পঞ্চদশ পর্ব

52 0 0
                                    


২৯

বিকেলবেলা নগরীর যুবক যুবতীরা নিজেদের মতো করে  সময় কাটানোর জন্য, আড্ডা দেওয়ার জন্য নির্জন, কোলাহলবিহীন শান্ত পরিবেশ খুঁজে। ব্যস্ত নগরীতে যা খুঁজে পাওয়া অনেকটাই অসম্ভব। তাই পরিত্যক্ত রেলওয়ের নিরিবিলি জায়গাটি আশেপাশের উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের নিকট ভীষণ জনপ্রিয়। রোজ বিকেলে ওরা এখানে হাঁটতে আসে। কমবেশি সবাই কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী। এদের মধ্য থেকেই সেই নির্দিষ্ট একজন কলেজ শিক্ষার্থীকে খুঁজে বের করা খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মতো অবস্থা। চারদিকে সুক্ষ্ম দৃষ্টি মেলে হানান বললো,
- এদের মধ্যে আমাদের পাখি কোনটা চিনবো কেমন করে, স্যার?
- ভালোভাবে নজর রাখো। সে এলেই বুঝতে পারবে৷ বেশভূষা, চালচলনে ভিন্নতা থাকবে।

হানানের অস্থির মস্তিষ্ক সুক্ষ্ম নজর দিতে পারছে না। একবার সামনের দিকে তাকায়, আরেকবার পকেট থেকে ফোন বের করে সাজিয়াকে কল দেয়। জরুরি মুহুর্তে মেয়েটা কল রিসিভ করছে না৷ এই মুহুর্তে সাজিয়ার সাথে কথা বলতে না পারলে মিশনে মনোযোগ দিতে পারবে না, এই কথাটি মেয়েটা নিশ্চয়ই বুঝবে না। ঘাড়ত্যাড়া অবুঝ মেয়েটা হানানকে শুধু জ্বালাতন করতেই জানে৷
পাশ দিয়ে একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা যাচ্ছিলো। তাকে আটকিয়ে ঝালমুড়ি কিনলো আইজাম। মুখে ঝালমুড়ি পুড়ে চারদিকে নজর বুলাতে বুলাতে গুনগুন করলো,

কেমনে চিনিবো তোমারে মুর্শিদ ঘন হে...

সাব্বির এলো কিছুক্ষণ পর। ভারী, ক্লান্ত শরীরটা কোনোরকমে টেনে হিঁচড়ে হাঁটছে। অথচ শুকনো পাটকাঠির মতো শরীরের গঠন৷ ডান হাত মুখের সামনে এনে বারবার শার্টের হাতে নাক ঘষছে। নিশ্চিত হয়ে আইজাম তাকালো হানানের দিকে। কিন্তু সে ব্যস্ত ফোনে কথা বলায়। আইজামের ক্রুদ্ধ দৃষ্টির দর্শন হওয়া মাত্র ফোন পকেটে ঢুকিয়ে লটকানো মুখ নিয়ে তস্ত পায়ে এগিয়ে এলো। আইজামকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় কানে এলো,
- ডানদিকে লাল সাদা গ্রামীণ চেক শার্ট।

নির্দেশনা অনুযায়ী সাব্বিরের থেকে দু হাত দূরে অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে দাঁড়ালো হানান। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। সাব্বিরের দিকে হেলেদুলে এগিয়ে এলো একটি লোক। যাকে দেখে সাব্বিরের চোখ চকচক করে উঠলো। সে চোখের ভাষা পড়তে অসুবিধা হলো না আইজামের। লোকটির দিকে তাকিয়ে বুঝলো, বাদশা আসেনি। বদরুলকে পাঠিয়ে দিয়েছে। ছেলেমেয়েদের ভীড় এড়িয়ে বদরুল এগিয়ে যাচ্ছে সামনে। ওর পেছনে আসছে সাব্বির। আবার সাব্বিরের পেছনে হানান। একটা ভাঙাচূড়া দালানের ধ্বংসাবশেষ এর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো বদরুল। সাব্বির দ্রুত পায়ে সেখানে পৌঁছে গেলো৷ আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে বদরুল বললো,
- টাকা দে আগে।
- এডভান্স দেওয়া আছে। আগে মাল দেন।
- এখনো পঞ্চাশ হাজার বাকি৷
- আমার পুরা মাল বাকি।
- হারামজাদা। নিজেও ফাঁসবি, আমারেও ফাঁসাবি। 

অলীককায়াDonde viven las historias. Descúbrelo ahora