বেলা ১১:৩০ বাজে। আমাদের গাড়ি এসে পৌঁছলো ধূ-ধূ মাঠের ধারে, ড্রাইভার বলল আর ওদিকে নাকি গাড়ি যাবে না। তাই অগত্যা বাকিটা পায়ে হেঁটেই যেতে হবে আমাদের সবাইকে।
গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম, এখান থেকে মোটামুটি ১০০ - ১৫০ মিটার দূরত্বে দেখা যাচ্ছে পিরামিডটা। চারিদিকে হলুদ রঙের বালির মাঝে এই একটা পিরামিড। আর বাকি গুলো মাটির ঢিবির মতো ছড়িয়ে আছে আসে পাশে, যদিও সেগুলো এটার থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থিত।
এতক্ষনে গাড়ি থেকে নামল আত্রেয়ান। আর দত্তা এখনো গাড়িতেই ঘুমোচ্ছে। এবার পরিচয় দেওয়া যাক সবার। আমি ইন্দ্র বোস, আমার দুজন পার্টনার আত্রেয়ান গোস্বামী আর দত্তাত্রেয়া গুপ্ত। আমরা সবাই পিরামিডোলজি নিয়ে পড়াশোনা করি, আর এখানে সেই গবেষণার কাজেই আসা হয়েছে সাত দিনের জন্য। আজকেই ভোর বেলা এখানে এসে সবাই পৌঁছেছি আর তারপর ফ্রেশ হয়ে জল খাবার খেয়েই অফিসের কন্ট্যাক্ট করা গাড়িতে করে এখানে অর্থাৎ গিজা তে এসেছি। অতোটা জার্নির ক্লান্তি নিতে না পেরে এই এক ঘন্টার রাস্তাতে দত্তা গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমাদেরও চোখ লেগে যাচ্ছিল মাঝে মাঝেই কিন্তু এই সাত দিনের একটা মিনিট ও নষ্ট করা যাবেনা বলেই তড়িঘড়ি বেড়িয়ে পড়লাম আজকেই। দত্তাকে ঘুম থেকে তুলে দুজনকে বললাম "ব্যাগে সব জিনিসপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নে, ভিতরে গিয়ে কিন্তু সময় নষ্ট করা যাবে না।" সবার ব্যাগ চেক করা হয়ে গেলে গাড়িকে ছেড়ে আমরা হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চললাম পিরামিডের কাছে। মিনিট সাতেকের মধ্যেই এসে পড়লাম পিরামিডের গায়ে।
১৩৮.৫ মিটার উচ্চতা বিশিস্ট এই পিরামিডটার গায়ে ছোটো ছোটো অসখ্য ছিদ্র। রংটা আর হলুদ নেই বললেই চলে, অনেকটা পোড়া কাঠের মতো হয়ে গেছে। ঘড়িতে দেখলাম ১১:৪৫ বাজে। ওয়াকিটোকি আর টর্চ নিয়ে রেডি হলাম ভিতরে যাওয়ার জন্য। ভিতরে আমাদের অনেকটা যেতে হবে, আর এখানে আসার পর থেকেই টাওয়ার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এই ওয়াকিটকি আর ভিতরের ঘুটঘুটে অন্ধকারের সম্বল টর্চ। তিনজন জয় মা বলে পা বাড়ালাম পিরামিডের ভিতরে। দেখি পাথরের সিড়ি আছে, নামতে শুরু করলাম। এখান দিয়ে নামতে নামতে খেয়াল করলাম যে সিড়িগুলো প্রায় ক্ষয় হয়ে গেছে। দুটো সিড়ির মাঝের ফাকা অংশগুলো এবড়ো খেবড়ো আর গর্ত। যদিও আমাদের চলার মাঝে এগুলো কোনো বাধা সৃষ্টি করছে না, কারন এখনো সূর্য রশ্মির সাহায্য নিয়েই আমরা চলেছি। মোটামুটি দশ বারোটা সিড়ি নামার পর দেখলাম এই রাস্তা আরো সরু হয়ে গেছে। যেখানে এতক্ষন আমরা পাশাপাশি হাটছিলাম, সেখানে এখন আমরা উপর নীচে করে নামতে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে সূর্যের আলো ক্ষীন হয়ে যাচ্ছে। পনেরো কুড়িটা সিড়ি নামার পর এখন আমাদের টর্চের আলো জ্বালাতে হল। আমাদের হিসেব মতো এখানে দুশোটা মতো সিড়ি নামতে হবে মমির কাছে পৌঁছতে হলে, তারপর পিরামিডের ভিত থেকে শুরু হবে কাজ। মমির সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই, তবে মমি যেহেতু পিরামিডের তলদেশে থাকে, তাই সেখান অবধি যাওয়া বাধ্যতামূলক। এতক্ষনে আমরা তিরিশ পয়ত্রিশটার মতো সিড়ি নেমেছি তিনজন একসাথেই । আর এবার আস্তে আস্তে আবহাওয়ার পরিবর্তনটা নজরে পড়ছে। এখানে তাপমাত্রা একটু বেশি। চারপাশটা দেখতে দেখতে যাচ্ছি, নজরে পড়ছে মাকড়সার জাল, চাপ হয়ে জমে থাকা ধুলো। রাস্তাটা আরো সরু হয়ে গেল। এবার একটু একটু গা ছমছম করছে। এই অন্ধকার, গরম, চারদিকে ঝুল-ধুলো, এর মাঝেই আমরা টর্চ হাতে নেমে চলেছি। এবার আর সোজা হয়ে নামা যাচ্ছে না, তিনজন সিড়ির গা ঘেষে ঘেষে নামছি একটা একটা সিড়ি, আমাদের গতিও কমে গেছে অনেকখানি আগের চেয়ে। মোটামুটি চল্লিশটা মতো সিড়ি নেমে এলাম, কেমন যেন করছে শরীরটা। ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। আত্রেয়ান আর দত্তাকে বললাম একটু জল খেয়ে বাকিটা যাবো। ওদের ও অবস্থা আমার মতোই। দুজনেই ঘেমে ভিজে গেছে। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে এটুকু এসেই। কিন্তু এখনো আমরা অর্ধেক রাস্তাও আসিনি। বাকিটা কিকরে যাবো সেটা ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। তিনজন ওইভাবে সিড়ির গা ঘেষে কোনোভাবে জল খেয়ে আবার নামতে শুরু করলাম। আরো কয়েকটা সিড়ি নামার পর এই গরমে আর কষ্ট হচ্ছে না, সহ্য হয়ে গেছে। কিন্তু এবার কেমন একটা অদ্ভুত স্যাতস্যাতে গন্ধ পাচ্ছি। এই অবস্থায় যে নাকে রুমাল দেবো, সে উপায় নেই। একটু একটু অক্সিজেনের ঘাটতি লক্ষ্য করছি। মোটামুটি পঞ্চাশেক সিড়ি নামার পর দেখলাম রাস্তাটা আর ও সরু হয়ে গেছে। কিন্তু এবার চওড়ায় নয়, লম্বায়। আর সোজা হয়ে হাটার মতো সিড়ি নেই। মাথা ঠেকে যাচ্ছে ছাদে। অগত্যা মাথা নিচু করে নামতে শুরু করলাম। স্যাতস্যাতে গন্ধটা জোড়ালো হচ্ছে আরও। গরমটা তীব্র হচ্ছে। মনে হচ্ছে আর একটু জল খেতে হবে। তিনজন থামলাম, সিড়িতেই বসে পড়েছি। জল খেয়ে আবার নামতে শুরু করলাম। কিন্তু আর সিড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই। এবার শুধুই ভাঙা এবড়োখেবড়ো রাস্তা। লম্বাতে রাস্তাটা আরো ছোটো। আর হেটে হেটে নামার মতো অবস্থা নেই। বসে বসেই নামতে শুরু করলাম তিনজন। