আরাত্রিকা রয়, স্কুলে পড়ে, ক্লাস ইলেভেন। ছোটোবেলা থেকেই আরাত্রিকার খুব আগ্রহ অজাগতিক সব ব্যাপারে। তা সে Parallel Universe হোক, Time Machine হোক বা Astro Physics এর গভীরতায় বসবাসকারী কোনো এক শাখাই হোক। এমনই ঠিক একদিন স্কুলে Notice দেয় যে AI Timing Robotics নিয়ে একটা Seminar হবে। 13th November, Monday থেকে শুরু করে 15th November, Wednesday পর্যন্ত তিনদিন। সেখানে আলোচনা হবে আমাদের এই পৃথিবীরই এক জায়গা নিয়ে, যেখানে চলে সময়ের শূন্যস্থান। যেখানে কোনো হিসেব নেই সময়ের, আর সেই হিসেব বের করার জন্যই বিজ্ঞানীরা Robotics এর সাহায্য নিচ্ছে। তাই নিয়েই হবে পুরো সেমিনারটা।
আরাত্রিকার সারারাতের ঘুম উড়ে যায় এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে, এরকম কোনো জায়গা কি করে হতে পারে যেখানে সময় শূন্য। মনে মনে সে প্রথম ক্লাসের পরেই ভাবে নতুন কিছু। উঠে বসে পড়ে কাগজ কলম নিয়ে হিসেব কষতে, ঘুম ছেড়ে দিয়ে। সারারাতের অক্লান্ত ভাবনায় উদ্ধার করা তথ্য যে তার কতটা কাজে আসবে জানেনা সে, কিন্তু নতুনের সন্ধানে সবই গ্রহনযোগ্য। সমস্ত রকম হিসেব নিকেশ সেরে ফেলার পর আরাত্রিকার মনে হয়, সে কিছু সুরাহা করে ফেলেছে হয়ত।
তিন দিনের সেমিনারের দ্বিতীয় দিন এবং তৃতীয় দিন ক্লাসের পর ছাত্র-ছাত্রী দের হাতে যে সময় দেওয়া হল প্রশ্ন করার, সেখানে আরাত্রিকা তার অগুনতি নথির একটি তুলে প্রশ্ন করে,
"যে জায়গায় সময় শূন্যস্থানে চলে, সেখানে Robotics এর ব্যবহার বৃথা, কারন ঘড়ি ও এক Machine, আর Robot ও তার ব্যতিক্রম নয়। এক যন্ত্র হয়ে যদি সেখানে ঘড়ি না চলে, কোনোভাবেই AI ও চলবে না। তাহলে AI এর ব্যবহার কি?"
উপস্থিত থাকা এক বিজ্ঞানী পালটা প্রশ্ন করে বলেন, "তুমি প্রমান করো, কেন সেখানে সময় শূন্যস্থানে চলে? প্রমান ছাড়া বিজ্ঞান চলে না।"
আরাত্রিকা উত্তর দেয়, "অভিকর্ষ বল আর মহাকর্ষ বল যেখানে শূন্য, সেখানে সময় ও শুন্য। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় প্রাকৃতিক ভাবে। তবে কৃত্রিম ভাবে সেরকম এক জায়গা আমরা বানাতেই পারি, তাই যে জায়গাটির কথা বলা হচ্ছে সেটি ইচ্ছাকৃত ভাবে তৈরী করা এক স্থান।"
আরাত্রিকার উত্তর শোনার পর কেউই আর প্রশ্ন তোলে না কোনো। সে তার বক্তব্যে কঠোর ও যুক্তিবাদি তার নথিসহ। স্কুলের সেমিনার শেষ হয় সুষ্ঠুভাবে।
আরাত্রিকা ঘরে ফিরে আসে, রাত্রে বাবা মা এর সাথে খেতে বসে আরাত্রিকা সমস্ত ঘটনা তাদের জানায়, আর তারা ভীষণ খুশি হন। আরাত্রিকা ও গর্বিত হয় নিজের কাজের জন্য।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় যাওয়ার কিছুক্ষন পর এক অদ্ভুত জিনিস অনুভব হয় তার। খুব গরম লাগতে থাকে, ঘেমে যায় সে, হাত-পা যেন টান ধরে যাচ্ছে, স্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে কেউ যেন তাকে চেপে ধরে রেখেছে রুদ্ধস্বাসে। হঠাৎ বিছানা ছেড়ে উঠে বসে আরাত্রিকা, বালিশের পাশে রাখা জলের বোতলের অর্ধেক শেষ করে সে ঘড়ির দিকে তাকায়, কিন্তু ঘড়ি বন্ধ। Power Cut এর কারনে তার ঘরের Digital Clock বন্ধ হয়ে গেছে। এই একই কারনেই তার এতক্ষন ঘুমের মধ্যে কষ্ট হচ্ছিল, এটা ভেবে স্বস্তি পায় আরাত্রিকা, কোনো এক অজানা ভয় থেকে। ফোন খুলে দেখে ভোর চারটে বাজে। কিন্তু এরপর যা দেখে মতিভ্রম হয় তার, তা হল Date। - 13th November / Monday। কূল কিনারা করতে পারেনা আরাত্রিকা যে সে কিকরে তিনদিন পিছিয়ে গেল সময়ের। সেমিনারের শেষ দিনে কিকরে 15th এর জায়গায় 13th দেখায়! সময়ের শূন্যস্থান নিয়ে গবেষণা করতে করতে তার সাথে কি হল এটা? সে হাতড়ে হাতড়ে জোড়ালো অন্ধকারের মধ্যেই খুজতে চেষ্টা করে তার হিসেব করে রাখার সমস্ত কাগজপত্র। কিন্তু তার অগুনতি নথির একটিও খুজে পায় না সে। ঘরের সমস্ত কোণ হাতড়ে হাতড়ে অগোছালো ঘরের বিছানার এক কোনে বসে পড়ে আরাত্রিকা তার মনের সাথে লড়াই করতে করতে। কিন্তু তখনই হঠাৎ শুনতে পায় তার মা এর গলা, "কিরে আজ তোর স্কুলে সেমিনার আছে না? তাড়াতাড়ি ওঠ দেখি, তৈরী হতে হবে তো।" আবার ফোন খুলে সে দেখে সকাল ৬ টা বাজছে, তারিখ অপরিবর্তিত।
ভিতর থেকে কেউ যেন চাপা বাষ্পীভূত গলায় তাকে বলে, "তুই স্বপ্ন দেখছিলি আরাত্রিকা, এবার জাগতে হবে। এতদিনের কোনো কিছুই যে সত্যি নয়।"
এক অজাগতিক ভাবনায় পূর্ন হয়ে যায় তার মন। হয়ত এইজন্যই এখনো Time Machine আবিস্কার করা হয়নি কারোর। সময়ের সন্ধানে হারিয়ে ফেলা মানুষের মনকে বাস্তবের দুনিয়ায় আনা অসম্ভব, যেখানে শুধুই সবাই প্রমান চায়, আরাত্রিকার স্বপ্নের সেই বিজ্ঞানীর মতো।
বাস্তবের দুনিয়ায় মানুষের ভাবনার আর অনুভূতির কোনো দাম নেই, এখানে কয়েকটা সমীকরণ নিয়ে গবেষণা করাই সবকিছু, কিন্তু মানুষের ভাবনা কে কি কোনো সমীকরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব? উত্তর নেই এর, শুধুই প্রশ্ন আছে, "প্রমান করতে পারবে?" আর আছে "প্রমান ছাড়া বিজ্ঞান চলে না।"
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantastikStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.