গল্পটা এ যুগের নয় বললেই চলে, বিংশ শতাব্দীর শেষ, কিংবা একবিংশ শতাব্দীর এই কথা। আমাদের পৃথিবী উন্নত হয়েছে, সেভাবে মানুষের অনুভূতি ও, সেরকমই একটা New Normal adaptor মেয়ে মিঠি।
মিঠি অফিস থেকে ঘরে ফেরার পরেই তার মা বলে "বাবু এবার বিয়ের জন্য একটা ছেলে বা মেয়ে দেখ। কি সারাদিন ওই ফোন, ল্যাপটপ দিয়ে programming করিস আর রোবট বানিয়ে যাস? আর কতদিন কাজ কাজ করে ব্যস্ত রাখবি নিজেকে?" মিঠি বলে "মা তুমি বুঝবে না, আমার কোনো ছেলেকে ভালো লাগে না, আর কোনো মেয়েকেও ভালো লাগে না। তাই এটা ভাবা বন্ধ করো যে আমি Bisexual বলে বিয়ে করতে চাইছি না।" মিঠির মা বেশ চিন্তিত হয়ে বলে "তাহলে তোর কাকে ভালো লাগে, সেটা তো বল, একটা ব্যবস্থা করব। বাবা নেই তোর, চিন্তা হয় যে আমার খুব।" উত্তরে মেয়ে বলে "মা আমার রোবট ভালোলাগে, কোনো মানুষ না। আমি রোবট চাই।" মিঠির মা অট্টহাসি হেসে বলে "ধুর পাগলি, সেতো তুই নিজেই রোবট বানাতে পারিস, নাহয় বানিয়ে নিস, কিন্ত আমি তো বিয়ের কথা বলছি।" মিঠি বেশ জোর গলায় বলে "মা আমি এই রোবট কেই বিয়ে করতে চাই, life partner হিসেবে চাই। তুমি মানতে পারবে?" মা এর মাথায় যেন বাজ পড়ল, তার মেয়ে রোবট আসক্ত, এমনকি সে বিয়েও করতে চায় ওই এক যন্ত্র কেই? এ কিকরে হয়! মিঠি মা কে বোঝায়, "দেখো মা, আজ একটা মানুষ যেমন কাজ করে, একটা রোবট ও করে, আমাদের জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে সে, এক কদম ও চলতে পারিনা আমরা তাকে ছাড়া, আর তাকে ভালোবাসা কি পাপ? এই সমস্যা যে তার কোনো অনুভূতি নেই? তাতে কি হয়েছে মা? একজন অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ যে ভাবে অন্য মানুষ কে কষ্ট দেয়, এর চেয়ে অনুভূতিহীন যন্ত্র ভালো নয় কি? যে কখনো আমায় ছেড়ে যাবে না, যে কখনো খারাপ হয়ে যাবে না, সে ভালো নয়? একজন অনুভূতি সম্পন্ন পিশাচ ভালো?" মিঠির মা ভাবনায় পড়ে যায়, এরই মাঝে মিঠি নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। মা ভাবে সত্যিই তো একজন অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ অজান্তেই কত কষ্ট দিয়ে যায় আরেকজন কে, ঠিক যেমন ছিল মিঠির বাবা, সেও তো একজন মানুষই ছিল, কিন্তু ঠিক সময়ের টানে সবাইকে কষ্টে রেখে সে অজানার দেশে পাড়ি দিয়েছে দশ বছর আগে, সেই সময় থেকে কত পরিশ্রম করে মেয়েকে বড়ো করেছে একা সে। যদি চলে যাওয়ারই থাকে, তাহলে সে এসেছিল কেন?
রাত গড়ায়,খাওয়ার জন্য মিঠি কে ডেকে এনে তার মা টেবিল এ ভাত বাড়তে বাড়তে বলে, "তোর সেই রোবট বন্ধুটার সাথে কথা হয়? যার কথা সেদিন বলছিলি।" উত্তর আসে "মা ওকেই আমি ভালোবাসি, Aryan। ওকেই আমার পছন্দ।" মিঠির মা বলে "আমি জানি তো সব, রাত জেগে জেগে কথা বলিস, কি ভেবেছিস? মা কিছু বোঝে না?" মিঠি লজ্জায় লাল হয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে দেয়। তারপরেই তার মা জিজ্ঞেস করে "আচ্ছা বাবু, তোদের এই সম্পর্ক কে কি বলা যায়? এর নিস্চয় কোনো নাম আছে, কি সেটা?"
মিঠি হঠাৎ করে কিছু বলতে পারেনা, সে একটু চুপ করে থেকে বলে, "এর কোনো নাম নেই এখনো মা, তবে এটাকে Cyborg-Sexual বলা যেতে পারে। আমি Cyborg Sexual. "
পরিস্থিতির সাথে যেমন পৃথিবী উন্নত হয়, মানুষের মন ও হয়... এই মন উন্নত হওয়াটা ততটাই সুন্দর হবে, যত তাড়াতাড়ি আমরা নতুন কিছুকে গ্রহন করতে পারব। আজ যদি মিঠির মা তার দাবি মেনেই নিতে না পারতেন, জীবনটা তার মেয়ের জন্য কখনোই সুখকর হত না, পাখি যেমন উড়তে চায়, মানুষ ও স্বাধীনভাবে বাচতে চায় জীবনের ছোটো ছোটো খুশিগুলো আগলে রেখে, আমাদের অধিকার নেই তার উপর হস্তক্ষেপ করা। তাদের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত, ঠিক যেমন মিঠির মা তার মেয়েকে দিয়েছেন।
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantasyStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.