আজ ২০২০ এর ৯ই মে, সবে মাত্র লকডাউন শুরু হওয়ার জন্য রিখিয়া দের এখন অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। ক্লাস শেষ করে হোয়াটসঅ্যাপে সবার স্টেটাস দেখার সময় একজনের নাম দেখে চমকে ওঠে রিখিয়া। সাগর মন্ডল, রিখিয়া দের ব্যাচ এই একসাথে বাংলা পড়ে। হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ ক্রিয়েট হওয়ার সময়ই রিখিয়া সবার নাম্বার সেভ করেছিল এক এক করে। কয়েকজনের নাম্বার আগে থেকে সেভ থাকলেও রিখিয়ার কাছে সাগরের নাম্বার ছিল না। এটা সেভ করে ও ভেবেছিল হয়ত সাগর ওর নাম্বার সেভ করবে না। কিন্তু আজ স্টেটাস দেখতে পেয়ে ও খুশি হলেও একটু চমকেই গেল। এর জন্যই হঠাৎ একটা ঘটনার প্রতিফলন আসে তার মাথায়। এক বছর আগের একটা ঘটনা।
রিখিয়া, এখন ক্লাস টেন এ উঠেছে। শঙ্খ ওর ছোটোবেলার বন্ধু। আর সাগরের সাথে রিখিয়ার প্রথম দেখা হয় ক্লাস এইট এ, এই বাংলা টিউশনের ব্যাচ এই। এক বছর আগে, ক্লাস নাইন এ, একদিন পড়া শেষে বাড়ি যাওয়ার সময় শঙ্খ রিখিয়ার সাইকেলের পিছন পিছন যেতে যেতে বলেছিল "ওই রিখিয়া, ছাগল না তোর উপর ক্রাস খেয়েছে।" বলার পরেই শঙ্খ এতোটাই তাড়াতাড়ি নিজের সাইকেল নিয়ে রিখিয়ার সামনে দিয়ে বেড়িয়ে যায় যে ওর কোনো কথাই মুখ থেকে সরে না। শুধু এটুকু বলে "কে? ওই রাম ছাগলটা?" শঙ্খ ততক্ষন কুড়ি হাত দূর থেকে চেঁচিয়ে বলে "ও ছাগল না, সাগর, ভালো ছেলে কিন্তু।" সাগরকে সবাই মজা করে রাম ছাগল বলার কারনে রিখিয়াও বলত। কিন্তু শঙ্খর কথা শুনে একটু রেগেই গেল সে।
রিখিয়া ঘরে এসে শঙ্খর কথার সত্যি মিথ্যা যাচাই করতে বসে। এইসময় তার মনে পড়ে পূজার কথা, পূজাকে হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট করে লেখে "ভাই সাগর নাকি আমার উপর ক্রাস খেয়েছে। একটু দেখ না ব্যাপার টা।" রিখিয়ার বেস্টফ্রেন্ড হওয়ার কারনে ও পূজাকে ভরপুর বিশ্বাস করে। এর কয়েক ঘন্টা পরেই পূজা টেক্সট ব্যাক করে বলে "কথাটা সত্যি শুনলাম ভাই, তবে একটু দেখে, তোর ওই শঙ্খকে আমার একদম বিশ্বাস হয়না।" রিখিয়া আর কিছু না বলে পড়াশোনায় মন দেয়, কারন পূজার খবর কখনো ভুল হয় না। আর সে ভাবে দুদিন পর শঙ্খর সাথে দেখা হলেই এই ব্যাপারে কথা বলবে।
দুদিন পরেই ৯ই মে, ক্লাবে রবীন্দ্র জয়ন্তীর প্রোগ্রাম থাকায় সেখানে শঙ্খ, রিখিয়া দুজনেই গেছিল। রিখিয়া শঙ্খকে খুঁজছিল চারদিকে, হঠাৎ মাথায় একটা টোকা পড়ে। ঘুরে দেখতে পায় শঙ্খ এক গাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে। রিখিয়াকে ও বলে "আমি জানি তুই বিশ্বাস করিসনি। তোদের মেয়েদের না কিছুতেই বোঝানো যায় না।" রিখিয়া বলে "থাক অনেক হয়েছে। আগে বল ঘটনাটা।" শঙ্খ তখন রিখিয়ার সামনেই সাগরকে ফোন করে। এটা দেখে রিখিয়া বলে "এই তুই কি করছিস? ওকে ফোন করছিস কেন? আমি কথা বলবো না কিন্তু।" শঙ্খ বলে, "চাপ নেই বস্, দেখ না কি করি।" সাগর ফোন তুলে "হ্যালো" বলার সাথে সাথেই রিখিয়ার মুখ শুকিয়ে যায়। শঙ্খ ওকে ফোনেই বলে, "একটু হোয়াটসঅ্যাপে আয়"। তারপর রিখিয়াকে খুলে দেখায় সাগরের চ্যাটটা। রিখিয়া দেখে সাগর অনলাইন এলো। শঙ্খ ওকে লিখলো " তুই রিখিয়াকে লাইক করিস?" সাগর রিপ্লাই দেয় "yeah"। এটা দেখিয়ে শঙ্খ বলে, "হল বিশ্বাস? উফফ পারা যায় না তোকে নিয়ে। যা বাড়ি যা।"
এর এক বছর কেটে গেছে। এই ঘটনার পর সাগরও রিখিয়ার সাথে কখনো সামনা সামনি কথা বলেনি আর রিখিয়াও তাই। তাই স্বাভাবিক ভাবেই শঙ্খর কথাটা ও বিশ্বাস করেনি। আজও ৯ই মে, সাগরের স্টেটাস দেখে রিখিয়া সমস্ত ঘটনার প্রতিফলন পায়। এতো কিছুর মাঝে ও সাগরের স্টেটাসটা ওপেন করতেই ভুলে গেছে। সেটা ওপেন করে দেখে একটা বাচ্চা ছেলের ছবি, স্কুল ড্রেস পড়া। ক্যাপশনে লেখা "Old memories"। রিখিয়া বুঝতে পারে এটা সাগরের ছটোবেলার ছবি, তাই রিপ্লাই দেয় " খুব cute লাগছে তোকে।" কিন্তু তারপরেই মনে হয়, এভাবে বলাটা কি ঠিক হবে? ও যদি কিছু ভেবে নেয়! আবার মনে হয়, নাহ পাঠিয়েই দিই। শেষ-মেশ খুব সাহস করে ও রিপ্লাইটা সেন্ড করল। দেখলো সাথে সাথেই সাগর লিখছে "Thank you। প্রথম মেসেজটা করা হল তাহলে।" রিখিয়া এই মেসেজ দেখেই এক গাল হেসে ফেলে। তারপর রিপ্লাই দেয় "কাউকে তো করতেই হবে।"
সাগর বলে "সেটাই সেটাই। তা কি করছিস এখন শুনি? ক্লাস তো শেষ।"
রিখিয়া লেখে, "তেমন কিছু নয়, just পুরোনো কথা ভাবছিলাম।"
সাগর- "কি পুরোনো কথা শুনতে পারি?"
রিখিয়া- "এক বছর আগে আজকের দিনের কথা। শঙ্খর তোকে ফোন করার কথা, আমাকে like করিস কিনা সেই কথা.... "
সাগর- "তুই জানিস সব? কিকরে? শঙ্খ সব বলেছে তোকে? দাঁড়া ওর হচ্ছে।"
রিখিয়া- "আমার সামনেই ও তোকে টেক্সট করেছিল সেদিন"। তারপরেই কয়েকটা দমফাটা হাসির ইমোজি দেয়। এই প্রথম রিখিয়া ইমোজি পাঠায় সাগরকে।
এটা দেখে সাগর বলে "ইসস, লজ্জা পেলাম আমি। তুই পাচ্ছিস নাকি?" তারপরেই আসে হাসি মুখে এক চোখ দিয়ে জল পড়ার ইমোজি। এটা দেখে রিখিয়া লেখে, "আপাতত না৷ তোকে যতটা ভেবেছিলাম, তুই তার থেকেও অনেক বেশি ফ্রেন্ডলি, তাই লজ্জা পাচ্ছি না।"
সাগর একটু থেমে তারপর আবার মেসেজ করে, "তাহলে যেটা এক বছর আগে বলতে পারিনি, সেটা এখন বলে দিই?"
রিখিয়া কিছু ভাবার আগেই সাগর ওকে আবার টেক্সট করে, "I love you....Can I be with you forever?"
রিখিয়া রিপ্লাই দেয়, "Love you too. Be with me forever." তারপর লেখে "But, একটু গন্ডগোল হয়ে গেল।"
সাগর বলে, "কি? কিসের গন্ডগল?"
রিখিয়া বলে "আজ তো রবীন্দ্রজয়ন্তী, আর আমাদের জন্য তাহলে Propose day?! "
সাগর- "হ্যা, আমাদের Propose Day। "
দুজনেই হাসির ইমোজি দেয়।
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantasyStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.
