চতুর্বিংশ পর্ব

42 1 0
                                    

৪২

অসময়ে আসা বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরলো আইজাম। অন্যদিন হলে অস্থির বিপর্ণা দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতো। কিন্তু আজকে গেলো না। রান্নাঘরে রান্না করতে থাকলেও এতোক্ষণ সকল মনোযোগ ছিলো দরজার দিকে। আইজাম বাড়ি ঢুকে একনজর বিপর্ণাকে দেখে নিলো। কেমন গোমড়া মুখে রান্না করছে। একবার ফিরেও তাকালো না। রুমাকে আশেপাশে কোথাও দেখতে না পেয়ে গুটিগুটি পায়ে রান্নাঘরে পৌঁছে গেলো। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে দুটো চুমু দিতেই বিপর্ণা বিরক্তি ঝেড়ে জানালো,
- ভিজে যাচ্ছি।

আইজাম কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
- আমি যে পুরোপুরি ভিজে গেছি।
- পোশাক বদলে নিন। আমি চা করে দিচ্ছি।

বউয়ের হুকুম মেনে আইজাম চললো ঘরের দিকে। মসলা চা বানিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতেই যাবে, রুমা এসে হাজির।
- আইজাম ভাইয়ের জন্য চা নিয়ে যাচ্ছো?
- হ্যাঁ।
- আমাকে দেও। ভাইয়ের সাথে দেখা করতেই যাচ্ছিলাম। আমিই দিয়ে দিবো।

বিনাবাক্যে চায়ের কাপ রুমার হাতে তুলে দিয়ে বিপর্ণা নিজের কাজে ফিরে গেলো। গোল্লায় যাক উনার চা আর উনি। আদর্শ স্বামী হতে গেলে বই পড়া লাগে। উনার জীবনে কোনো নারী সঙ্গ নেই। সব ধাপ্পাবাজি। আর কি কি মিথ্যে বলেছে কে জানে!

দরজা খুলে রুমাকে চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আইজাম ভ্রু কুচকালো।
- বিপর্ণা কোথায়?
- কিচেনে।
-  তুমি অযথা কষ্ট করতে গেলে কেনো? ও নিয়ে আসতো।
- তোমার সাথে দেখা করতেই আসছিলাম। তাই নিয়ে এলাম।
- কেনো?
- কালকে কখন যাবো?
- ছয়টায় বাস।
- ট্যুর গাইড ম্যানেজ হয়েছে?
- হ্যাঁ।

কথা বলতে বলতে আইজাম চায়ের কাপ নিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসেছে। এখান থেকে বিপর্ণাকে সরাসরি দেখা যায়। কিন্তু সে ওদের গলার আওয়াজ পেয়েও ফিরে তাকালো না। অফিস থেকে ফিরে ওই হাসি মুখটা না দেখলে যে আইজামের ক্লান্তি কাটে না সেটা কি ও বুঝে না?
রুমা আর কিছুক্ষণ নানান প্রশ্ন করে আইজামের ক্লান্তি আরও বাড়িয়ে দিলো।
রাতের খাবারের সময় বিপর্ণা কিছু বললো না। চুপচাপ বসে খাচ্ছে। কথা বলার বাহানায় আইজাম কখনো ডালের বাটি এগিয়ে চায়, কখনো পানির গ্লাস। অন্যদিন এই সামান্য কাজগুলো নিজেই করতো। সবই বিপর্ণাকে বিরক্ত করার বাহানা। কিন্তু বিপর্ণা আগে থেকেই এতো বিরক্ত হয়ে আছে যে নতুন করে আর কি বিরক্ত হবে!

অলীককায়াWhere stories live. Discover now