"তাড়াতাড়ি তৈরী হও মা, আমাদের বেড়োতে হবে" বলে টেবিল থেকে কয়েকটা পোষ্টার তুলে নিলাম। পাশের ঘর থেকে ছোটো বোন এসে জিজ্ঞেস করল, "কোথায় যাবে তোমরা?" তারপর পোষ্টার গুলোর দিকে হাত দেখিয়ে বলল, "এগুলো কিসের জন্য?"। আমি বললাম, "আমরা প্রতিবাদে বেড়োচ্ছি এগুলো নিয়ে।" ও জিজ্ঞেস করল, "কিসের প্রতিবাদ?" আমি মুখ খোলার সাথে সাথেই মা বলল, "থাক না, ওকে এসব বলিস না। বাচ্চা মানুষ।" আমার কেমন ভিতরের আগুনটা জ্বলে উঠল। মা এর দিকে তাকিয়ে বললাম, "বাচ্চাকে ছোটোবেলা থেকেই শেখানো উচিত মা, যে আমরা অমানুষদের সাথে বাস করি এই সমাজে।" বোন বলল, "কে অমানুষ? কি করেছে ওরা?" মা ওকে বকা দিয়ে বলল, "যাও তুমি ঘরে যাও। এসব শুনতে হয় না ছোটোদের।"আমার সাত বছরের বোন ও মা এর ভয় এ ঘরে চলে গেল। আমি মা কে জিজ্ঞেস করলাম, "কয়েক বছর পর ওর সাথেও এরকম কিছু হলে তুমি এইভাবেই ওকে ঘরে পাঠিয়ে দেবে?" মা কেমন থমকে গেল আমার কথাগুলো শোনার পর। আমি বোনকে ঘর থেকে নিয়ে এসে বললাম, "চল তুমিও যাবে প্রতিবাদে আমাদের সাথে।" বোন কেমন অবাক হয়ে বলল, "আমিও যেতে চাই। কিন্তু কিসের প্রতিবাদ?" আমি ওকে বললাম, "খুনের প্রতিবাদ।" -"খুন? গুলি করে খুন? যেমন সিনেমায় দেখায়?"
-"নাহ, গুলি করে খুন করলে হয়ত প্রতিবাদে যেতে হত না। এটা নৃশংস ভাবে খুন।"
-"মানে?কেমন ভাবে?"আবার আমার কথা বলার আগেই মা বলল, "ওকে নিয়ে যাচ্ছিস ঠিক আছে, কিন্তু এসব ওর মাথায় ঢোকানো ঠিক নয়।" আমি কোনো কথা না শুনে ওর হাতে একটা পোষ্টার দিয়ে বললাম, "তাকে মারার আগে তার শরীরের সমস্ত হাড় ভেঙে টুকরো টুকরো করা হয়েছে, তার গলা টিপে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে, যার জন্য তার চোখ দিয়ে জল বেড়োইনি, বেড়িয়েছে রক্ত। আর তারপর তার মৃতদেহের সাথে.... "চোখের জল আটকে রাখতে পারলাম না আর। বোন আমার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল, "দিদি তুমিই তো বল যে প্রতিবাদের সময় চোখের জল ফেলতে নেই, কেদো না। তারপর কি হয়েছে তার সাথে?"
আমি ভেজা চোখ নিয়ে ধরা গলায় বললাম "রেপ"।মা কেমন রেগে গিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল আমাদের না নিয়েই। বোন আর আমি ঘরে বসে রইলাম। বোন খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল "রেপ মানে?" আমি বললাম, "তুমি বড়ো হওয়ার সাথে সাথে তোমার শরীরের যে অঙ্গ গুলোও বড়ো হবে, পরিনত হবে, সেই অঙ্গ গুলোর উপর অত্যাচারকে বলা হয় রেপ। এরপর তুমি দেখবে বাসে, ট্রেনে, ভিড়ে কোনো বাবার বয়সি লোক এসে তোমার সেই অঙ্গ গুলোকে বাজে ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করবে। ওদের লোভ আমাদের পরিনত শরীরের উপর। এটা তারই প্রতিবাদ, আর যাকে এইভাবে খুন করে ফেলা হয়েছে, তার হয়ে প্রতিবাদ।" বোন কেমন একটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে। আমি বুঝলাম ওর মনে এতো কিছু নেওয়ার ক্ষমতা হয়নি এখনো। তাই জিজ্ঞেস করলাম, "খারাপ লাগছে এগুলো শুনতে?"ও আমার চোখে চোখ রেখে বলল, "রাগ হচ্ছে"।আমি বুঝলাম আমার সাত বছরের বোনটাও "বড়ো" হয়ে গেল এক নিমেষে।
অন্য কোনো সময়ে হয়ত একটা গল্প লিখতাম, কিন্তু আজ কোনো গল্প নেই লেখার মতো। শুধু আছে কিছু কথা।আজকেও ঠিক ৭৮ বছর আগের মতো একবার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে "সুভাষ তুমি কোথায়? তোমায় আমাদের ভীষন প্রয়োজন।" কিন্তু আমাদের চিৎকার শোনার মতো আজ কোনো সুভাষ নেই। আছে শুধু কিছু অমানুষ। আজ কেমন লজ্জাবোধ হচ্ছে নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দিতে। সুভাষ বলেছিলেন রক্তের কথা, যার বদলে তিনি স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু সেই সব মানুষের রক্তই যে আজ স্বাধীনতার এত বছর পর মৌমিতার চোখ দিয়ে ঝরবে, তা কেউ জানত না। আমার ভাবনাকে ভেদ করে দিল একটা কন্ঠ স্বর। কেউ বলছে, "Am I next?" তাকিয়ে দেখতে পেলাম আমার সাত বছরের বড়ো হয়ে যাওয়া বোনকে।
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantasíaStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.