মতবিরোধ

2 2 0
                                    

আরিয়ান আর আরাত্রিকা, দুজনে College এ একই বর্ষের ছাত্র ছাত্রী। প্রেমটা ঠিক কিকরে শুরু হয়, জানা নেই কারোরই। তবে আরিয়ান বারবার লক্ষ্য করেছে যে আরাত্রিকার ভাবনা গুলো কোনো সাধারন মানুষের মতো নয়। একটু অস্বাভাবিক লাগলেও এটাই সত্যি। ওই ভাবনার জন্য সে বাকিদের থেকে বেশ অনেকটা আলাদা, যার জন্য তার সেরকম কোনো বন্ধু ও নেই, কারন কারোর সাথেই তার মানসিকতা মেলে না। মূলত একা class এ বসে থাকা চুপচাপ মেয়েটার দিকে একটু আকর্ষিত হয়েই আরিয়ান গেছিল বন্ধুত্ব করতে, সেই বন্ধুত্ব আজ প্রেম। আরিয়ান জানে যে আরাত্রিকার এই অস্বাভাবিক ভাবনার জন্য সে মাঝে মাঝে খুবই ভয়নক হয়ে ওঠে, কিন্তু এই ভয়টাই কোথাও একটা আরিয়ানকে তার দিকে টানে।

রাস্তায় হাটতে হাটতে আরিয়ান দেখে আরাত্রিকা একটা প্রজাপতির দিকে ঠায় তাকিয়ে। সে উড়তে না পারা এক পঙ্গু প্রজাপতি, একটা ডানা টিকটিকি টেনে ধরে রয়েছে আর সে মরনাপন্য। সে আরাত্রিকা কে বলে "এত মন দিয়ে টিকটিকির খাওয়া দেখছিস?" কথা শেষ হওয়ার আগেই কাঁটা ঢুকে যায় টিকটিকির শরীরে। আরাত্রিকা চুলের কাঁটা বের করে টিকটিকিকে মেরে ফেলে। আরিয়ান বলে "এটা কি করলি?" সে জবাব দেয়, "প্রজাপতি টাকে বাঁচালাম, ওকে আমি মারবো" বলেই অট্টহাসি হাসতে হাসতে প্রজাপতির ডানা দুটো কাগজের মতো ছিড়ে ফেলে আরিয়ান এর মুখের দিকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয়।" আরিয়ান একটু সংকোচে বলে "ইসস কিসব করছিস, কতবার বলেছি না এইসবের গায়ে হাত দিবি না?" আরাত্রিকা হেসে বলে "কেন? কি হবে?" আরিয়ান বলে "উফফ অতো আমি জানিনা, কিন্তু তুই হাত দিবি না।" তার ভিতরে এটা নিয়ে একটা ভয় সৃষ্টি হয়েছে। ওর বিশ্বাস আরাত্রিকা এমন কিছু করে ফেলবে যেটা কারোর জন্যই সুখকর হবে না, তাই বাইরে এলে চেষ্টা করে ওকে আগলে আগলে রাখতে।

একটু চুপ করে হাটার পর আরিয়ান জিজ্ঞেস করে "মেয়েদের তো ফুল খুব পছন্দ, তোর ভাল লাগেনা ফুল?" সে বলে "... নাহ একদমই না। ফুল খুব সুন্দর, তাই সবাই তুলে নেয়।"

-"তাহলে তোর কি পছন্দ?"

-"আমার? আমার তো শুওপোকা পছন্দ, কেউ হাত দেয় না তাতে।"

আরিয়ান বলে "ধুসস তোর ভাবনা গুলো এরকম কেন বলতো?"

