৪৪
টানা দুদিন ঘরবন্দী থেকে আইজামের বোধোদয় হলো ভোরবেলা। কি করছে সে? অন্ধকার সেই কুঠুরিতে আটকে পরছে আবার? যেখান থেকে বের হতে কঠোর পরিশ্রম করেছিলো কোনো এককালে। আবার নিজ ইচ্ছায় নিজেকে সেই অন্ধকারের দিকে কীভাবে ধাবিত করতে পারলো? এই আঁধার থেকে নিজেই নিজেকে বের করতে হবে। সাহায্যের কেউ নেই। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। অফিসরুমের সাথে ওয়াশরুম। অতিরিক্ত কিছু কাপড়ও আছে কিছু। সেই ভোরবেলা গোসল করে নিজেকে এবং মনকে পবিত্র করলো। দুদিন ধরে পানি ছাড়া পেটে কিছু পরেনি। এতক্ষণ বোধশক্তি না থাকায় খিদে বুঝতে না পারলেও এই মুহুর্তে পেটের নাড়িভুঁড়ি সব গুড়গুড় করছে। পাশের কিচেন কর্ণারে কিছু শুকনো খাবার পাওয়া গেলো। সেগুলো খেতে খেতে ভাবছে, বিপর্ণাকে কীভাবে ফেস করবে?
আইজাম যখন গুটিগুটি পায়ে অফিসরুম থেকে বের হলো তখন প্রকৃতি সবে মাত্র ঘুম থেকে জেগে উঠছে। শান্ত, নীরব বাড়িতে বিপর্ণাকে খুঁজে বেড়াতে হলো না। নিজের ঘরেই পাওয়া গেলো। জায়নামাজে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অঝোর ধারা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে মোনাজাতের হাতে। দরজায় হেলান দিয়ে সেই দৃশ্য দেখে নিজেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী মনে হলো আইজামের। একটা প্রাণবন্ত মেয়ের কী হাল করে ছেড়েছে সে! মেয়েটা নিশ্চয়ই উপায় না পেয়ে আল্লাহর দরবারে তার নামে অভিযোগ করছে। কি শাস্তি চাইছে আইজামের জন্য?
ধীর পায়ে বিপর্ণার কাছে এসে পাশে বসে পরলো। বিপর্ণা তাকালো শান্ত চোখে। জল জমে থাকা ঘোলাটে দৃষ্টিতে আইজামের প্রতিচ্ছবি। বিশ্বাস হতে চাইছে না। আলতোভাবে আইজাম মাথা রাখলো বিপর্ণার কোলে। মোনাজাত ছেড়ে ক্রন্দনরত বিপর্ণা ক্ষণকাল বিমূঢ় চেয়ে রইলো আইজামের মুখের দিকে। তারপর বুকের সাথে চিবুক লাগিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকলো। এতটা অবহেলা কি তার প্রাপ্য ছিলো? কেনো তার সাথে এমনটা হলো?
বিপর্ণার চোখের জল এবার আর মোনাজাতের হাত ভিজিয়ে দিলো না। টুপটাপ পরতে থাকলো আইজামের গালে, কপালে। আইজাম নড়লো না। মুছলো না সেই চোখের জল। একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো কান্না ভেজা মুখশ্রীটির দিকে। নিজের অন্যায়ের পরিণতি দেখছে। আত্মগ্লানিতে ডুবে যাওয়ার জন্য এই দৃশ্যটি দেখার খুব প্রয়োজন। বিনা অপরাধে একজন মানুষকে সে কতটা আঘাত করেছে সেটা জানতে হবে। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত বিপর্ণা যখন মুখ তুলে আইজামের দিকে তাকালো, অনেক কাল বাদে দৃষ্টি মিললো দুজনের। আইজামের দৃষ্টি শান্ত, অটল। হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছতেই ঝাপসা দৃষ্টি স্বাভাবিক হলো। আইজামের মুখের উপর বিপর্ণার চোখের জলে ফোঁটা এখনো স্পষ্ট। বিপর্ণা কিছু বললো না। হিজাবের কোণা দিয়ে সযত্নে মুছে দিলো সেই জলকণা।
YOU ARE READING
অলীককায়া
Romanceবিপর্ণার ফ্রেশ হতে সময় লাগলো আধাঘন্টা। শাড়ি পাল্টে হলুদ রঙের সুতি সালোয়ার কামিজ গায়ে জড়িয়েছে। অভ্যাসবশত ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। কিন্তু চোখের সামনে আইজামকে দেখে মনে পরলো সে এখন নিজের বাড়িতে, নিজের ঘরে নেই। ভেজা লম্বা চুলে হ...