গোলে ড্র ম্যাচটির বর্ধিত সময়ের শেষ মুহুর্ত কাছাকাছি। বাংলা ডিপার্টমেন্ট টিমের ক্যাপ্টেন বাসিম পায়ের নিচে থাকা ফুটবলে লাথি দিতে গিয়ে ক্ষণিক সময়ের জন্য তাকিয়ে ছিলো ফুটবল এবং ক্রিকেট মাঠের মাঝের রাস্তাটির দিকে। একদল মেয়ে গোলাপি শাড়ি পরে হেঁটে যাচ্ছে। হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে হেলে পরছে। কাচের চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজের সাথে ক্লান্ত সন্ধ্যায় ছড়িয়ে দিচ্ছে গোলাপি আভা। বাসিমের স্বল্প সময়ের অমনোযোগের কারনে গোলবারের সাথে ফুটবলের ধাক্কায় নিশ্চিত গোলটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গেলো। পুরো মাঠ জুড়ে হৈ হৈ রব। আফসোসে বাসিম তার হাত দুটো হাওয়ায় ধাক্কা দিয়ে রাস্তার দিকে ফিরে আরেকবার মেয়েদের দলটির দিকে তাকাতেই তার চোখে পরলো সামান্য পার্থক্য।
ছয়জন শাড়ি পরিহিতা রমণীর সাথে গোলাপি সালোয়ার কামিজ পরিহিত একটি মেয়েও রয়েছে। বান্ধবীদের সাথে তালমিলিয়ে হাসতে থাকলেও তার চোখ-মুখে সে হাসি ছড়িয়ে পরছে না। বাসিম বিড়বিড় করে বলে উঠলো, 'শালা, মেয়ে মানুষ মানেই ঝামেলা।'

অলীককায়াWhere stories live. Discover now