ষড়বিংশ পর্ব (2nd part)

59 1 0
                                    


কোনো অনাথের শৈশব সুখময় হয় না, সেটা সবার জানা। আইজামের অতীতে এমন কিছু ঘটনার ছাপ আছে সে আশঙ্কা আগেই করেছিলো বিপর্ণা। কিন্তু বাবা-মা থেকেও অনাথের জীবন? এতোটাও নিম্নগামী হতে পারেনি তার চিন্তা ভাবনা। আইজামের মতো সন্তানকে কোন মা-বাবা পায়ে মাড়িয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারে? বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে রইলেও সহানুভূতি দেখালো না। নিজের প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো অনুভূতি কাজ করছে না।

ঠান্ডা হয়ে আসা কফির কাপে চুমুক দিয়ে আইজাম বললো,
- তোমার আফসোস হচ্ছে তাই না? কেমন একটা পরিবারে বিয়ে হয়েছে! যাদের মধ্যকার বিশ্বাসের ভীতটাই নড়বড়ে।
- নিজের স্বামীর প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছি না বলে আফসোস হচ্ছে।

আইজাম মুচকি হাসলো। নারীর নিকট সন্দেহ গড়ল সমান। মিষ্টি কথায় কিংবা আদর, ভালোবাসায় তাদের ভোলানো সম্ভব নয়। যতক্ষন না সন্দেহ দূর হয়।
- রুমা এবং ঝুমা আমার থেকে চার বছরের ছোট। আমরা একসাথে বড় হয়েছি। অন্যের বাড়িতে থাকতে হলে কতটা হেয় হয়ে চলতে হয় সেটা নিশ্চয়ই জানো? বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমি আমার গণ্ডি চিনতে শিখেছি। এমনিতেই সাবধান থাকতাম। খুব বেশি বোজ যেনো না হয়ে যাই। অন্যের দয়ায় বেঁচে আছি এই কথাটা আমাকে কখনো ভুলতে দেয়নি আমার ফুপা। ইনিয়েবিনিয়ে ঠিকই প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিতেন। পিঠাপিঠি বয়সের হওয়ায় রুমা, ঝুমার সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভালো ছিলো। ও বাড়ির সবচেয়ে শান্ত, বুঝদার মেয়ে ছিলো ঝুমা। গাইবান্ধায় যখন ছিলে তখন দেখেছো না, ও বাড়িতে সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে? আগে এমন ছিলো না। নামাজ পড়া প্রথম শুরু করেছিলো ঝুমা। হঠাৎ একদিন ওর মনে হয়েছে, সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরবে। ফুপির থেকে নামাজ পরা শিখে নিয়ে একা একা নামাজ পরা শুরু করলো। ওকে রোজ ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে দেখে আমারও মনে হলো, নামাজ পরা উচিত। আমার মনমরা মুখশ্রী দেখে প্রায় বলতো, নামাজ পরো, আল্লাহর কাছে চাও। এমনিতেই মনে প্রশান্তি চলে আসবে। ওর দেখাদেখি আমিও শুরু করলাম। কিন্তু সকালে উঠতে পারতাম না। তোমার মতো ঘুমকাতুরে ছিলাম। ভোরবেলা ঝুমা এসে ডেকে দিতো। আমাদের সখ্যতা বেড়েছে তখন থেকেই। নামাজের পর দুজনে হাঁটাহাঁটি করতাম, গল্প করতাম। বাড়ির বাকিরা উঠার আগে যতোটুকু পারি কাজ গুছিয়ে রাখতাম। আমাকে সাহায্য করতো ঝুমা।

অলীককায়াWhere stories live. Discover now