সপ্তম পর্ব

49 0 0
                                    


১৪
আজকাল কখন কোন ঋতু চলছে, অনুমান করা মুশকিল। গ্রীষ্ম পেরিয়ে বর্ষার অর্ধেক মাস পেরিয়ে যাচ্ছে, তখন আকাশ পাতাল এক করে ধেয়ে আসছে কালবৈশাখী ঝড়। সারাটা দিন কাঠ ফাঁটা রোদ্দুর ছিলো। বিপর্ণা যখন বাড়ির সামনে রিক্সায় উঠলো তখন রোদে চামড়া পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা৷ অথচ এখন চারদিক আধারে ঢেকে দিয়েছে কালো মেঘ। ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে কাদায় মাখামাখি হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। রাস্তার ময়লা পানিতে হাঁটার কথা চিন্তা করেই বিপর্ণার মুখ শুকিয়ে এলো। চারটার দিকে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও এখন বাজে সাড়ে চারটা৷ দেরীতে আসায় বিপর্ণা মোটেও দুঃখিত নয়৷ সাজুগুজু করতে গিয়ে মেয়েরা দেরী করবেই। এটা তাদের অলিখিত অধিকার। তাদের জন্য ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করবে ছেলেরা এই নিয়মটাও অলিখিত । যে ছেলে এই নিয়ম অমান্য করে, তার ভালো স্বামী হওয়ার যোগ্যতা নেই।
মাথার উপর মেঘের ছায়া নিয়ে হুড তোলা রিক্সা থেকে নামলো বিপর্ণা। বুক ভরে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে কফি হাউসে প্রবেশ করতে যাবে তখনি ডানদিকে তাকিয়ে আতংকিত হলো। ছোট একটা জটলা দেখা যাচ্ছে সেখানে৷ আট দশজন লোকের মাঝে একটি ছেলেকে একনাগাড়ে থাপ্পড় দিয়ে যাচ্ছে একটি যুবক। ছেলেটার বয়স বেশি হবে না। বড়জোর আটারোতে পরেছে হয়তো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কলেজের শিক্ষার্থী। এমন অমানবিকভাবে মারতে দেখে বিপর্ণার বড্ড মায়া হলো। আশেপাশের মানুষজনগুলো কেমন! সবাই দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। কেউ এগিয়ে গিয়ে যুবকটিকে থামাচ্ছে না। জটলার থেকে খানিক দূরে দাঁড়িয়ে আছে দুজন মহিলা। বিপর্ণা এগিয়ে গিয়ে তাদের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলো।
- টোকাই বাচ্চাগুলো ফুল বিক্রি করতে আসছিলো। ওই ছেলেটা নাকি ফুল কেনার কথা বলে বাচ্চাটাকে বাজেভাবে ছুঁয়েছে। এজন্য ওভাবে মারতেছে।

ঘৃণায় মুখ তেতো হলো বিপর্ণার। সুরভি উদ্যানের সামনে টোকাই বাচ্চাগুলো বড্ড বিরক্ত করে। সামনে পরলেই পা ধরে ঝুলে পরে। ফুল নিতেই হবে। তাদের অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ, আতংকিত। তাই বলে তাদের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করার মতো অনৈতিক কাজ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ছোট প্রাণগুলোর এসময় হেসেখেলে স্কুল যাওয়ার কথা। কিন্তু দু মুঠো অন্ন যোগানের লক্ষ্যে তারা পথে নেমে ফুল বিক্রি করে৷ এই ছেলেটার মতো কিছু আলালের ঘরের দুলাল, বাবার হোটেলে খেয়ে মেয়েদের হ্যারাস করা শিখে। বাচ্চা মেয়েগুলোও তাদের থেকে ছাড় পায় না। বিতৃষ্ণায় ভরে গেলো বিপর্ণার মন। আরেকবার ফিরে চাইলো জটলার দিকে। যুবক ছেলেটার চোখে মুখে হিংস্রতা। যেনো এখনি ছিড়েখুঁড়ে ফেলবে শিকারকে। কলেজ পড়ুয়া ছেলেটির জন্য এবেলা বড্ড ভয় হলো বিপর্ণার। এ যাত্রায় বেচে গেলে এই ছেলে আর কারো দিকে চোখ তুলে দেখার সাহস করবে না। আতংকে কেটে যাবে বাকিটা জীবন।

অলীককায়াWhere stories live. Discover now