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এবার। হাপিয়ে গেছি আসলে। আর সেই গন্ধটা নেই, তবে আবার একটা তীব্র গরম অনুভব করছি। এতোটা এসেই গরমে ঘেমে জামা ভিজে গেছে। একটু বসে তারপর ওইভাবেই নামতে শুরু করলাম। মাকড়সার জাল, ধুলোর উপর দিয়েই একটা হাত দিয়ে ধরে ধরে নামছি, অন্য হাতে টর্চ। হঠাৎ কি যেন হল, শ্বাস নিতে পারছিনা আর একদমই, চোখের সামনে লাল নীল সবুজ অসংখ্য রঙ যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে, মাথাটা ভীষন যন্ত্রনা করছে। আমি আর বসে থাকতে পারছি না, হাতে পায়ে নিজের বস নেই। টর্চটা শক্ত করে ধরতে গিয়ে হাত ফস্কে বেড়িয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে গেল। মাথায় অসম্ভব যন্ত্রনা, অসহ্য গরম, অক্সিজেনের কমতি সব মিলিয়ে গা গুলিয়ে উঠছে। আত্রেয়ান আর দত্তা এতক্ষন চুপ করেই আসছিল আমার সাথে, কিন্তু এবার ওরা মুখ খুলল। দত্তা বলল "আমাদের আজকেই এখানে আসা ঠিক হয়নি। কাল আস্তে পারতাম।" আত্রেয়ান বলল, "ইন্দ্র, চল ফিরে যায়, তোর শরীর ঠিক নেই, ভিতরে গিয়ে কিছু হয়ে গেলে? বরং কাল আসব।" আমি ধরা গলাগ বললাম, "কাল ও যদি এরকম হয়? তার চেয়ে চল এগিয়ে যায়। কি আর হবে ভিতরে? গিয়ে তো ছোটো ছোটো কয়েকটা কাজ। বরং একটা এক্সট্রা টর্চ ছিল, তোরা ওটা দে আমায়।" দত্তা একটা টর্চ বের করে দিল আমাকে। বসে বসেই নামতে শুরু করলাম আবার। আর ও অনেকটা নামার পর রাস্তার ভোল পাল্টে গেল। আর সেই সরু রাস্তা নেই, আর মাথা ঠেকছে না ছাদে। এবার তিনটে আলাদা আলাদা রাস্তা চলে গেছে এখান দিয়ে। আমরা হা করে তাকিয়ে রইলাম এটার দিকে।এতো বছর ধরে পড়াশোনা করেছি, কিন্তু পিরামিডের ভিতর এরকম রাস্তা থাকে তা তো পড়িনি। তিনজন কি করব আর ভাবার দরকার পড়ল না, ওয়াকিটকি কানে লাগিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে গেলাম। এতক্ষন বসে আসার পর একটু সোজা হয়ে দাড়াতে পেরে স্বস্তিবোধ হচ্ছে। এই গরমটাও সহ্য হয়ে গেছে। এগিয়ে গেলাম তিনজন তিন রাস্তায়। হাটতে লাগলাম ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে টর্চের আলো নিয়ে। সবাই ওয়াকিটকিতে আপডেট দিচ্ছি রাস্তার। আত্রেয়ান বলল, "তেমন কিছু পার্থক্য নজরে পড়ছে না, সেই অন্ধকার, ধুলো এইসব। তবে দেওয়ালে কিসব লেখা দেখতে পাচ্ছি।" এই লেখার বিষয়টা আমরা জানিনা, দত্তা একমাত্র এই ভাষা জানে। কিন্তু জানলেও সে তো আর ইংলিস বাংলার মতো গড় গড়িয়ে পড়া যায় না, তাই মাইক্র ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে নিতে বললাম আত্রেয়ানকে। ও টর্চের আলো লেখার উপর দিয়ে ছবি তুলে নিল। আমার রাস্তায় এখনো সেই অন্ধকার, দেওয়ালে ঝুল ছাড়া কিছু নেই। ওদিকে দত্তা বলল, "আমার দেওয়ালে তো লেখা নেই কিছুই, কিন্তু কিসব আঁকা আছে। দেখে মনে হচ্ছে বেড়াল, কোনোটা মুকুট, কোনোটা তলওয়ার।" ছবি তুলে নিতে বললাম ওকেও। আমার দেওয়াল এখনো কোনো কথা বলছে না। এগিয়ে চললাম সবাই নিজের নিজের রাস্তায়। হঠাৎ দেখি গরমটা আস্তে আস্তে কমছে। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দত্তা বলল, "আমি...