দ্বিতীয় পর্ব

87 0 0
                                    


ইতিহাস বিভাগের কাছে বাংলা বিভাগ এক-শুণ্য গোলে হেরে যাওয়ায় বাংলা বিভাগের প্লেয়াররা যতটা না হতাশ হয়েছে তার থেকে বেশি হয়েছে রাগান্বিত। এমন একটা গোল মিস করলে কার না রাগ হবে! সমস্যা হচ্ছে, ওরা রাগটা প্রকাশ করতে পারছে না। নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা চলছে। বাসিম সবটা বুঝতে পারলেও কিছু বলতে পারছে না। সে নিজেও জানে দোষটা ওর, তবুও স্বীকার করবে কেনো? কেউ অভিযোগ না করায় ঝগড়াটা ঠিক জমছে না। বন্ধু ওয়াসীমকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো,
- কি হয়েছে ? ওরা কি নিয়ে ফুসুর ফুসুর করতেছে?
- আরে বাদ দে। হেরে যাওয়ায় ক্ষেপেছে একটু।
- আমাকে দোষ দিচ্ছে?
- ওই আরকি। গোলটা মিস করে ফেললি।
- মিস করে ফেললাম! ফেললাম মানে কি? ইচ্ছে করে করেছি? কে বলছে এই কথা?
- বাদ দে না।
- নাম বল তুই? কার এতো সাহস!

ওয়াসীম নাম বললো না। কিন্তু বাসিম থামার পাত্র নয়। মেয়েটাকে দেখে মনটা এমনিতেই অস্থির হয়ে আছে। দলে কয়েকটা জুনিয়র ছিলো। ওদের ডেকে নিজে থেকেই ঝগড়া বাধিয়ে দিলো। একটা গোল মিস হয়েছে তো কি হয়েছে? গোল হয়ে গেলো তো আবার ড্র হতো। নিজেরা ভালোভাবে খেলবে না, আর দোষ হবে বাসিমের। ম্যাচের প্রথমার্ধে পরপর যে দুটো গোল হলো, সেটা তো বাসিমই দিয়েছে। কই ওরা কেউ তো পারলো না। অন্যের দোষ ধরার বেলায় ঠিকই সবাই ঝাঁপিয়ে পরে। খেলার বেলা সবকটা লবডঙ্কা।

পড়ন্ত সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে কারমাইকেল কলেজের ক্যাম্পাস ছাড়ছে। যদিও ঘরে ফিরতে মন চাচ্ছে না কারো। ক্যাম্পাসের ফুটবল মাঠে একদল ছেলে মাঠে গড়াগড়ি দিয়ে লড়াইয়ে মেতে উঠেছে। এমন রোমাঞ্চকর দৃশ্য উপভোগ করতে না পারার কষ্ট নিয়ে বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের গর্ব কারমাইকেল কলেজে অন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল। পরপর কয়েকটি ম্যাচ শেষে ফাইনালে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করেছিল ইতিহাস ও বাংলা বিভাগ। আজ টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ ছিলো। মাঠের একপাশে ছোট মঞ্চ সাজিয়ে সেখানে রাখা হয়েছিলো ট্রফি। কিন্তু সেটি আর বিজয়ী টিম ইতিহাস বিভাগের হাতে উঠেনি। বাংলা বিভাগের টিম ক্যাপ্টেন বাসিম কিছুক্ষণ আগেই ট্রফিটি দিয়ে তারই টিমের একজন খেলোয়াড়ের পিঠে আঘাত করেছে। তখনি সুসজ্জিত ট্রফিটির নকশার বিকৃতি ঘটেছে। নিজেদের পুরষ্কারের এমন দূরাবস্থা সহ্য হয়নি ইতিহাস বিভাগের। এই নিয়ে ফুটবল মাঠে খুবই ভয়ানক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষক মাঠের এককোণায় দাঁড়িয়ে চুপচাপ উপভোগ করছেন সেই দৃশ্য। ভয়ে কেউ কাছে যাচ্ছে না। লড়াইটি একটু আগেও বাংলা বিভাগের অভ্যন্তরীণ ছিলো। ট্রফি নষ্ট হওয়ায় যেই না ইতিহাস বিভাগ ক্ষেপে গেলো ওমনি বাংলা বিভাগের খেলোয়াড়রা নিজেদের মধ্যকার লড়াই ভুলে ঝাঁপিয়ে পরলো ইতিহাস বিভাগের উপর। লড়াইয়ের এক পর্যায়ে উভয় টিমের খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে পরলো, তখন আপনাআপনি সবকিছু থেমে গেলো। শিক্ষকেরা কপালের সূক্ষ্ম ঘাম মুছে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন। এখানে উনাদের কিছু বলার নেই। ছাত্রলীগের ছেলেদের বিরুদ্ধে কীইবা বলা যায়! দর্শকরা আগ্রহ হারালো। ক্লান্ত খেলোয়াড়রা মাঠের সবুজ ঘাসে চিৎ হয়ে শুয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিচ্ছে।
আপাতত সবকিছু স্বাভাবিক। শুধু মাঠের একপাশে থাকা বিচারকদের জন্য বরাদ্দ দশখানা প্লাস্টিকের চেয়ার পা ভেঙে পরে আছে। স্টেজ সাজানোর জন্য যে কাপড় ব্যবহার করা হয়েছিলো সেগুলো ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে মাঠ জুড়ে ছড়ানো। সেদিকে তাকিয়ে ইতিহাস বিভাগের ক্যাপ্টেন বললো,
- বাসিম ভাই, আপনি প্রতিবার এমন করেন। ম্যাচে হারলে একটা না একটা ঝামেলা করে প্রাইজ গিভিং ফাংশনটা নষ্ট করে দেন।
- একটা ট্রফির জন্য আমি মরে যাচ্ছি না। তোরা দেখতেছিস আমার মুড ভালো নাই। তাও খোঁচাইতে আসলি কেন?
- আপনি যে মেয়ে দেখতে গিয়ে গোলটা মিস করলেন সেটা তো মানবেন না। উল্টো চোটপাট করে সব শেষ করে দিলেন।

অলীককায়াWhere stories live. Discover now