আরাত্রিকা যেন খুব গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে বলে "কি জানি! আমার খুব কষ্ট হয় যে এইজন্যই আমার কোনো বন্ধু নেই। আমি একদমই পারি না বাকিদের মতো চিন্তা করতে, সেই তুই একজন যে একটু বুঝিস আমায়। আমি পড়েছি একটা জিনিস....যারা এরকম মানুষ হয়, তারা পরে Serial Killer হয়ে যায়। আর সেটা শুরু হয় কোনও এক কাছের মানুষের থেকেই, যখন তাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হয়। কিছুটা এরকম যে আমি নিজেকে বেশি ভালো চিনি, সে আমায় যতটা চেনে তার চেয়ে। কিন্তু সেই মানুষের মনে হয় 'না না তুমি এরকম হতেই পারো না'। "

সবটা শুনে আরিয়ান হেসে ফেলে বলে "তা তোরও কি Serial Killer হওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি? ভাই ওসব গল্প মাত্র, তুই পারবিনা কখনো ওরকম হতে।"

আরাত্রিকা ওর হাসিতে বেশ বিরক্ত হয়েই জবাব দেয়, "মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে কিন্তু.... আমার তাদের খুব ভালোও লাগে যাদের সাথে মতের মিল হয়না। একটা অন্য চিন্তাধারার মানুষ সে। যে আমার থেকে আলাদা, এটা রহস্যময় নয় কি? যে জিনিস গুলো আমি খুব ভালোবাসি, সেগুলো হয়ত তার দুঃস্বপ্ন আর যেগুলো সে ভালোবাসে..."

- "সেগুলো তোর দুঃস্বপ্ন, তাইতো?" বলেই আরিয়ান তাকে থামিয়ে দেয়। এটা শুনে আরাত্রিকা বলে, "না, সেগুলো আমার কাছে ছেলেখেলা।"

-"মানে?" প্রশ্ন করে সে,

"মানে কিছুই নয়, এটাই হচ্ছে আমাদের ভাবনার পার্থক্য...." উত্তর দেয় আরাত্রিকা।

আরিয়ান বলে "এই যে আমাদের মত মিলল না, এবার তুই কি ভাবছিস?"

আরাত্রিকা বলে, "আমি তো আগেই বললাম, তাদের খুব ভালো লাগে আমার, যাদের ভাবনা আমার চেয়ে আলাদা.... আর তাদের দুঃস্বপ্ন আমার......"

আরিয়ান বাকিটা বলে দেয়, "ছেলে খেলা..." আরাত্রিকা বলে "এবার বল কোনটা তোর দুঃস্বপ্ন এই মুহুর্তে?" আরিয়ান বলে, "তুই আমায় হঠাৎ মেরে ফেলতে পারিস.... এটাই।" আরাত্রিকা হাসতে হাসতে বলে "তোর মনে হয় আমি ওটা করব?" আরিয়ান বলে, "একদমই না, তুই ওরকম করতেই পারিস না", সে দেখে আরাত্রিকা হঠাৎ ওর চুলের কাঁটা মাথা থেকে খুলে নিয়ে আরিয়ান এর গলার কাছে ধরে আস্তে আস্তে ঘোরাতে থাকে। আরিয়ান থমকে গিয়ে বলে, " তু-তুই কি করছিস? ঠিক আছিস? এই আরাত্রিকা? ঠিক আছিস তুই?" সে ভারী গলায় বলে, "আমি ওরকম করতেই পারিনা, ওর চেয়ে ভয়ানক কিছু করতে পারি আরিয়ান" বলেই তার গলা থেকে হাত সরিয়ে নিজের গলায় ধরে সোজা টেনে দেয় এক নিমেষে..... ঝরতে থাকে রক্ত সেই স্লিটের মতো কাটা গলা থেকে, মাটিতে লুটিয়ে যায় আরাত্রিকার নিথর দেহ।

আরিয়ান জানতো সে আলাদা সবার চেয়ে, কিন্তু তাদের একটা মতবিরোধ যে এতটা ভয়ানক হতে পারে, ধারনা করতে পারেনি সে।।

~HAWAII~Where stories live. Discover now