আমি মনে হয় মমি দেখতে পেয়েছি।" আমরা হতবাক হয়ে গেলাম। দত্তাকে আত্রেয়ান বলল, "দত্তা, সাবধানে এগিয়ে যা মমির কাছে। ওখানে গিয়ে তুই ক্যামেরাটা রেডি কর।" দত্তা তাই করতে শুরু করল, আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল। এতক্ষন পর আমার দেওয়ালেও আমি লক্ষ্য করলাম বিভিন্ন রকমের আঁকা, কোনোটা বেড়াল, কোনোটা মুকুট, কোনোটা তলওয়ার। বুঝতে বাকি থাকল না যে এই তিন রাস্তা একটা জায়গাতেই অর্থাৎ মমির কাছে গিয়ে শেষ হয়েছে। দত্তা বলল, "আমি মমি দেখতে পেয়েছি, আর এখানে তিনদিকে তিনটে দরজা আছে, কিন্তু একটা দরজা বন্ধ। আমি যে দরজা দিয়ে এলাম সেখানে আসলে কোনো পাল্লা নেই, আরো একটা দরজাতেও কোনো পাল্লা নেই, কিন্তু শেষ দরজাটা বন্ধ। আমিও মমি দেখতে পাচ্ছি দূর থেকে। ওয়াকিটকিতে বললাম, " দত্তা তুই মমির কাছে একবার ঘোর, আমিও হয়ত চলে এসেছি। দত্তা ঘুরে মমির কাছে এসে বসতেই ওকে দেখতে পেলাম আমি। এগিয়ে গেলাম। এসে পড়েছি মমির কাছে। সত্যিই তিন দিকে দরজা, যার একটা দিয়ে দত্তা এসেছে, একটা দিয়ে আমি এলাম। মানে আত্রেয়ানের দরজাটাই বন্ধ। উপরে তাকিয়ে দেখলাম অন্ধকার উঁচু পিরামিডের ছাদ। আত্রেয়ান এতক্ষন চুপ করে থাকার পর বলল, "আমি এসে গেছি, কাঠের দরজার সামনে। ওপার থেকে তোদের গলা শুনতে পাচ্ছি।" আমি বললাম দরজাটা ধাক্কা দে জোরে জোরে। ধাক্কার জন্য কেঁপে উঠছে দরজা, কিন্তু খুলছে না। দত্তা বলল, "ইন্দ্র, ওটা তো তালা মারা।" সত্যিই এতক্ষন খেয়াল করিনি। এই মুহূর্তে তালা খুলতে গেলে চাবি লাগবে, কিন্তু কোথায় পাবো? বরং HCl দিয়ে তালাটা গলিয়ে ফেলি। হঠাৎ দত্তা বলল, "ওটা লোহার তালা? মরচেও ধরেনি? এটা তো মনে হচ্ছে রিসেন্ট লাগানো।" আত্রেয়ান বলে, "কী বলছিস? তাড়াতাড়ি খোল দরজাটা।" বলেই সে এক লাথি মেরেছে দরজায়। আর দরজার উপর থেকে ঝনঝন করে একটা চাবি এসে পড়ল আমাদের পায়ের কাছে। এসব কি হচ্ছে, দত্তা? এখানে এসে কি দেখছি এসব? আমি ছুটে গিয়ে চাবি দিয়ে দরজাটা খুললাম। আত্রেয়ান এসেই বসে পড়ল আমাদের কাছে। ও বলল, "আমরা পিরামিড নিয়ে গবেষণা করতে এসেছি? না গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছি?" এতক্ষন পর তিন বন্ধু এক হয়ে স্বস্তিবোধ করছি অনেকটা। ক্যামেরা নিয়ে কাজ শুরু করলাম। টিউবের সাথে কানেক্ট করে ক্যামেরাটা ঢুকিয়ে দিলাম মমির তলার মাটিতে। স্ক্রিন অন করা হল, এতক্ষনে আমরা দেখলাম এখন বিকেল চারটে বাজে। কিকরে যে এতটা সময় কেটে গেল বুঝতেই পারিনি কেউ। অবশ্য আমাদের আজকের কাজ এখানেই শেষ হবে। ক্যামেরায় সমস্তটা রেকর্ড হলে, এই জায়গাটার অনেক গুলো ক্লিয়ার ছবি তুলে নিয়ে যেতে হবে। যদিও সেটা আমাদের গবেষণার মধ্যে পড়ে না, তবে এই প্রাচীন পিরামিডের দরজার মধ্যে নতুন লোহার তালা কে লাগালো, সেটাও দেখতে হবে। সবটা রেকর্ডিং করে, কয়েকটা ছবি তুলে আমরা জিনিসপত্র গুছিয়ে, একটু জল খেয়ে আবার রওনা দিলাম দরজা দিয়ে। এবার তিনজন আলাদা নয়, বরং একটা দরজা দিয়েই বেড়োচ্ছি। যাওয়ার সময় আত্রেয়ান বলল, "আচ্ছা দরজাটা