নবম পর্ব

49 0 0
                                    


১৭

গাইবান্ধা পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলো না। রাতের সতেজ, নির্মল বাতাসে বিপর্ণার গাঢ় একটা ঘুম হয়েছে বলে এখন খানিকটা সুস্থবোধ করছে। মন খারাপ থাকলেও এতোক্ষণে শুকিয়ে এসেছে চোখের জল। বিপর্ণাকে গাড়ির মধ্যে বসিয়ে রেখে সবাই নেমে গেলো। রওশনারা ছুটাছুটি করে বউ বরণের ব্যবস্থা করে ফেললেন৷ একটি বাটিতে কয়েকটা মিষ্টি এবং গ্লাস ভরা শরবত। মিষ্টি সামান্য একটু মুখে দিয়ে শরবত খেয়ে তৃষ্ণা মেটালো বিপর্ণা৷ বাকিটুকু খেতে দেওয়া হলো পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আইজামকে।
রাত হলেও বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় চারদিক ঝলমল করছে৷ চারপাশে তাকিয়ে বাড়িটিতে চোখ বুলিয়ে নিলো বিপর্ণা। ওদের বাড়ির মতো বিশালাকৃতির দালান নয়। খুব সাধারণ একতলা একটি বাড়ি। সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই হলরুম। যার একপাশে কিচেন, ডাইনিং স্পেস, ড্রয়িংরুম। সবমিলিয়ে বেশ হিবিজিবি অবস্থা। হলরুম পেরিয়ে একই সারিতে চারটি কক্ষ। সবার শেষের কক্ষে ঠাঁই হলো বিপর্ণার। বেশ গোছানো মাঝারি একটি কক্ষ। দক্ষিণের খোলা জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে এক ফালি চাঁদ। সাদা রঙের কটন কাপড়ে ফুল আকৃতির কালো জলছাপ দেওয়া বিছানার চাদর বিছানো। একই ডিজাইনের বালিশের কভার, জানালা-দরজার পর্দা। ঘরে একটা পড়ার টেবিল আছে, যেখানে শোভা পাচ্ছে বেশ কিছু ক্লাসিক বই। কাঠের একটা ওয়ারড্রবও আছে। নতুন বউয়ের ঘর এমন রঙহীন হয় জানা ছিলো না বিপর্ণার৷ ঘরের চারদিক পর্যবেক্ষণ করে দেখার মাঝেই রওশনারা ফিরে এলো৷ এইটুকু সময়ে ভদ্রমহিলা ভারী পোশাক বদলে সুতি একটি শাড়ি পরেছেন। হাতে রাখা খাবারের প্লেটটি টেবিলের উপর রেখে ফ্যানের গতি বাড়িয়ে দিলেন।

- যা গরম পরেছে আজকে! ভারী পোশাক পরে থাকতে তোমার নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে। আইজামকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি বিছানার উপর এসে বসো। রাত অনেক হয়েছে। দু মুঠো খেয়ে নেও।

বিছানার উপর আসন পেতে বসে নিজের হাতের দিকে তাকালো বিপর্ণা৷ ভীষণ ভারী এবং বিশালাকৃতির কয়েকটা আংটি শোভা পাচ্ছে ওর দু হাতে। এগুল পরে ভাত খাবে কি করে! রওশনারা মৃদু হাসলেন। টেবিল হতে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে বললেন,
- এসো, আমি খাইয়ে দিচ্ছি। অন্য কারো হাতে খেতে আপত্তি নেই তো?

অলীককায়াWhere stories live. Discover now