অষ্টাদশ পর্ব

64 1 0
                                    

তিন কামরার একটি সাধারণ ফ্ল্যাট বাসায় সাদামাটা সংসার সাজিয়েছিলো হানানের স্ত্রী সাজিয়া। অল্প কয়েকটি ফার্নিচার দিয়েই সাধের সংসার সাজানো। যে কেউ এক পলক দেখে বলে দিতে পারবে, বাড়ির কর্ত্রী রুচিশীল একজন মানুষ। আজ বাড়ির কর্ত্রী নেই, সাথে নেই বাড়ির জৌলুশ। নিস্তব্ধ ফ্ল্যাটটিতে হানান কীভাবে একাকী সময় কাটায়, সে একমাত্র হানানই জানে৷ চারতলার এই ফ্ল্যাটটিতে পা রেখে আইজামের মনে পরলো নিজের অতীতের কথা৷ আহা! সে এক দিন ছিলো বটে। বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করতো না। ফাঁকা বাড়ির নিস্তব্ধতার থেকে বেশি পরিহাস আর কেউ করতে পারে না।
কিচেনের ডিপফ্রিজে মাছ দুটো রাখা ছিলো। বের করে ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা হলো। সন্দেহজনক কিছু নজরে এলো না। কিচেন থেকে ছু রি এনে খুব সাবধানে পেটের পাতলা চামড়া কে টে ফেললো আইজাম৷ দু আঙ্গুলের সাহায্য পেটের কা টা অংশটি চেপে ধরে আরেকটু বিস্তৃত করতেই নজরে এলো ছোট আকৃতির প্লাস্টিকের প্যাকেট। দুটো মাছ থেকে মোট ছয়টি প্যাকেট বেড়িয়েছে। একটি প্যাকেট হাতে তুলে নিয়ে হানান বললো,
- কতোটুকু থাকতে পারে এখানে?
- সবমিলিয়ে একশত গ্রাম হবে।
- মারাত্মক প্ল্যান করেছিলো। ম্যাডাম একদম হাতেনাতে ধরা পরে যেতো। ভাগ্যিস মাছগুলো বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়নি৷

আইজামের শান্ত মুখশ্রী আরোও শান্ত হলো। তুমুল বর্ষণের আগে যেমন শান্ত হয় মেঘপুঞ্জ। সাদা দেহ অন্তরের কালিমায় ধীরে ধীরে হয়ে উঠে কালচে। আইজামের দেহবর্ণ কালচে হলো না। তবে সামান্য লালচে হলো৷ কপালে বিস্তর এলাকা জুড়ে চামড়ার  ভাজ৷ দাতে দাত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে৷ এমন রণচণ্ডী রুপ দেখে হানানের আর কিছু বলার সাহস হলো না৷
- মাছ কুটতে পারো?
- জ্বী স্যার৷ কখনো করা হয়নি। চেষ্টা করলে পারলো।
- কে টে ভালোভাবে পরিষ্কার করে  থানায় নিয়ে যেয়ো৷

দৃঢ় কন্ঠে ঘোষণা দিয়ে গটগট করে হানানের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেলো। এদিকে হানান পরেছে বিপাকে। সাজিয়া থাকলে বেশ হতো। ও থাকতে এসব রান্নাবান্নার দিকে কখনো নজর দেওয়া হয়নি৷ আজকাল হোটেলের বিস্বাদ খাবার খেয়ে দিন কেটে যাচ্ছে। কপাল কুচকে ইউটিউবে ইলিশ মাছ কাটার ভিডিও দেখতে বসলো।

অলীককায়াWhere stories live. Discover now