কি তালা মেরে দেবো আগের মতো?" দত্তা বলে, "কেন? তুই কি এখানে সংসার পাতবি? আমার তো ভেবেই গায়ে জ্বর আসছে যে ওই ঝুল ছাতা রাস্তা দিয়ে আমাদের আবার যেতে হবে, মাথা নিচু করে, হামাগুড়ি দিয়ে।" হঠাৎ কেমন একটা হাঁচির মতো শব্দ পেলাম সবাই। তিনজন ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম এক নিমেষের মধ্যে। এখানে তো আমরা ছাড়া কেউ নেই, তাহলে আওয়াজটা কিসের? আত্রেয়ান বলল, "আমরা ভুল শুনেছি, আসলে এতোটা কষ্ট করে এসেছি, খিদেও পেয়ে গেছে, গরম ও লাগছে, তাই মাথা কাজ করছে না। চল বেড়োনো যাক, আর থাকা যাচ্ছে না এই অন্ধকারে।" আমিও ওর কথায় সম্মতি দিয়ে এগিয়ে চললাম। কিন্তু যাওয়ার সাথে সাথেই খটখট করে আবার একটা আওয়াজ। এরপর আমাদের আর কারোরই ইচ্ছে ছিল না এই অন্ধকারে, গরমে বসে তদন্ত করি আওয়াজের। তাই আমরা সব গুটিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি পা চালালাম যে রাস্তা দিয়ে দত্তা এসে পৌঁছেছিল সেই রাস্তা দিয়ে। কারন এটাই সবচেয়ে কম দূরত্বের। এইটুকু রাস্তাই যা একটু ভালো, তারপর আবার সেই সুড়ঙ্গের মতো রাস্তা। তিনজন হাতে টর্চ নিয়ে তাড়াতাড়ি বেড়োতে শুরু করলাম। সোজা হাটতে হাটতে অনেকটা এগিয়ে গেলাম, এখন সেই রাস্তায় এলাম যেখানে তিনটে রাস্তা আলাদা হয়ে গেছিল। দেখতে পাচ্ছি সরু রাস্তা। আবার তিনজন উপর নীচ করে জায়গা করে নিলাম যাওয়ার জন্য। ঠিক এইসময় এই তিন দরজার মাঝেরটা দিয়ে বেড়িয়ে এল দুজন। আমরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম, এক পা ও নড়তে পারছিনা কেউ। এই অন্ধকারে কারোর মুখ বোঝা যাচ্ছে না। দত্তা সাহস করে টর্চের আলো ফেলল ওদের মুখে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা কেউ, ওরাও আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টে, আমরাও ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। এই এত বছরের এত গবেষনার মাঝে কখনো এরকম অবস্থায় পড়তে হয়নি আমাদের কাউকে। কিন্তু এখন মাথা কাজ করছে না কারোর। এই অন্ধকার গুমোট গরম পিরামিডের নিচে এরা কী করছে? কেনই বা এসেছে? আমরা এতক্ষনে বুঝে গেছি যে ওদের কাছে কোনো কৃত্রিম আলো নেই, আর এই অন্ধকারে আলো নেই মানে ওরা কিছুই করতে পারবে না আমাদের, দেখতেই পাবে না আমাদের। তাই সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম, "কে আপনারা? এখানে কী করছেন? আমরা কিন্তু পুলিশ.." বাকিটা বলা শেষ না হতেই ওদের একজন বলল, "দাদা আমরা নিজেরাই পুলিশের কাছে যেতে রাজি, শুধু এখান থেকে আমাদের বের করুন আপনারা দয়া করে। সব বলব বেড়িয়ে।" এই টান টান উত্তেজনার মাঝে যখন এমন কেউ সাহায্য চায়, তাহলে আর ভয় কি!!
![](https://img.wattpad.com/cover/334562459-288-k430794.jpg)
YOU ARE READING
~HAWAII~
Viễn tưởngStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.