অস্তগামী সময়

3 1 0
                                    

আজকে 30th ডিসেম্বর, 2023। বছরের আর মাত্র দুটো দিন বাকি। এই সময় অফিস ছুটি না থাকলেও স্কুল, কলেজ সব ছুটি থাকায় বাইরে বেরোলেই ছোটো ছোটো বাচ্চা, আর একটু বড়ো ছেলে মেয়েদের দেখা যায়। তাদের গুঞ্জনে চারিদিকে যেন একটা অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়ে যায়। ভালো লাগে বেশ। ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফিরে, বিকেলের এই হালকা রোদে একটু বাড়ির সামনের রাস্তাটায় হাঁটলেই মন ভালো হয়ে যায়। আজও ঠিক সেরকমই বেড়িয়েছি বিকেলে। হঠাৎ দেখি মা ফোন করছে। ফোন ধরে "হ্যালো" বলতেই মা বলল, "কাল তো ছুটি, সায়ন্তিকা! বাড়ি চলে আয় না। একসাথে কাটাবো এই দুটো দিন। দেখ তোর বাবাও খুব জোর করছে।" আমি তাই বললাম, "হ্যা যাবো তো। আর নতুন বছরের প্রথম দুটো দিন আমি ছুটি নিয়েছি। মানে তিনদিন ওখানেই থাকব। চিন্তা কোরো না, আমি কাল সকালেই বেড়িয়ে যাবো এখান থেকে।" মা বলল, "যাক! এবার একটু বাড়িটা প্রান ফিরে পাবে। তবে ব্যাগ গুছিয়ে নিস তাড়াতাড়ি। আমি অপেক্ষা করছি। আর একটু সকাল সকাল বেড়োস, যেন সকালের জল খাবারটা ঘরে এসে খাওয়া হয়।" মা কে বললাম, "আচ্ছা তাই করব। এখন তবে রাখি। রাত্রে কথা হবে।" মা ফোন রেখে দেওয়ার পর একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি একটা বাচ্চা মেয়ে রাস্তার এক পাশে বসে আছে একা একা। সে খেলছে না কারোর সাথেই, শুধু চুপ করে বসে সমস্তটা উপভোগ করছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম ওই রাস্তাটা হঠাৎ যেন কয়েকদিনেই বদলে গেল। আমি যখন এখানে চার বছর আগে এসেছিলাম, তখন দু-পাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া ছিল, আর তারও দু পাশে ছিল মাঠ। এখন তার একদিকে একটা বিল্ডিং হয়েছে। অন্যদিকটা অবশ্য ফাঁকা মাঠই রয়েছে। মেয়েটার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি খেলছো না কেন? একা একা বসে আছো যে।" সে বলল, "আমার ওদের সাথে খেলতে ভালো লাগে না। ওরা সব সময় ঝগড়া করে খেলতে খেলতে, তাই আমি একাই বসে আছি। একাই থাকি আমি।"আমি জিজ্ঞেস করলাম তাকে, "তোমার স্কুল কবে খুলবে?" সে বলল, "পরশুদিন। 2020 এর 1st January। "আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম, এটা তো 2019 নয় যে 2020 হবে, এটা তো 2023, মানে 2024 হবে পরশু। তারপরেই ভাবলাম, ধুর! বাচ্চা মানুষ, কি বলতে কি বলেছে। ওকে শুধু বললাম, "তাই? 2020? আচ্ছা।" ওঠার সময় হয়ে যাওয়ায় বললাম, "যাও এবার তুমি বাড়ি যাও। শিশির পড়ছে মাথায়।" সে বলল, "হুম।" হঠাৎ কি মনে হল, ওর নাম জিজ্ঞেস করে ফেললাম। সে বলল, "সায়ন্তিকা"।সময়ের সাথে লড়াই করতে করতে কখন যে এর মাঝে পড়ে পিশে মারা গেছি, বুঝতেই পারিনি। তাই নিজের অতীত টাকেও চিনতে পারলাম না। যদি পারতাম! তাহলে হয়ত আর ও কিছু কথা বলতাম। হয়ত বলতাম যে আরও অনেক লড়াই বাকি। বা হয়ত বলতাম এই সময়ের শ্রোতের সাথেই হারিয়ে যাওয়া সায়ন্তিকার ভবিষ্যৎ আমি। কিছু কথা বলা হল না আজও। আর হয়ত কোনোদিন বলা হবে না। নিজের চোখে দেখলাম অতীত, আর তার অস্তগামী সুর্যের সাথে ঝিমিয়ে পড়া। সায়ন্তিকা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হতে লাগল দূরের ওই পড়ন্ত বিকেলের রোদের সাথে।মনে পড়ল, ঠিক চার বছর আগে আমাকেও এমন ভাবেই এক দিদি এসে জিজ্ঞেস করেছিল এই সমস্ত কথা। তার সাথেও এই পড়ন্ত রোদের কমলা বিকেলে বসে আমি গল্প করেছিলাম। বুঝতেই পারিনি, সেই ভবিষ্যতের আমিই কখনো ফিরে আসব অতীতের কাছে। বা সেই অতীতের আমিই কখনো ফিরে আসব ভবিষ্যতের আমির কাছে।দু-পাশে চেয়ে দেখি, এখনো সেখানে কাঁটাতারের বেড়ার দু-পাশেই সেই পুরোনো ফাঁকা মাঠ। ঠিক চার বছর আগের মতোই।-শিল্পা প্রামানিক

~HAWAII~Where stories live. Discover now